ডাক্তার জাফরউল্লাহ চৌধুরী গতকাল এক টক-শোতে বলছেন যে ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিশ লক্ষ মারা গেছে শরণার্থী শিবিরে ভারতের মিস ম্যানেজমেন্টের কারণে।
আমি গত ৬-৭ বছর ধরে বলে আসতেসি অক্সফাম, ব্রিটিশ ম্যাডিকেল এ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সংস্থার ডাটা একত্র করলে আইডিয়া করা যায় যে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে কলেরা সহ নানান রোগে লোয়ার লিমিটে পাঁচ থেকে আপার লিমিটে দশ লক্ষাধিক শরণার্থীর মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে। নিউজ উইক সহ তৎকালীন নানা পত্র পত্রিকায়ও এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
কিন্তু এসবই তিরিশ লক্ষের পরের হিসাব!
মজার বিষয় হচ্ছে বিগত বছর গুলোতে জাফরউল্লাহ স্যার শহীদের সংখ্যা তিন লক্ষ মানতেও দ্বিধা করতেন। আজ হঠাৎ করে এক লাফে তিরিশ লাখ মেনে নিচ্ছেন দেখে অবাক লাগলো। সাথে সাথে রাজনীতিটাও বুঝতে পারলাম। তিনি গণহত্যার দায়ভারটা 'ভারতের কাঁধে' তুলে দেয়ার পায়তারা করছেন এবং কেবল ভারতের কাঁধে তুলে দেয়ার শর্তেই তার এতদিনের প্রেমের তিন লাখ থেকে এক লাফে তিরিশ লাখ মেনে নিতে রাজি হয়েছেন জাফরউল্লাহ চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের মত দুর্দান্ত একটা কাজ সহ সিভিল সোসাইটিতে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজকর্মে অবদান রাখার জন্য আমি জাফরউল্লাহ চৌধুরীকে অত্যন্ত সম্মান করি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিষয় আসলেই যেই নোংরা খেলাটা উনি খেলেন সেটা আসলেই দুঃখজনক। ডক্টর এম এ হাসান, সুকুমার বিশ্বাসের গণহত্যা জরিপ কিংবা 'গণহত্যা নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র' পরিচালিত গণহত্যা জরিপের দিকে যদি উনি একটু দৃষ্টি দেন তাহলেও সারাদেশে একাত্তরে কি পরিমাণ হতাহত হয়েছিল সেটার একটা আইডিয়া উনি পাইতে পারতেন।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীর প্রবাহমানতা পরবর্তী ৮-১০ বছর ইফেক্ট রেখে গেছে। গণহত্যার শহীদদের বিষয়ে যদি আমাদের ন্যুনতম সম্মান থেকে থাকে তাহলে এভাবে দায় ঠেলে দেয়ার কাজটা আসলে আমাদের করা উচিত না। শরণার্থী শিবিরে হতাহত মানুষের দায় কি ভারতের? নাকি দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন?
লাইফ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক জন সার লিখেছেন শরণার্থী বহনকারী বাস থেকে একটি মৃত শিশু ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে রাস্তার পাশে। বাংলাদেশ থেকে আসার পথেই শিশুটি মারা গেছে। একটা মৃত লাশ বহন করার যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি অসহায় মা। একটা জীবিত মানুষ বাসে জায়গা পেলে প্রাণে বেঁচে যেতে পারে।
আমরা কেন গনহত্যাকে আওয়ামী লীগ বিএনপির রাজনীতির বাইরে আনতে পারছি না? একাত্তরের ভিকটিম অধিকাংশই ছিল প্রান্তিক পর্যায়ের। কেউ তাঁদের খবর আগেও রাখে নাই। এখনো রাখে নাই। শুধু সংখ্যা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। এখন হচ্ছে দায় ঠ্যালার রাজনীতি। মৃত্যুব্যাথিত প্রাণগুলোর জন্য আমাদের কান্না আসে নাই। আমরা দায় ঠেলে, সংখ্যার রেডিয়াস বাড়িয়ে কমিয়ে জাতীয়তাবাদী আবেগের থার্মোমিটারের পারদ উঁচুনিচু করেছি। এর মাঝে পঞ্চাশ বছর চলে গেছে। শহীদদের কথা আমরা কেউ ভাবি নাই।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................