দেশভাগে ফলে দেড় কোটি বাঙালি হিন্দু ভারতে এসে হয়েছে বিদেশি।

দেশভাগে ফলে দেড় কোটি বাঙালি হিন্দু ভারতে এসে হয়েছে বিদেশি। 
<><><><><><><><><><><><><><><>

দেশভাগের ফলে প্রায় দেড়কোটি বাঙালি ভারতে এসে হারিয়েছে তাদের ভাষা সংস্কৃতি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।কার্যত তারা হয়েছে বিদেশি না আছে তাদের অস্তিত্বের প্রমান না আছে তাদের ঠিকানা।নেহেরু কংগ্রেসের
অবিমৃষ্যকারীতায় পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুরা আজ শিকড়হীন এক বটবৃক্ষ।দেশভাগের পরে ভারতে এসে তারা আজও নুনতম সম্মান পায়নি।আজও তাদের বাঙাল বলে চিড়িয়াখানার জন্ত জানোয়ার ভাবা হয়।এ এক অসম্মানের জীবন এই উদ্বাস্তুরা দীর্ঘ দিন বয়ে বেড়াচ্ছেন।সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল কেন আসামের উদ্বাস্তুদের বেলায় প্রযোজ্য হবে না? অসম কি ভারতের বাইরের কোন দেশ?এই প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না।এই নাগরিকত্ব বিল কি কংগ্রেসের বেইমানির পথ ধরে নুতন করে উদ্বাস্তুদের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিনত করছে? 

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হল।কিন্ত দেশ ছাড়তে হল কেবল হিন্দুদের।হিন্দু এবং মুসলমান দুটি পৃথক জাতি এই সত্যকে স্বীকার করে ভারতকে  দুভাগ করা হল।দেড় কোটি হিন্দুর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাড়ানো হল পাকিস্তান থেকে এবং আজো সেই ধারা অব্যাহত কি পাকিস্তানে কি বাংলাদেশে।সর্বস্ব হারিয়ে পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে এসে আজো অস্তিত্বের সমস্যায় ভুগছে।তারা কেবল ভিটে ছাড়াই হয়নি হাড়িয়েছে তাদের আত্মপরিচয়ের একমাত্র মাধ্যম বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকারটুকুও।তাই একুশের ভাষা দিবস তাদের আর আকৃষ্ট করে না।বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি পোশাক পরিচ্ছদ লেখাপড়া কথা বলা বাঙালিয়ানায় এখন আর তারা অভ্যস্ত নন।মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন,"ভারত দ্বিখন্ডিত হলে তা আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে হবে"।কিন্ত ভারত দ্বিখন্ডিত হয়েছে কার্যত হিন্দুদের লাশের উপর দিয়ে।অসংখ্য প্রান চোখের জল নারীর সম্ভ্রম আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পাকিস্তান।স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দু তার জীবন উৎসর্গ করেছে স্বর্গীয় প্রেরনায়।ফাঁসীর মঞ্চে বলিদানের ক্ষেত্রে হিন্দুরাই ছিল অগ্রগন্য।আত্মবলিদানের তালিকায় কোন বঙ্গেই একজন মুসলমানের নামও নেই।স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের সহযোগিতা করে লাভ করল পেয়ারে পাকিস্তান আর আত্মত্যাগী হিন্দুরা হল দেশত্যাগী ছিন্নমূল। জন্মভূমি থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হল ভারতে।যারা আসামে আশ্রয় নিল তারা হল বহিরাগত।আর যারা ভারতের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল,দ্বীপাঞ্চল আর ভয়াল বনাঞ্চলে আশ্রয় নিল তারা কেউ  বিহারে, কেউ উত্তর প্রদেশে, কেউ উত্তরাখন্ডে,কেউ উড়িষ্যায়, কেউ মধ্যপ্রদেশে,কেউ ছত্তিসগড়ে, আবার কেউ হল ঝাড়খন্ডের অধিবাসী।তাদের কারো পরিচয় এখন আর বাঙালি নয়।

দেশভাগের সত্তর বছর পরেও এখনো প:বঙ্গের বাইরে নানা রাজ্যে শিকড়ের সন্ধানে মাথা খুড়ছেন প্রায় দেড় কোটি বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তু।উড়িষ্যা, কর্নাটক,অন্ধ্র,মধ্যপ্রদেশ,ছত্তিসগড়,
উত্তরপ্রদেশ,অসম,আন্দামান,বিহারের মত বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন তারা।সম্প্রতি নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমন্বয় সমিতির এক সমীক্ষা রিপোর্টে এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।এই খতিয়ান অনুযায়ী আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এই মানুষজন এখন ক্রমেই হারিয়ে ফেলেছেন তাদের মাতৃভাষার অধিকার।কারন ভিন রাজ্যে বহু জায়গাতেই বিদ্যালয় শিক্ষাক্রমে বাংলা ভাষার কোন প্রচলন নেই।ফলে বাধ্য হয়ে তাদের বেছে নিতে হয়েছে ভিন্ন সংস্কৃতি ভিন্ন ভাষা ভিন্ন কৃষ্টি।সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ভিন রাজ্যে দুর্গম এবং প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছেন এই বাঙালি উদ্বাস্তুরা।দাক্ষিনাত্যের কর্নাটকে রয়েছেন ৩৫ হাজার বাঙালি। ছত্তিসগড়ের বস্তারে বাঙালির সংখ্যা প্রায় ১লাখ সরগুজায় প্রায় ৮০ হাজার,দূর্গে প্রায় ২৫ হাজার।উত্তর প্রদেশের পিলভিটে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ বাঙালি। বিজনোরে ৫০ হাজার খেরিতে রয়েছে ৫০ হাজার।রাজস্থানের ঝালওয়ার বারানে ২০ হাজার,।মধ্যপ্রদেশের সাতনায় ৫ হাজার। এছাড়া ছত্তিসগড়ের কানকেরেতে রয়েছে প্রায় ১লাখ ৫০ হাজারের মত উদ্বাস্তু বাঙালি।এছাড়া ছিন্নমূল যাদের নিজস্ব কোন থাকার জায়গা নেই এমন উদ্বাস্ত বাঙালি হিন্দু রয়েছে অসমে ৭৫ লাখ,উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখন্ডে ২৫ লাখ,উড়িষ্যায় ৩০ লাখ,মধ্যপ্রদেশ ১১লাখ,ছত্তিসগড়ে ৫ লাখ,ঝাড়খন্ডে রয়েছে আরো ৫ লাখ।

সব মিলিয়ে শুধু ভাষা সমস্যা ছাড়াও তারা অস্তিত্বের এক তীব্র সঙ্কটে নিপতিত।জনজাতির সামাজিক বিবর্তনের ইতিবৃত্ত দেখলে বুঝা যায় ছিন্নমূল মানুষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ার কারনে জীবনের তাগিদে তারা বাধ্য হন ভিন্ন ভাষা সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে।কিন্ত এই দুর্ভোগের কারন দেশভাগ এবং জন্ম জন্মান্তরে এই অভিশাপ বয়ে বেড়েতে হচ্ছে উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুদের।আর কতকাল কে জানে! কে জানে!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted