প্রাচীন_যুগে_বিদ্যুতের_ব্যবহার ?
এই শিরোনাম দেখেই অনেক পন্ডিতদের নাসিকা কুঞ্চিত হবে .... মনে হবে কল্পকাহিনী । তাঁদের দোষ দিতে পারি না... স্কুল কলেজের কেতাবে পড়েছি যে মাত্র ২১৯ বছর আগে আলেজান্দ্রো ভোল্টা প্রথম ব্যাটারি তৈরি করেছেন, এডিসন ইলেকট্রিক বাল্ব তৈরি করেছেন আরও ৭৯ বছর পর, ১৮৭৯ সালে ... তার পরই তো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে।
কিন্তু এমনও তো হতে পারে আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা বিদ্যুত শক্তির কথা জানতেন, তার ব্যবহার করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সে সব বিজ্ঞান কোন কারণে হারিয়ে গিয়েছে, তাই আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ।
না, পুরান বা Mythology থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি না, সেটা আবার অনেকে বিশ্বাস করেন না। কেউ কেউ তো বলেন Myth = মিথ্যা। তাহলে চাক্ষুষ প্রমাণ আছে কিনা খুঁজে দেখা যাক।
মধ্যপ্রাচ্যকে ঐতিহাসিকরা বলেন মানবসভ্যতার জন্মভূমি । খৃষ্টজন্মের দশ হাজার বছর আগের মন্দির ও জনবসতির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তুরস্ক, ইরাক, ইরান, লেবানন, জর্ডান, ইজরায়েল এবং সিরিয়া সমেত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে । প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দেশগুলোর অধিকাংশতেই যুদ্ধবিগ্রহের জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অমূল্য সব প্রাচীন নিদর্শন, লুঠ হয়ে যাচ্ছে সে সব দেশের প্রত্নসম্পদ।
এখনকার অশান্ত সময় থেকে আমরা আরো কিছুটা পিছিয়ে যাই .... ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কাছে এক প্রত্নতাত্ত্বিকরা খননকার্য চালাচ্ছিলেন এক প্রাচীন জনপদের সন্ধান পেয়ে। সেই সময় তাঁদের হাতে আসে একটি পোড়ামাটির পাত্র । পাত্রটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে কারণ একটি তামার তৈরি পাইপ তার মধ্যে আটকানো মুখের কাছে পিচ জাতীয় কিছু দিয়ে। ঠিক ওই তামার পাইপের মাঝখানে আটকানো একটি লোহার রড । ( ছবি দেখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে)। পাত্রটির নিচেও তামার একটি চাকতি দিয়ে বন্ধ করা। বস্তুটির বয়স নিরূপণ করা হয় আনুমানিক ২২০০ বছর।
যে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বস্তুটি খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁরা কিছু বুঝতে পারেন নি তাঁদের আবিষ্কারের গুরুত্ব । দুবছর ইরাক মিউজিয়ামের মাটির নিচের ঘরে গুদামজাত হয়ে পড়েছিল জিনিসটি।
১৯৩৮ সালে ইরাক মিউজিয়ামে উইলহেল্ম কোনিগ ( Wilhelm Koniģ) নামে এক জার্মান গবেষক আসেন। তাঁর চোখে পড়ে জিনিসটি। উনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে এটি একটি ব্যাটারি । পাইপের মধ্যে যদি ভিনিগার (acetic acid) জাতীয় কিছু ভরা যায় তাহলে বিদ্যুত উৎপাদন হওয়া সম্ভব । সে যুগে ভিনিগার তৈরি হত তার ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে। কোনিগের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৬ এ খননের সময় এইরকম আরও পাত্র পাওয়া গিয়েছিল যা সংরক্ষণ করা হয় নি। কোনিগের ধারনা একাধিক এইরকম ব্যাটারি ব্যবহার করে বেশি পরিমাণে বিদ্যুত শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের Genersl Electric High Voltage Laboratory তে বাগদাদে পাওয়া 'ব্যাটারির' অনুকরণে একটা মডেল তৈরি করে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ইঞ্জিনিয়াররা বলেন এটি অবশ্যই একটি ব্যাটারি এবং এক থেকে দেড় ভোল্ট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সমর্থ।
এর ত্রিশ বছর পর আর একজন জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ও মিশর-বিশেষজ্ঞ Arne Eggebrecht, বাগদাদ ব্যাটারির অনুকরণে আর একটি মডেল বানান এবং যে বিদ্যুত শক্তি তাতে উৎপাদিত হয় তা দিয়ে তিনি একটি ছোট রূপোর মূর্তি Gold plating করেন। ওনার মতে এই ধরনের ব্যটারি অতীত যুগে নিশ্চয়ই Electroplating এর কাজেই ব্যবহার হত। কারন বেশ কিছু ধাতব মূর্তির উপরে এইরকম পাতলা সোনার পাতের আবরণ উনি দেখেছিলেন যা Electroplating ছাড়া করা সম্ভব নয়।
গবেষক Brad Steiger তাঁর Worlds Before our Own বইয়ে লিখছেন, "প্রাচীন যুগে বিদ্যুতের ব্যবহার শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে থাকত, যারা সেই বিদ্যা ইচ্ছা করেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গোপন রাখত।" এই তথ্য আরও কয়েকজন সমর্থন করেছেন।
পুনশ্চ: দুর্ভাগ্যবশত ইরাকের যুদ্ধের সময় ইরাক মিউজিয়াম থেকে বহু জিনিস লুটপাট হয়েছে, তার মধ্যে বাগদাদ ব্যাটারিটিও গেছে। অবশ্য অনেক ছবি আছে অমূল্য এই নিদর্শনের ।
শ্যামল ঘোষ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................