হিন্দুদের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া এক ‘মহামিথ্যা’
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
হিন্দুদের ওপরে বেশ বিশেষ পরিকল্পনা করে এক ‘মহা মিথ্যার বেসাতি’ চলছে আজ অনেক শতাব্দী ধরে। কি সেই মিথ্যার বেসাতি? কি সেই সম্পুর্ন মিথ্যা ইতিহাস? সেটা হলো “ আমাদের ,অর্থ্যাত এই ভারত বাসী, ভুমিপুত্র হিন্দুরা এক বহিরাগত যাযাবর আক্রমনকারী দের বংশ ধর। অর্থ্যাত, এই ভারতে অনেক আগে থেকেই বাইরের লোক জন এসে গেড়ে বসেছে। সর্বশেষ হচ্ছে ব্রিটিশ। কিন্তু আজ তারা চলে গেছে।
কারা যায় নি? ১০০০ বছর আগে যারা আরব এবং আফগানিস্তান থেকে এসে জাকিয়ে বসেছে। আর ঐ সেই “অর্য্যরা” , ভোলগা নদীর তীর থেকে এসে এই দেশের সব আদি বাসিন্দা দের মেরে কেটে শেষ করে এক বাইরের ধর্ম , সংষ্কৃতি এমন কি ভাষা চাপিয়ে দিয়েছে , যার নাম সংষ্কৃত ভাষা। সুতরাং, আমরা যারা আরবের আরবীয় ধর্ম এবং ভাষা নিয়ে চলছি তারা সব ঠিক করেছি এবং করছি। আলবৎ ঠিক, ঠিক ছাড়া বেঠিক কিছু নেই। এই দেশে ‘আর্য্যদের বংশধরের যা অধিকার আমাদের ও সেই অধিকার’।
কারা এই ‘আর্য্যদের ভারত আক্রমন তত্ব’ তৈরী এবং প্রচার করেছে? তিন ধরনের লোক। প্রথমত, যারা আরব, তুর্কি, আফগান দের বংশ ধর, দ্বিতীয়ত ইংরেজরা, তৃতীয়ত, এক শ্রেনী মানুষ যারা সেই রাশিয়ার বলশেভিক আন্দোলন থেকে আজ অবধি অধীর অপেক্ষায় আছে ‘কবে সর্বহারাদের নেতারা ভারতে গেড়ে বসবে’ , তখন তাদের এখানে আসা ন্যায়তঃ যুক্তি যুক্ত, সেই দাবী করবে।
তৃতীয় পক্ষের সেই আশায় জল। ব্রিটিশ ‘আক্রমন তত্ব’ খাড়া করেও টিকতে পারলো না। কিন্তু যাবার আগে আমাদের, অর্থ্যাত হিন্দুদের ওপরে এক “হীনমন্যতা বোধ” তৈরী করে, তারপর গেলো।
কিন্তু প্রথম পক্ষ, এই দেশেই বানিয়েছে এক বিশাল সংখ্যক অনুগামী, যারা আজো বিশ্বাস করে ‘তাদের পুর্ব পুরুষ দের এই দেশে আসা, দখল করা, অত্যাচার করা , সবই যুক্তি যুক্ত। তারা এই আশাতেও আছে (বেশীর ভাগ, সবাই নয়) আবার একদিন এই দেশ তাদের ছত্র ছায়ায় যাবে।
কি হবে বলা মুশকিল। কারন, এই তিন শ্রেনীর ভক্ত আমাদের দেশে প্রচুর। আর ‘আর্য্যদের বংশ ধরেরা’ তাদের কাছে ‘ক্ষমা ভীক্ষা’ করে চলেছে।
আমার শুধু কয়েকটি প্রশ্ন। বর্তমানে ডি এন এ টেষ্ট করে দেখা যাচ্ছে যে কোনো ‘মাইগ্রেশান” হয় নি। আমি সেই কথায় আর যাচ্ছি না। কারন এর আগের পোষ্টেই আমি তা লিখেছি। পুরাতাত্বিকেরাও আজ একমত হচ্ছেন যে ‘হিন্দু সভ্যতা, ভারতীয় সভ্যতা, সনাতনী বৈদিক সভ্যতা’ একই সভ্যতা এবং এই ভারত ভুমি থেকেই উদ্ভুত । সেই অতি উন্নত সভ্যতা ভারতের বাইরেও প্রচার হয়েছিলো। না, কোনো ঘোড়
সওয়ার উন্মুক্ত তরবারি হাতে সেই বৈদিক সভ্যতার প্রচার করেনি।
একটি গল্প (গল্প নয়, আমার নিজের দেখা এবং জানা) বলি। আমি জীবনের প্রথম যে দেশে কাজ করতে গিয়েছিলাম, তার নাম “গায়ানা”= পুর্বতন ব্রিটিশ গায়ানা। দেশ টি দক্ষিন আমেরিকায়, যেখানে এক বিরাট সংখ্যক ভারতীয় হিন্দুদের ‘ইমিগ্রান্ট লেবারার’= শ্রমিক হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আজ তারা সেই দেশের ৬২% এবং দেশের প্রেসিডেন্ট একজন ভারতীয় বংশ উদ্ভুত। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শেষ ১৫০ বছর আগে। আমি নিজে দেখেছি তারা আজো নিজেদের ভারতীয় হিন্দু বলতে গর্ব করে এবং চারিদিকে মন্দির, হিন্দু বিদ্যালয়ের ছড়া ছড়ি। আমি শেষ বার গেছি ২০১৩ সালে।
সে যাই হোক, আমি প্রতি বৃহষ্পতিবার সকালে যেতাম দেশের রাজধানী জর্জটাউন থেকে ৭০ কিমি দূরে ‘নিউ আমষ্টার্ডাম’ এ। সেখানে একটি ৪৫০ বেডের হাসপাতাল ছিলো। একদিন গাড়ী চালাতে চালাতে নজর পড়লো রাস্তার পাশে পর পর দুটো সাইন বোর্ড। একটি “ 41 Bengal” অন্যটি “Calcutta”. সবে একটি দেশে গিয়েছি। তখনো গরীব। ক্যামেরা কেনার পয়ষা ছিলো না। তাই ছবি নিতে পারিনি। ২০১৩ সালে যখন যাই, আবার সেইখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সাইন বোর্ড খুজে পাইনি।
তো, একদিন গেলাম ওই দুই গ্রামে। শুনলাম, এক আশি বছরের বেশী বয়ষ্ক গ্রাম বাসীর কাছে। তার ঠাকুরদা এবং আরো ৪০ টি পরিবার বাংলা থেকে এসেছিলেন। ‘কলকাতা’ গ্রামেও সেই একই কথা, “তাদের পুর্ব পুরুষ’ কলকাতা থেকে রিক্রুটেড হয়েছিলেন। আমি ডাক্তার হলেও ‘ব্লাক’রা আমাকে ‘কুলি’ বলে ডাকতো। প্রথমে বুঝিনি। পরে জানলাম, যারা কলকাতা, মাদ্রাজ থেকে যায় তাদের বেশীর ভাগ রেল স্টেশান এ ‘কুলি’ র কাজ করতো। তাই সব ভারতীয় দের ওরা কুলি বলতো।
আমার প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কিছু পরিবার শধু মাত্র ‘বাংলা’ এবং কলকাতা থেকে গেছিলো তাই তারা গ্রামের নাম দিয়েছিলো, ‘৪১ জন বাঙ্গালী’ এবং ‘কলকাতা’। তা এতো গুলো যাযাবত আর্য্যরা হিন্দুকুশ পার হয়ে ভারতে এলো, প্রভুত্ব স্থাপন করলো, কিন্তু ভারতের একটি জায়গাও তাদের সেই ভোলগা নদীর তীরের নামে কেনো করলো না। কোথাও তো দেখলাম না আজো।
যারা আরবীদের বংশধর বলে ‘বাগাড়ম্বর’ করে, তারা এই দেশের সব কিছু ভুলে গেলো, ধর্ম , সংষ্কৃতি সব ভুলে গেলো, কিন্তু ‘আরবী’ তো ভুলে যায় নি। বেশ ভালো করে আকড়ে ধরে আছে। রাজা বাজারের এক ‘বামপন্থী নেতা’ আজো ভাল করে বাংলা বলতে পারে না, কিন্তু ‘আরবী’ বেশ ভালো বলে , বোঝে। দেশের নানা জায়গা, শহর, রাস্তা সব বিদেশী আক্রমন কারীদের নামে, সুরী, আকবর, আওরাংজেব, তুঘলকাবাদ, ঔরঙ্গাবাদ, আমেদাবাদ, এমনি কতো কি তার সংখ্যার হিসাব নেই। হিন্দুদের দেওয়া প্রায় সব নাম আজ ইসলামিক নাম হয়ে গেছে। কারন কি???? কারন আর কিছুই না। এই লোক গুলো আগে এবং এখনো সেই আরবী তুর্কি শাসকের দেশকে নিজের দেশ বলে মনে করে। এই দেশের কিছুর সঙ্গে,এমন কি মানুষ গুলোর সঙ্গেও তাদের কোনো সহমর্মিতা নেই, সহ ধর্মিতা তা দূর। খাদ্য, ভাষা, পোষাক, নাম, পদবী, উপাসনা পদ্ধতি সবই আলাদা।
অর্থ্যাত, যারা উপনিবেশ তৈরী করে তারা তাদের নিজেদের দেশের ভাষা, সংষ্কৃতি, নাম ধাম সব তাদের মতো করে করে। বিজীত দেশের মানুষের মতো করে না। আর্য্যরা যদি বিদেশী আক্রমন কারী হবে ,তাহলে ওরা সেটা কেনো করলো না ? প্রশ্ন টা রাহুল সাংকৃত্যায়নকে করি (যদিও বেচে নেই), -----“ভারতে অনেক নদী আছে। তার একটার নাম ও “ভোলগা, হলো না কেনো”? কেনো সেই পৌরানিক সিন্ধু, নর্মদা, গঙ্গা যমুনা, কাবেরী রয়ে গেলো? রাহুলের ভক্তরা কিছু উত্তর দেবেন????? আর্য্যদের আদ্যশ্রাদ্ধ কারী আরবী, তুর্কি ,আফগান দের উত্তর সুরীরা কি কিছু বলবেন ????
নাকি আমাকে ধমকাবেন????
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................