১৯১৫ এর জানুয়ারি। শুরু হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। কেমব্রিজের অধিকাংশ ছাত্র ও অধ্যাপক যুদ্ধে। ট্রিনিটি ফাঁকা। রামানুজনকে একাই থাকতে হয় সারাদিন। নিজেই যা পারেন রান্না করে খান। ডাক্তারের নির্দেশ, মাছ-মাংস না খেলে দুর্বলতা বাড়বে। কিন্তু মায়ের কাছে প্রতিশ্রুত তিনি– নিরামিষ ছাড়া খাবেন না, পরের হাতের রান্না মুখে তুলবেন না।
এই হাড়কাঁপানো শীতেও নিয়মিত স্নান,পুজোপাঠ করতে হয় মায়ের কথা মেনে।
এই হাড়কাঁপানো শীতেও নিয়মিত স্নান,পুজোপাঠ করতে হয় মায়ের কথা মেনে।
একদিন ঘরে এলেন তরুণ ছাত্র প্রশান্তচন্দ্র। ইনিই একদিন হবেন Indian Statistical Instituteএর প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। এই প্রথম দেখা দুজনের।
"তোমার কথা অনেক শুনেছি রামানুজন, কিন্তু তুমি কি অসুস্থ? গায়ে কম্বল নেই কেন?
উত্তর দেননা রামানুজন। জড়সড় হয়ে বসেন। "প্রশান্ত, তুমি সময় পেলেই চলে আসবে… আমি একাই থাকি।"
পরদিনই এলেন প্রশান্ত। রামানুজনকে আজ আরো ফ্যাকাশে, ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তবুও কিঞ্চিৎ মজা করেই বললেন- "Ramanujan, I've got a real problem for you. Can you solve it?"
"সমস্যাটা কি?" জানতে চাইলেন রামানুজন।
"বেলজিয়ামের ল্যুভেন শহরটা তো পুড়িয়ে দিয়েছে জার্মানরা। আমার এক বন্ধু থাকত ওখানে। একটা রাস্তার একদিকের বাড়িগুলোর নম্বর ১,২,৩,৪ এরকম। অন্যদিকে বাড়ির সংখ্যা ৫০এর বেশি, তবে ৫০০র কম। মজার ব্যাপার, দুদিকের বাড়ির নম্বরের যোগফল সমান! বলত আমার বন্ধুর বাড়ি কত নম্বর?"
রামানুজন মুহূর্তে বললেন- "Take down the solution."
প্রশান্তের কথায়-" এরপর তিনি যা করলেন, অবিশ্বাস্য! তিনি 'Dictate' করতে লাগলেন একটি ভগ্নাংশ, যার denominator এ থাকছে একটি সংখ্যা+একটি ভগ্নাংশ, আবার তার বিভাজকে একটি সংখ্যা+একটি ভগ্নাংশ…… এইভাবে ad infinitum. তিনি শুধু বাড়ির নম্বরই বললেন না, দেখিয়ে দিলেন এই জাতীয় সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি।
"কি করে করলেন আপনি? স্তম্ভিত প্রশান্ত।
দুর্বল রামানুজন ক্ষীণ কন্ঠে জানালেন- " As I heard your problem, I at once knew that the solution should be a Continued Fraction. I asked myself, which? Answer came to my mind."
প্রশান্ত নাস্তিক। এই গনিত প্রতিভা কি ঈশ্বরের অবদান? অলৌকিক ক্ষমতার সামনে অসহায় বোধ করেন মহলানবিশ।
আজ তাঁর ১৩৩তম জন্মদিবস।
তথ্য: 'গনিত ও নিয়তি' (রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়)
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................