ইতিহাসের কিছু চরম মিথ্যা।

“ইতিহাসের কিছু চরম মিথ্যা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

ঠিক যতোখানি আগ্রহ নিয়ে ইতিহাসের পাতা ঘাটি, ঠিক ততোখানি অবাক হই। কি মিথ্যা, কি মিথ্যা, কি মিথ্যা। আবার দেখি সত্য ইতিহাসের চেয়েও “উদ্দেশ্য প্রনোদিত ইতিহাস” রচনা কতোখানি। ছোট বেলা থেকে যে সব ইতিহাস পড়ে এসেছি, তার মধ্যে ‘মিথ্যার ঝুড়ি’ জানতে পেরে ভাবি, তাহলে আসল সত্য কি?????? 

সম্প্রতি কাল দিয়েই আজকের লেখা শুরু করি। 

১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কার জন্য হয়েছিলো? হ্যা, হিটলার ই শুরু করে। কিন্তু তার শেষ পরিনতি কি হয়েছিলো? আমরা জানি হিটলার এবং তার প্রনয়নী ‘ইভা ব্রাউন’ বাংকারে আত্ম্যহত্যা করে। আজ দেখছি, এটাই এক বড়ো মিথ্যা। যে ঘটনা আমাদের বলা হয়েছে, তার প্রায় ৭ দিন আগে, হিটলার এবং ইভা ব্রাউন বেশ কিছু সম্পদ নিয়ে উড়ে চলে যায় ‘আর্জেন্টিনায়’ এবং সেখানে তারা তাদের জীবনের বাকি দিন গুলো বেশ আরামেই কাটায়। এসব আমেরিকার সি আই এ জানতো এবং তাদের সক্রিয় মদত ছিলো। এই কথা লেখার পর অনেকেই বলবেন যে আমি পাগল, ছাগল এবং ভুল ভাল লিখি। 

২) স্ট্যালিন এক মহান নায়ক। অথচ সেই স্ট্যালিনের নির্দেশে  প্রায় ১০ লক্ষ রাশিয়ান সৈন্য যারা জার্মানীর কাছে আত্মসমর্পন করে, তাদের মেরে ফেলা হয় বা সাইবেরিয়াতে পাঠানো হয় ( গুলাগ আর্কি পেলোগো পড়ুন), দেশের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করার জন্য। এর মধ্যে স্ট্যালিনের নিজের ছেলে ও ছিলো। 

৩) নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু র কি হয়েছে??? না, তিনি তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বেশ, তা আজো প্রমানিত হলো না কেনো? কেনো, রেনকোজি মন্দিরে রাখা ছাই ভস্মর ডি এন এ টেষ্ট করা হচ্ছে না?? তাহলেই তো বোঝা যাবে ওই ছাই ভষ্ম নেতাজির না অন্য কিছু। তিনি রাশিয়ায় চলে যান। ভালো, তা স্ট্যালিন তাকে নিয়ে কি করেছে??? না সেই ইতিহাস চাপা রাখতে হবে, না হলে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নষ্ট হবে। ভালো, পড়ে থাকুন নেতাজী ওই রেনকোজি মন্দিরে। 

এবার চলুন একটু পিছিয়ে যাই। 
 
 যিশু কে বা ছিলেন কি না? কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে সেই প্রশ্ন তোলে??? আরো একজন ধর্মীয় নেতা বা এক বিশেষ ধর্ম প্রনেতা আদৌ ছিলেন কি না সেই প্রশ্ন আজ কেনো উঠছে?? আর থাকলেও তার আসল স্বরুপ টা কি? এই প্রশ্ন তুললে ‘হালাল’ হয়ে যাবো। অথচ ঊঠছে। একদিন হয়তো, এই সবের ‘সত্য ইতিহাস’ পাওয়া যাবে। আজ যে প্রশ্ন ঊঠছে ‘যিশু’ কে নিয়ে কারা সেই প্রশ তুলছেন এবং ঠিক কি বলছেন??? 

‘Pagan Jesus’, ‘It was the Romans who conspired to create Jesus”, ‘There was no Jesus’--- এসব কি পড়ছি??? কারা লিখছেন , না সেই সব পাদ্রীরা, যারা আজো ‘খ্রীষ্টান ধর্ম’ কে বুকে আকড়ে চলছেন। এখানে আমেরিকায় বসে সেই সব শুধু পড়ছি তাই নয়, ইউ টিউবে দেখছি। যা জানি আর যা এখন দেখছি, পড়ছি সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। 

অথচ, এই সেদিন “ Dead sea Scroll” নামে এক গুচ্ছ পান্ডুলিপি পাওয়া গেলো, ‘ডেড সি’----- মৃত সাগরের ( ইজরায়েলে) এক গুহায়, যা কিনা বলছে, “ রোম সম্রাট কনষ্টান্টাইনের সময়, তার নির্দ্দেশে, এক দল পন্ডিত তাদের ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায়’ এই যীশু খ্রীষ্টকে আবিষ্কার করেছে। 

আমরা জানি ‘রোম সম্রাট কনষ্টান্টাইন’ খ্রীষ্টান ধর্ম’ গ্রহন করেন। তার আগে রোমান রা যে ধর্ম মেনে চলতো তা মুলত আমাদের দেশের নানা দেব দেবীর উপাসনা, কিন্তু ভিন্ন নামে। তা কি ভাবে এই ‘খ্রীষ্টান ধর্মের’ প্রচলন হলো? যীশুকে নিয়ে এতো সব কাহিনী কি করে প্রচলিত হলো? 

কাহিনী বানাতে দরকার বেতন ভুক কিছু ‘ভালো পন্ডিত’ কে। তা ,তার তো কোনো অভাব কোনো কালেই ছিলো না, আজো নেই (রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব আছে কেনো?)। সম্রাট কনষ্টান্টাইনের সময় ( যীশ খ্রীষ্টের সময় থেকে প্রায় ৪০০ বছর পরে)  রোমান সাম্রাজ্যের চারিদিকে ‘অরাজকতা’ চলছে। কনষ্টান্টাইন বুঝলেন, তাকে এই সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে ‘চাই একটি নতুন ধর্ম’ যা তার প্রজাদের এক সুত্রে গেথে রাখবে। তৈরী হলো, ‘ওল্ড টেষ্টামেন্ট’ আর সেখান থেকে ‘নিউ টেষ্টামেন্ট’। খুজে পাওয়া গেলো মান্ধাতার আমলের কিছু গল্প, আব্রাহাম, নোয়া, প্লাবন, জিহোবা, জন দা ব্যাপ্টিষ্ট, যীশু নামে ( আসল নাম খ্রীষ্টো)। আর যায় কোথায়, খাড়া হয়ে গেলো এক নতুন ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, যীশুকে কেন্দ্র করে। সেই একই ধারায় পরবর্তিতে, সেই আব্রাহাম কে ইব্রাহিম বানিয়ে, তার পুত্র ‘ইসমেল’ কে ‘ইসমাইল’ বানিয়ে ও শুরু হলো আর এক ধর্ম, প্রায় ২০০ বছর পরে। 

‘গল্পের গরু গাছে ওঠে’ এটাই চরম সত্য, বাকি সব মিথ্যা। 

এমনি ভাবেই, রক্ত পিপাসু ‘ খোড়া তৈমুর’ হয়ে যায় সমরখন্দের জাতীয় নেতা। এমনকি আমাদের দেশেও তার নামে ছেলের নাম হয়। আরবী, তুর্কি, আফগান বর্বরেরা, খিলজী, দুরানী, ঘোরী, বাবুর এই সব দস্যুরা হয়ে যায় সম্রাট। ‘দূর দূর গ্রামের শিশুরা ‘ প্রাচীন গব্বরের নাম শোনে আর ভাবে “ কি মহান ছিলো” আমাদের এই ধর্ম গুরু, এই সম্রাট। মানুষের রক্তে পৃথিবী মাটি ভিজিয়ে কেউ হয় ‘রোমান সম্রাট’, পারস্য সম্রাট, আলেকজান্ডার দি গ্রেট, পত্তন করে ‘সুলতানী বংশ’, মোঘল বংশ”। আর যারা সেই ‘অনৈতিক ধর্মের ব্যাবসায়ী দের লালষার শিকার হলো, নিজের জীবন দিয়ে চেষ্টা করলো তাদের দেশ, মা, স্ত্রী, বোন, মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে, তারা সেই রাজা পুরু, রাজা দাহির, রাজা জয়াপালা, রাজা পৃথ্বীরাজ চলে যান ‘অজানার গহন খাদে”। 

যাদের আমরা জানি, এর একটাও, সঠিক মানুষ নয়। সব মিথ্যার ঝুড়ি। আসল ইতিহাস, আসল মানুষ চাপা পড়ে যায়, তৈরী হয় ‘দানব থেকে দেবতা’ , দস্যু থেকে ধর্মীয় নেতা।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted