বাঙালি মুসলমান কোনোকালেই নারীকে সম্মান করতে জানি নাই বেগুম রকেয়া এর বাইরে নয়।

বেগম রোকেয়া কেন হুট করে এত গালি খাচ্ছেন, আজকের ছেলেপেলে কেন উনাকে 'বাংলার মিয়া খলিফা কিংবা জাহান্নামী দাইয়ুস' এসব গালি দিচ্ছে, এই নিয়ে অনেকেই কিউরিয়াস হয়ে গেছেন।
মানে এতদিন তো বেগম রোকেয়াকে কেউ গালি দিতে দেখে নাই। এই সময়ে ফেসবুকে শত শত কমেন্টস কেন নেগেটিভলি?
তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, বেগম রোকেয়া তার জীবিত অবস্থায়ই গালি খেয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছিলেন।
উনার কবর দিতে হয়েছিল, রাতের অন্ধকারে। শহর থেকে বহুদূরে অখ্যাত পানিহাটি গ্রামে। গংগার ধারে।
কাদের ভয়ে?
উনাকে খ্রিস্টান মিশনারিদের চর, পর্দাবিরোধী- ইত্যাদি বহু উপাধি দেয়া হয়েছিল।
উনার গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিল।
কিন্তু তিনি দমে যান নাই।
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নিজের লেখনীতে প্রত্যেকটা জবাব দিয়েছিলেন।

উনার লেখার শক্তি আর হিউমার এত ভালো। আমি প্রায়ই বলি, বেগম রোকেয়ার প্রবন্ধ সাহিত্য রবীন্দ্রনাথ আর বংকিমচন্দ্রের চাইতেও বেশী ম্যাচিউরড আর জোরালো।

বাস্তবতা জ্ঞান সম্পন্নও ছিলেন।
প্র‍্যাক্টিক্যালি চিন্তা করতে গিয়ে, মেয়েদের বোরকা পরিয়ে, ঘোড়ার গাড়ি কাপড়ে ঢেকে স্কুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবুও দমে যান নি।
তো মাত্র ২৮ বছর বয়সের এক বিধবা তরুণী,  মাত্র ৫ জন মেয়ে নিয়ে যে নারী শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছিলেন, তা আজ কত বেশী ব্যাপৃত। 
যে লাভের গুড় খায় কোটি কোটি ছেলে-মেয়ে আর পরিবার, গোটা জাতি। 

বেগম রোকেয়া এতসব না করলেও পারতেন।
জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে দিয়ে। 
প্রখ্যাত জমিদার পরিবারের  সন্তান হিসেবে।
স্বামী হিসেবে পেয়েছিলেন  সাখাওয়াত হোসেনকে। যিনি ছিলেন ওই সময়ের সবচে' লোভনীয় চাকুরি,  ব্রিটিশ সরকারের ম্যাজিস্ট্রেট।
ভাইয়েরাও ছিলেন অভিজাত ক্যারিয়ার আর সম্পদের অধিকারী। 
বেগম রোকেয়া ওই সময়ের সবচে' প্রতিপত্তিশীল পরিবারের এক নারী হয়েই দিন কাটাতে পারতেন। 

কিন্তু সব বিসর্জন দিয়ে তিনি রাস্তায় নেমেছিলেন বলেই আজ কোটি কোটি মেয়ে স্বপ্ন দেখে তারা ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, ম্যাজিস্ট্রেট হবে।  যে পেশায় তাদের স্বপ্ন, তা-ই হবে।

ভাইদের পাশে বসে, মোমের আলোয় পড়াশোনা করা এক স্বশিক্ষিত কিশোরী। আলোকিত করার পথ দেখিয়েছিলেন গোটা জাতিকে।
শুধু নারীদের নয়। 
আজ যদি আমার আপনার মা বোন শিক্ষা না পেতেন। গোটা জাতির অর্ধেক যদি উৎপাদনহীন বোঝা হয়ে থাকতো, যে স্বনির্ভর উন্নয়নশীল জাতীয় অর্থনীতির জোরে হুজুরেরাও হেলিকপ্টার চড়ে, সেই অর্থনীতি আজ কই থাকতো?

বেগম রোকেয়া শহরের মুসলিম কবরস্থানে জায়গা পান নি। নদীর ধারে পরিত্যাক্ত কবর, পানিহাটিতে ঠাই নিতে হয়েছিল উনার লাশকে।
এক অখ্যাত ফ্যামিলি ফ্রেন্ড আব্দুর রহমানের দান করা জায়গায় কবরস্থ হয়েছিলেন এক জমিদার কন্যা।  
তার অপরাধ? তো আপনি জানেন-ই।
তবে রোকেয়া হয়তো জানতেন, অন্য কোথাও  জায়গা না পেলেও।  
শত বছর ধরে, 
বাংলার প্রতিটি মেয়ের প্রতিটি অক্ষর শেখা, প্রতিটি ডিগ্রীর সার্টিফিকেট, প্রতিটি চাকুরির নিয়োগপত্র, সন্তানকে শেখানো প্রথম বাক্য- সবকিছুতেই উনার অবদানের জায়গা, হিস্যা থাকবে! 
বাংগালী পুরুষের জীবনে কি নেই? 
আমাদের মায়ের, বোনের,  গোটা জাতির নারী শিক্ষার প্রোডাক্টিভিটির গুড় কি এই গালিবাজরা খায় না?
Hasnat Suhan

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted