যুদ্ধ কৌশল না বিশ্বাসঘাতকতা”- রাজা দাহিরl

“মেরেছো কলসীর কানা তাই বলে কি প্রেম দেবো না”?=
“যুদ্ধ কৌশল না বিশ্বাসঘাতকতা”- রাজা দাহির
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

আমার পোষ্টের কমেন্টে অনেকে অনেক সময় প্রশ্ন করেন “ হিন্দুদের ক্ষাত্র শক্তি যদি অতোই ভালো ছিলো, তাহলে বারে বারে মুসলমানদের কাছে পরাজিত কেনো হলো”?

অতি সঙ্গত প্রশ্ন। 

এরা ভুলে যান, হিন্দুরা যুদ্ধ যেমন করেছে, ঠিক তেমনি তার নিয়ম ও মেনে চলেছে। সেই সঙ্গে আশ্রিত কে বিশ্বাস করা হিন্দুদের একটি গুন ( বদ গুন) । রাজ দাহিরের সময় কি হয়েছিলো সেটা জানুন। 

মুহাম্মদ বিন কাসিম ছিলো ইরাকের প্রশাসক হিজাজের ভাইপো। বয়ষ মাত্র ১৯ বছর। কাকা হিজাজ এর আগে দুবার ভারত আক্রমন করে কিন্তু দুইবার রাজা দাহিরের কাছে পরাজিত হয়। ৩য় বার ভাইপো কাসিম কে অনেক সৈন্য রসদ দিয়ে কাকা হিজাজ আবার পাঠান। তুরষ্কের খলিফার সঙ্গে চুক্তি, ১২০ লক্ষ ডিনার এবং গনিমতের মালের এক পঞ্চমাংশ পাঠানো হবে। 

কাসিম বর্তমান করাচী, যার পুরানো নাম ছিলো ‘আলোর’ অবরুদ্ধ করে। তিন মাস অবরুদ্ধ করার পর ও সে কোনো রকমে ‘আলোর দুর্গের’ ধারে কাছে পৌছাতে পারে না। রাজা দাহির আলোর থেকে ৫০০ কিমি উত্তরে “রাওয়ার” দুর্গে থাকতেন। 

বেশ কিছুদিন আগে ‘ আলতাফী” নামে একটী আরবী গোষ্টি আরব থেকে প্রান ভয়ে পালিয়ে রাজা দাহিরের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। রাজা দাহির তার ‘হিন্দু দুর্বলতার’ জন্য (প্রেম করা) তাদের আশ্রয় দেন। এই আলতাফীরা কারা ছিলো ?

 এটা সবাই জানে, নবীর দেহান্তরের পর, কে ইমাম হবে এই নিয়ে দুই গোষ্টির মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। একদল নবীর খুড়োতুতো ভাই এবং একাধারে জামাতা “আলী”র সমর্থিক (শিয়া) এবং নবীর পত্নী ‘আয়েষার’ দল ( মুয়াইয়ার দল= সুন্নী) । এই গৃহ যুদ্ধ অনেক দিন চলে, আজো চলছে। আলতাফী গোষ্টি আলীর সমর্থক ছিলো। তারা প্রান ভয়ে রাজা দাহিরের কাছে আসে, আশ্রয় পায়। মুয়াইয়ার দলের ইমাম এজিদের তাই রাগ এসে পড়ে রাজা দাহিরের ওপর। আর সেটাই আসল কারন পর পর তিনবার তার রাজ্য আক্রমন করার। 

যাই হোক, রাজা দাহির ‘অত্যাধিক প্রেমাবশে’ আপ্লুত হয়ে, এই আলতাফী গোষ্টিকে তার নিজের দেহরক্ষী হিসাবে রাখেন। কাসিম যখন কিছু বৌদ্ধ ভীক্ষু, যারা আলোর দুর্গে বাস করতো, তাদের সাহায্যে গভীর রাতে দুর্গের গোপন দরজা দিয়ে এসে সমস্ত দুর্গ বাসীদের কচু কাটা করে তখন রাজা দাহির স্বসৈন্যে কাসিমের প্রতিরোধে আসেন।

রাজা দাহিরের সৈন্য সংখ্যা কাসিমের থেকেও অনেক বেশী ছিলো এবং সারাদিনের পর বোঝা গেলো কাসিম পরাভুত হতে চলেছে। রাজা দাহির জানতেন না, কাসিম খুব গোপনে দাহিরের দেহরক্ষী এই আলতাফী গোষ্টির সঙ্গে একটা সমযোতা করেছে। তিন মাসে সে তুরষ্কের খলিফার (ইমাম) র কাছ থেকে এই আলতাফী গোষ্টির বিরুদ্ধাচারনের দোষ ক্ষমা করিয়ে নিয়েছে। 

যাই হোক দিন শেষে যখন কাসিমের সার্বিক পরাজয় নিশ্চিত, ঠিক তখন, দাহিরের দেহরক্ষী বাহিনীর মধ্যের এই আলতাফি গোষ্টি বিশ্বাসঘাতকতা করে। রাজা দাহির হাতির পিঠে হাওদায় বসে যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন। একজন আলতাফী একটি “ন্যাপ্ত্যা’=(গালা) জড়ানো আগুনের তীর রাজার হাওদায় ছোড়ে। হাওদায় আগুন ধরে যায় এবং তার হাতি উন্মত্তের মতো লাফালাফি শুরু করে। রাজা দাহির নীচে পড়ে যান। কাসিম তখন তাকে নিহত করে। রাজার সৈন্যরা তখন ছত্রভংগ হয়ে পলায়ন করে। 

রাজা দাহির যদি একটূ বিচক্ষন হতেন ( হিন্দুত্বের সম্মখ জ্ঞান টা রাখতেন) এবং কাকে বিশ্বাস করতে হবে সেই যৎসামান্য বিচার বুদ্ধি নিয়ে চলতেন তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্য ভাবে লিখতে হতো। 

“মেরেছো কলসীর কানা তাই বলে কি প্রেম দেবো না”? প্রেম এমনই একটি আবেগ যা যত্র তত্র বিলাতে নেই। আমি কাউকে অযথা প্রেম করা বন্ধ করে দিয়েছি। করে অনেক ঠকেছি।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted