সুফিবাদের প্রেমে দিওয়ানা হয়ে বাঙালির ইসলাম গ্রহণ :

সুফিবাদের প্রেমে দিওয়ানা হয়ে বাঙালির ইসলাম গ্রহণ :
----------------------------------------------------------------------
সিলেটের বিখ্যাত শাহ্ জালাল বিশ্ববিদ্যালয় । শাহ‌্ জালালের জন্মস্থান সম্পর্কে স্বচ্ছ কোন ধারনা পাওয়া যায় না । কোন কোন ইতিহাসবিদদের মতে উনি ১২৭১ সালে তার্কির কৌনাতে জন্ম গ্রহণ করেন, পরে তিনি ইয়ামেন গমন করেন । আবার কারো কারো মতে তিনি ইয়ামেনেই জন্ম গ্রহণ করেন । উনার বাবা জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ রুমির সম সাময়িক ব্যক্তিত্ব ছিলেন । জন্মের পর তার নাম রাখা হয় জালাল উদ্দীন বিন মুহাম্মদ । অবশ্য পরে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান শায়েক উল মাশায়েক হযরত শাহ‌্ জালাল মুজাররেদ নামে । শিক্ষা দীক্ষা, ধন সম্পদ, উর্বর জমি, জীবন যাপনের মান সব দিক বিবেচনা করলে ভারতবর্ষের খ্যাতি ছিল সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য
জুড়ে । আরবের নিয়মিত যুদ্ধরত, কঠিন, বেপড়োয়া যাযাবর জীবন, গোত্রে গোত্রে ঝগ্রালু জীবনের চেয়ে ভারতবর্ষের শান্ত, স্নিগ্ধ, সবুজ, সুশীতল জীবন মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের কাছে ছিল স্বপ্ন রাজ্য । উন্নত ও নিরাপদ জীবন যাপন এবং অন্ন সংস্থানের লোভেই তারা এসে ভীড় করত ভারতবর্ষে ।

দেশান্তরি এই সব আরবের লোকেরা ছিল খুবি দরিদ্র শ্রেনীর। সমস্যা সমাধানে দুটো সহজ রাস্তা তারা খুজে পেয়েছিল (১) রাজ্য দখল করা (২)বিনা পয়সায় ধর্ম ব্যবসা করা । তবে ধর্ম ব্যবসার পূর্ব শর্ত রাজ্য দখল ও শাসন ক্ষমতা্র আনুকুল্য । আরবের মুসলমানদের পক্ষে ভারত বর্ষ দখল করে নিতে খুব একটা বেশী বেগ পেতে
হয়নি । হিন্দু রাজাদের আয়েশী জীবন যাপন, অরক্ষিত রাজ্য সীমান্ত, যুদ্ধ বিদ্যায় অপারদর্শীতার জন্য, মার দাঙ্গা ও পর রাজ্য দখলে সিদ্ধ হস্ত আরবের মুসলমানদের ভারতবর্ষের দখল নিতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি ! রাজ ক্ষমতার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় তথাকথিত ইসলামী পীর দরবেশদের ধর্ম প্রচারের আড়ালে নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের দুয়ার সম্পূর্ন খুলে যায় । হিন্দু জাতি ভেদ প্রথা, কুসংষ্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ নিম্ন বর্ণের নির্যাতিত অশিক্ষিত হিন্দু ও হিন্দুদের নিকট অবহেলিত বৌদ্ধদের কাছে ইসলাম ধর্মের বীরত্ব, সাম্যবাদ ও পরকালের লোভ সম্বলিত নতুন মতবাদ প্রচার করে তাদের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে সহজেই এক এক জন বড় বড় পীর রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় । মারা যাওয়ার পরে তাদের অবস্থান হয়েছে আরো শক্তিশালী । অসংখ্য কবরকে মাজারে রূপান্তর করে রম রমা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অনুসারী আরেক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসয়ীরা বাংলাদেশ সহ ভারত বর্ষের বিভিন্ন জেলায় ।

শাহ্ জালাল বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে অবশেষে স্বপ্ন রাজ্য ভারতে আসেন ১৩০০ খ্রীষ্টাব্দে । এর পর চলে যান আজমীরে সেখানে পেলেন ইসলাম প্রচারক পীর খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনউদ্দীন হাসান চিস্তিকে । পরে যান দিল্লী সেখানে সংস্পর্শে আসেন আরেক ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইসলাম প্রচারক নিজামউদ্দীন আউলিয়ার সাথে । তাদের ইসলাম প্রচারের মহীমা, কলা কৌশল এবং তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি শাহ জালালকে বিশেষ প্রভাবিত করে । সিলেট শাসন করতেন হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দ । রাজ্যে বাস করতেন সৈয়দ বুরহানউদ্দীন নামের এক মুসলমান । পুত্র সন্তান লাভের খুশিতে গরু জবাই করে ভুরি ভোজের আয়োজনে ব্যস্ত, ঠিক সে সময় এক ক্ষুদার্ত বেরসিক চিল এক টুকরা গরুর মাংস চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঠোঁট ফসকে এক টুকরো পরে যায় এক ব্রাহ্মনের ঘরে, আবার অন্য এক মতে মাংসের টুকরাটা গিয়ে সোজা পরে গৌড় গোবিন্দের মন্দিরে । ধর্মীয় অপমানে রাজা অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে আদেশ দিলেন যখানেই পাও বুরহানউদ্দীন কে ধরে তার হাত দুটি কেটে ফেলো আর তার পুত্র সন্তান কে হত্যা করো । বুরহানউদ্দীন পালিয়ে বিচার চাইল গৌড়ের সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহর কাছে । সুলতান এই কথা শুনে তার ভাগ্নে সিকান্দার খান গাজীর নেতৃতে একদল সৈন্য বাহিনী পাঠালেন গৌড় গোবিন্দকে শাস্তি দিতে । বিনা উস্কানিতে বিধর্মী হিন্দু রাজাকে বিতারিত করে সিলেটে মুসলমানের বিজয় পতাকা ওড়ানোটাই ছিল ফিরোজ শাহর মুখ্য উদ্দেশ্য ! প্রথম বার যুদ্ধে সিকান্দার খান গোবিন্দের কাছে হেরে যায় । এই পরাজয় সুলতান ফি্রোজ শাহর পক্ষে সহজভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি । সে বুঝতে পারল গৌড় গোবিন্দের শক্তি কে খাটো করে দেখা তার মোটেই উচিত হয়নি, তাই পরবর্তী আক্রমনের জন্য বেশ আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামল । তার সেনাপতি নাসিরউদ্দীন কে আদেশ দিল পুনঃরায় গৌড় আক্রমনের জন্য তৈরী হতে । যুদ্ধ জয়ের চুড়ান্ত প্রস্তুতি হিসাবে সুলতান ফিরোজ শাহ্ ইসলামিক চিন্তাবিদ নিজামউদ্দীন কে আদেশ দিলো সিলেট যুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে । নিজামউদ্দীন অনুরোধ করলো শাহ‌্ জালাল কে । শাহ‌্ জালাল তার সাথে ইয়েমেন, তুর্কিস্তান, আলরুম, তুরফান, বুখারা, তিরমিজ সহ আরবের বিভিন্ন আঞ্চল থেকে আসা আরো ৩৬০ জন ভাগ্যন্বেষী যুবক কে সাথে নিয়ে ফিরোজ শাহর মুসলমান সৈন্য দলের সাথে যোগ দিলো হিন্দু রাজা গোবিন্দকে সিলেট থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে । এই ৩৬০ জনের মধ্য তার ভাগ্নে শাহ্‌ পরান ও ছিল ।

শাহ জালাল যদি সত্যি কোন পীর, দরবেশ, আওলিয়া বা এ জাতীয় নিরীহ শান্ত গোছের কেউ হতো তাহলে ধারালো তরবারি হাতে আরো ৩৬০ জন সৈন্য জোগাড় করে দখলদারীর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরতো না বরং বিনা রক্তপাতে কোন সমাধানে আসা যায় কিনা সুলতানকে সে পরামর্শ দিতে পারত । শাহ্‌ জালাল সম্পর্কে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস পাকা পোক্ত করতে ধর্ম ব্যাবসায়ীরা সুনিপুন ভাবে আরো কিছু ধর্মীয় রূপকথা জুড়ে দিল তার সিলেট দখলের পর । যেমন- গৌড় গোবিন্দ যখন জানতে পারল শাহ জালাল সিলেট আক্রমন করতে আসছে তখন সে সুরমা নদীর ঘাট থেকে সব নৌকা সরিয়ে ফেলে, যাতে শত্রু পক্ষ নদী পার হয়ে সিলেটে প্রবেশ করতে না পারে । শাহ্ জালাল ক্যারিশমা দেখানোর সুযোগ পেয়ে গেল । সে জায়নামা্যে চড়ে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে দিল মূহুর্তে যা তাঁর গুরু স্বয়ং নবিজীর পক্ষেও কোন দিন সম্ভব হয়নি ! নদীর অপর পাড়ে পৌঁছেই সে বিকট শব্দে আযান দিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ শুরু করল, তাতেই গৌড় গোবিন্দের প্রাসাদ ধসে ধসে পড়তে শুরু করল । এখন
আযানের শব্দে ধসে পরেছিলো না আক্রমনের তীব্রতায় ধসে পরেছিলো তা কেবল বুদ্ধিমান পাঠকই বুঝবে ! শুরু হল দখলদার বনাম অস্তিত্ব রক্ষার রক্তক্ষয়ি যুদ্ধ তাতে গৌড় গোবিন্দ পরাজিত হয়ে সিলেট ছেড়ে পালিয়ে গেল ।

সিলেট এলো মুসলমানদের দখলে । পক্ষান্তরে বলা চলে শাহ্ জালালের দখলেই, আর সেই সাথে পূর্ণ হল তার আজমীরের মঈনউদ্দীন হাসান চিস্তি বা দিল্লীর নিজামউদ্দীন আউলিয়ার মত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন । যুদ্ধ জয়ের পর সে তার ৩৬০ জন সহযোদ্ধাকে বিয়ে করে সংসারী হওয়ার নির্দেশ দেয় । তখনো ইসলামের প্রচার প্রসার সিলেটে তেমন শুরু হয়নি । তাই সেই মারকাটারি গনিমত ভোগী সহযোদ্ধারা কাদের কে কিভাবে বিয়ে করেছিল তা সহজেই অনুমেয় । একজন যদি একটা করেও বিয়ে করে তাহলে ৩৬০ জন হিন্দু/বৌদ্ধ মেয়ের গায়ে ইসলামী আঁচড়ের দাগ পড়েছিল নিঃসন্দেহে !!

এভাবেই সুফিবাদের প্রেমে দিওয়ানা হয়ে শ্রীহট্টের বাঙালি ইসলামে ধর্মান্তরিত হলো ।

ref: http://easyworldbd.blogspot.com/2011/09/normal-0-false-false-false_12.html

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted