হিন্দুদের যদি পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়, আব্রাহামিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। কেউ দয়া করে হিন্দুদের টিকিয়ে রাখবে না। হিন্দুদের টিকে থাকতে হবে নিজস্ব যোগ্যতায়। অনেকের ধারণা, ঈশ্বর হিন্দুদের টিকিয়ে রাখবেন। বেশ ভালো কথা। তাহলে আফগানিস্তান কিংবা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এতগুলো দেশে কেন ঈশ্বর হিন্দুদের টিকিয়ে রাখতে পারলেন না? বাস্তবতা হচ্ছে, যেখানে হিন্দুরা টিকে থাকতে পারে না, ঈশ্বরও সেখানে টিকে থাকতে পারেন না?
আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে যে, হিন্দুদের প্রধান ঘাটতিসমূহ কী কী এবং আব্রাহামিকদের বাড়তি যোগ্যতা কোন কোন ক্ষেত্রে। আব্রাহামিকদের জনসংখ্যা বাড়ছে, রাষ্ট্র বাড়ছে। পক্ষান্তরে হিন্দুদের জনসংখ্যা কমছে, যেতে-যেতে আর একটি রাষ্ট্রও অবশিষ্ট নেই। শুধু ভারত ও নেপালে এখন পর্যন্ত হিন্দুরা সংখ্যগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। কিন্তু ভারত বা নেপাল কোনটিই হিন্দুরাষ্ট্র নয়। এই রাষ্ট্র দু'টি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে- ভারত ও নেপাল উভয়েই হিন্দু রীতি-নীতি, প্রথা-পদ্ধতির তোয়াক্কা করে না; সম্পূর্ণ ইউরোপীয় সিস্টেমে রাষ্ট্র দূ'টি পরিচালিত হচ্ছে। আরোও আশ্চর্য বিষয়, ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে আব্রাহামিকদের ধর্মশিক্ষা ও ধর্মপ্রচারে প্রণোদনা দেয়, অথচ হিন্দুদের ধর্মশিক্ষা ও ধর্মপ্রচারে প্রতিটি পদে-পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভারতে যেভাবে হিন্দু জনসংখ্যা হার কমে চলেছে, তাতে আর খুব বেশি দিন ভারতের নিয়ন্ত্রণ হিন্দুদের হাতে থাকবে না। হিন্দুরা ফের যদি রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব হারায়, তাহলে পাকিস্তানের মতো ভারতভূমি থেকেও হিন্দুদের রাতারাতি মুছে ফেলা হবে - যেমনটা করা হয়েছে কাশ্মীর ও নর্থইস্ট-এর পাঁচ রাজ্যে।
হিন্দুদের ধর্মীয়-চেতনা কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে আব্রাহামিকদের ক্ষেত্রে, তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি, তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে ধর্ম সম্পূর্ণ জীবন্ত। আব্রাহামিকরা সামাজিক অর্থায়নে শক্তিশালী বুদ্ধিজীবী শ্রেণী গড়ে তুলেছে। এই বুদ্ধিজীবীরা সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে। আব্রাহামিক বুদ্ধিজীবীরা তাদের নিজস্ব সমাজকে যেভাবে গতিশীল রেখেছে, পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে, ভিন্ন ধর্মের দুঃস্থ-দরিদ্র মানুষদের আকৃষ্ট করে- নিজেদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার বিশাল কর্মযজ্ঞ করে তুলে, সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজস্ব জাতিকে ক্রমাগত বলশালী করে তুলেছে। আব্রাহামিক বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রের উপর প্রবল সামাজিক প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছে বিধায়, তারা দেড় শতাধিক জাতিরাষ্ট্র গড়ে তুলতে পেরেছে।
হিন্দুরা এই সমস্ত পার্থিব বিষয়গুলোকে একদম পাত্তা দেয় না। হিন্দু জাতির এত বড় বিপর্যয়- হাজার বছর গোলামী সত্ত্বেও এদের চেতনার সামান্যতম পরিবর্তন নেই! কেন নেই? বিদেশি দখলদাররা, হিন্দু নামধারী ক্রিমিনাল ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের ব্যবহার করে- হিন্দুদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে 'জগৎ-মিথ্যা তত্ত্ব'। অর্থাৎ হিন্দুরা কামনা-বাসনা ত্যাগ করে পরজন্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, আর এদিকে বিদেশী দখলদাররা হিন্দুদের গোলাম বানিয়ে, তাদের রাষ্ট্র লুটেপুটে খাবে।
সুতরাং হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপক গণ-সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে- বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। হিন্দুদের বিষয়মুখী ও সমাজ সচেতন হতে হবে এবং অস্তিত্বের স্বার্থে অবশ্যই জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে হবে। ভিন্ন ধর্মের দালাল বাটপার ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের মুখোশ খুলে দিতে হবে; এদের রাস্তায় ফেলে জুতাপেটা করার বিকল্প নেই।
কৃত্তিবাস ওঝা
১১/১২/২০২০খ্রিঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................