ভাস্কর্য নিয়ে এই বিতর্ক ছিলো অনাকাঙ্খিত। ইসলামে নিষিদ্ধ বহু জিনিস ইসলামী বিশ্ব এডাপ্ট করেছে। যেমন ইসলামে ছবি তোলাও হারাম ছিলো। কিন্তু এটি বর্তমান পৃথিবীর সব আলেম-ওলামা তোলেন এবং ব্যবহার করেন।
আসলে যুগের প্রয়োজন আপনি না মিটিয়ে পারবেন না। আপনি চলমান বিশ্বকে উপেক্ষা করে টিকতে পারবেননা। এটি করতে খোদা আপনাকে বলেনওনি। পৃথিবীর বড় বড় নবীদের আমলে এগুলো ছিলো। যেমন দাউদ নবী, সুলাইমান নবীর আমলে এসব শিল্পের পরিচর্যা ছিলো।
আগেই বলেছি, যুগের প্রয়োজনে আপনি ছবি না তুলে পারলেন না। তেমনি সাইন্স না পড়ে পারলেন না, ঘোড়া উট রেখে গাড়িতে না উঠে পারলেন না, ভিডিও না করে পারলেন না, বিমানে না উড়ে পারলেন না। অমুসলিমদের বই না পড়ে পারলেন না, তাদের জ্ঞান আহরণ না করে পারলেন না।
এগুলো হলো যুগের ডিমাণ্ড। এগুলোকে যদি আপনি গ্রহণ না করতে পারেন, তবে সভ্যতা আপনাকে গ্রহণ করবেনা। পরিণামে আপনি হবেন বিচ্ছিন্ন। ইউরোপ-আমেরিকাতে চরমপন্থী জঙ্গীদের আজকের অবস্থার কারণ হলো এটাই। তারা সে সামজে মিশতে পারেনি। তারা মূসা নবীর উম্মত, ইসা নবীর উম্মতদের সম্মান স্নেহ করতে পারেনি। অথচ তারা ছিলো আহলে কিতাব।
এখন কথা হলো, ভাস্কর্য হলে আমাদের লাভ কি ? ক্ষতিটাইবা কি ? লাভ হলো সৌন্দর্য, স্মৃতিরক্ষা, ললিতচর্চা, সম্মান প্রদর্শন। এগুলো না করলেও তেমন ক্ষতির ব্যাপার নেই। কারণ এগুলো আমাদের ভাত কাপড় দিবেনা। তবে জাতি হিসেবে আমাদের মাণদণ্ড বাড়বে, মূল্যবোধ বাড়বে। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গাতে।
তারা লালনের ভাস্কর্য আটকে দিলো। তারপর তারা এককদম এককদম করে এগুতে লাগলো। এগুতে এগুতে তাদের ধৃষ্ট্রতা এতদূর বাড়লো যে, তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিলো ! দেখলেন অবস্থা ! একজন মানুষ সারাজীবন খরচ করে ফেললেন একটি জাতির মুক্তির জন্যে। শেষে জীবনও দিয়ে গেলেন স্বপরিবারে। তাঁর প্রতি ন্যূনতম সম্মনটুকুও রাখতে হবেনা !? এবং তাঁর মেয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এটাও তারা পরোয়া করার ধার ধারলোনা !
এখানেই তাদের থামাতে হবে। না হলে তারা আধুনিক সভ্যতাকেই ফেলে দিবে। তারা স্কুল-কলেজকে বাতিলের জ্ঞান বলে অফ করে দিবে। কম্পিউটারকে শয়তানের বাক্স বলে ফেলে দিবে। মেয়েদের শিক্ষাকে হারাম ঘোষণা দিয়ে তাদের ঘরে বন্দী করবে। অনৈসলামিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ অফ করে দিবে। ব্যাংক-বীমা, শিল্প-কারখানা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সবই তারা অফ করে দিয়ে পিছনের দিকে যাত্রা শুরু করবে। পরিণামে জাতির অবস্থা হবে এ যুগের আফগানিস্তানের মতো।
এই জ্ঞানহীনতাকে থামাতে হলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যতো বানাতেই হবে, উপরন্তু লালন, হাসন রাজা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, চণ্ডীদাস-সহ সকল বাঙালী রত্নের ভাস্কর্য বানাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এগুলো ইসলামি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আছে।
আমরা আসমান থেকে পড়া ইসলামী দেশ নয়। যা সৌদি আরবে আছে, আরবের বাকী দেশে আছে, পাকিস্তান তুরস্ক ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়াতে আছে, তা আমাদেরও থাকতে পারে।
তবে সবচেয়ে যেটা বেশি করতে হবে তা হলো, আগামি প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যারা আজ জ্ঞানবিজ্ঞানে পিছিয়ে গেলো, যারা আজ আধুনিক পৃথিবীর আলো বঞ্চিত হয়ে নতুন আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকারে ডুবে গেলো, তাদেরও টেনে তুলতে হবে। জাতিকে আগাতে হলে দেশের সব সন্তানকে একই শিক্ষার রূপলেখায় বড় করে তুলতে হবে।
ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা, বাংলা মাধ্যম শিক্ষা, কওমি মাধ্যম শিক্ষা, --এই তিনটি ধারাকে একই ধারায় নিয়ে আসতে হবে। না হলে আগামি দিনে দ্বিধাবিভক্ত জাতি গৃহযুদ্ধে মেতে উঠবে। ভাইয়ে ভাইয়ের রক্ত ঝরাবে। একই ধরণের শিক্ষা ছাড়া এর থেকে মুক্তি নেই।
এক সময় হাঁ ছিলো এখন না।
ইংরেজি শিক্ষা- হারাম
নারী শিক্ষা- হারাম
নারী নেতৃত্ব- হারাম
সহশিক্ষা- হারাম
ছবি তোলা- হারাম
গান শোনা- হারাম
মাইকে আজান- হারাম
রেডিও- হারাম
ক্যামেরা- হারাম
টিভি দেখা- হারাম
ভিডিও- হারাম
মোবাইল- হারাম
প্লেনে চড়া- হারাম
সাবান ব্যবহার- হারাম
টিস্যু ব্যবহার- হারাম
পুরুষ ডাক্তার দেখানো- হারাম
নারী নার্স- হারাম
মেয়েদের চাকরী- হারাম
রক্ত সঞ্চালন- হারাম
কিডনি প্রতিস্থাপন- হারাম
এক্সরে- হারাম
আল্ট্রাস্নো- হারাম
রোবট- হারাম
থ্রি ডি প্রিন্টার- হারাম
আলতা দেয়া- হারাম
লিপস্টিক- হারাম
পুরুষের রঙ্গীন পোশাক- হারাম
খেলাধুলা- হারাম
ডাইনিং টেবিল- হারাম
অমুসলিমের সাথে সম্পর্ক- হারাম
গণতন্ত্র- হারাম
সমাজতন্ত্র- হারাম
নারীর ভোট- হারাম
ব্যাংকিং- হারাম
ব্যাংকে চাকরি- হারাম
এনজিওতে চাকরি-হারাম
টিকা/ ভ্যাক্সিন- হারাম
শাপলা পাতা মাছ- হারাম
মিল্ক ব্যাংক- হারাম
ভাস্কর্য- হারাম
কলপ দেয়া- হারাম
ফেসবুক- হারাম
ইউটিউব- হারাম
শার্ট প্যান্ট- হারাম
টাই পরা- হারাম
সাহিত্য- হারাম
গল্প লেখা- হারাম
বাংলা নাম- হারাম
জন্মনিয়ন্ত্রণ- হারাম
টেস্টটিউব বেবি- হারাম
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং- হারাম
নারীর মোটর সাইকেল চালানো-হারাম
গায়ে হলুদ- হারাম
জন্মদিন পালন- হারাম
নববর্ষ পালন- হারাম
হালালের চাইতে হারাম বেশি বেশী হতে পারে না।
বাংলাদেশে ভাস্কর্য থাকবে, মূর্তি থাকবে, রবীন্দ্র সংগীত থাকবে, গজল থাকবে, জারি-সারি পালা গান থাকবে। নাটক-সিনেমা থাকবে, ওয়াজও থাকবে।
নামাজ থাকবে, পূজাও থাকবে। আবার কোনোটাই পালন না করার অধিকারও থাকবে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা --আরও যা যা দরকার সব থাকবে।
১৯৭১ সালেই পাকিস্তানপন্থীদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। যারা এসব মানতে পারবেন না তারা দেশ ছাড়লে দেখবেন পাকিস্তান কিংবা কোন মুসলিম দেশ তারাও আপনাদের গ্রহণ করবে না। প্রমান রোহিঙ্গা মুসলিমরা। প্রত্যেক মুসলমান ভাইভাই হলেও কোন মুসলিম দেশ তাদেরকে গ্রহন করে না।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................