সক্রেটিসের সময় থেকে যারা-ই জ্ঞানের জন্য আত্মনিয়োগ করেছেন, তারা-ই কোনো না কোনোভাবে ভয়াবহ বিপদে পড়েছেন।

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসকে চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭০ সালে গ্রিসের এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান দার্শনিক। সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় তিনি তরুণদের ভুলপথে চালিত করছেন, তিনি নাস্তিক ছিলেন। এই কারণে তাকে বছরের পর বছর জেল খাটতে হয়। সহ্য করতে হয় নির্যাতন। একসময় বিষ পানের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

মৃত্যুদণ্ড
সক্রেটিসের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো তার সমসাময়িক সমাজ ছিল রক্ষণশীল এবং সংকীর্ণমনা। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়। ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আদালতে সক্রেটিসের বিচারের রায় দেওয়ার জন্য ৫০১ জন জুরির সমন্বয়ে জুরিবোর্ড গঠন করা হয়েছিল। ২২১ জনের নির্দোষ ঘোষণার বিপরীতে ২৮০ জন সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এরপরও সক্রেটিস নিজের যুক্তিতে অনড় ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সক্রেটিসকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে নিচ্ছেন কিনা। কিন্তু সক্রেটিস নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং তার কর্মকাণ্ডকে যুক্তিযুক্ত বলেন। তিনি বিচারকদের কটাক্ষ করেন। ফলে হেমলক বিষ পানের মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। মহাজ্ঞানীর করুণ মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে ইতিহাস।

তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মৃত্যুর ২৪১৫ বছর পর গ্রিসের একটি আদালতে পুনরায় এই বিষয়টি জীবন্ত হয়ে উঠল। আদলত জানাল, সক্রেটিস নির্দোষ ছিলেন।প্রাচীন গ্রিসের শাসকেরা সক্রেটিসকে যে শাস্তি দিয়েছিলেন তা কোনভাবেই আইনসম্মত নয়। কেননা সক্রেটিস সেই ব্যক্তি যার জ্ঞানের মূলধন দিয়ে পরবর্তী ২ হাজার বছর ধরে উপকৃত হয়েছে পশ্চিমী দর্শন, সংস্কৃতি ও সভ্যতা।

হেমলক বিষ পান করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ মাথা পেতে নিয়েছিলেন সক্রেটিস। সক্রেটিসের পক্ষের আইনজীবী বলেন, 'কোন ব্যক্তির অভিমত জানানোর জন্য তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না। সক্রেটিস সত্যের সন্ধান করতেন। তাঁর দোষ বলতে একটিই আছে, তিনি সত্য বালার কারণে সুবিধাবাদীরা খ্যাপাতেন। তিনি সে সময়ের প্রচলিত ব্যবস্থার সমালোচনা করতেন যুক্তি দিয়ে। 

সক্রেটিসের সময় থেকে যারা-ই জ্ঞানের জন্য আত্মনিয়োগ করেছেন, তারা-ই কোনো না কোনোভাবে ভয়াবহ বিপদে পড়েছেন। তাদের জন্য অজান্তেই প্রস্তুত হয়েছে এক পেয়ালা হেমলক। যারা অজানাকে জানতে চেয়েছেন, তারাই হেমলকের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবু পথ ছাড়েননি পৃথিবীর জ্ঞান পিপাসুরা হেমলকপ্রেমীরাই পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

এখনও যে দু চার জন মানুষ সত্য বলার পক্ষে অথচ হেমলকের ভয় নাই! তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, নতুজান 🙏🙏

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted