“রানী ‘রানী বাই’ এবং দাহিরের দুই কন্যা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
চাচ নামা বলে একটি বই আছে। আমার কাছে তার বাংলা অনুবাদ আছে। এই কাহিনী 'চাচ নামা' থেকে নেওয়া। তাই এই কাহিনীর সত্যতা যাচাই এর জন্য আমাকে প্রশ্ন করবেন না। চাচ নামা পড়ুন আর লেখক কে প্রশ্ন করুন। ( তবে তিনি বেচে নেই। লেখক রাজা দাহিরের সম সাময়িক)
রাজা দাহিরের পরাজয় এবং বীরত্ব পুর্ন আত্ম্যত্যাগের সংবাদ যখন ‘রাওয়ার’ দুর্গে পৌছালো, তখন দুর্গে রানী রানি বাই এবং তার পুত্র ছিলেন। আর ছিলো ১৫০০০ সৈন্য। রানী তার পুত্রেকে বললেন, “ তোমার পিতা মাতৃভুমির স্বাধীনতা রক্ষায় জীবন ত্যাগ করেছেন, আমি চাইবো তুমি তোমার পিতার সম্মান রক্ষা করো। আমাদের জন্য চিন্তা করো না”। দাহিরের পুত্রও বীর বিক্রমে যুদ্ধ করলেন।
সবে কৈশোর পেরোনো রাজপুত্র যুদ্ধ বিদ্যায় অনভিজ্ঞ ছিলেন। রানী যখন বুঝলেন এই যুদ্ধ আর বেশীক্ষন চালিয়ে যাওয়া যাবে না, তখন তিনি দুর্গের সমস্ত মহিলাদের একত্রে ডাকলেন। (আমার মনে হয়, রানী বাই এর সেই বক্তব্য সব হিন্দু র ধ্যান দিয়ে জানা উচিত। ) তিনি বললেন,---- “ঈশ্বর না করুন, এই গোমাংস ভক্ষন কারীদের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সমযোথা করতে হবে। আমাদের নারীত্বের , সতীত্বের অবমাননা করে বেঁচে থাকার চেয়েও মৃত্যু অনেক সুখের এবং সম্মানের। আমাদের শেষ ভরসা এখন প্রায় শেষ। কোথাও পালিয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। আমাদের এখন কাজ কাঠ, তুলো এবং তেল জোগাড় করা। এসো আমরা সবাই আমাদের স্বামীদের সংগে স্বর্গে গিয়ে মিলিত হই”। দুর্গে যতো মহিলা ছিলেন ( প্রায় ৬০০০) তারা আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে আরবী বর্বরতার হাত থেকে নিজেদের আত্মসম্মান রক্ষা করলেন। (সনাতনি সমাজে সেই থেকে সতীদাহ প্রথা চালু হলো)।।
শুধু দুই অপুর্ব সুন্দরী কন্যা, আগুনে ঝাপ দিলেন না। সেই দুই কন্যা রাজা দাহিরের দুই পুত্রী। নাম, সুর্য্য দেবী এবং প্রমিলাদেবী।
কাসিমের আরবী সৈন্যরা যখন দুর্গে প্রবেশ করলো তখন চারিদিকে শুধু চিতা জ্বলছে। তারা দেখতে পেলো, সেই চিতার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাজা দাহিরের দুই পরমা সুন্দরী কন্যা। কাসিম তাদের ধরে নিয়ে গেলো। বিনা প্রতিবাদে সেই দুই কন্যা কাসিমের সংগে চলে গেলো।
সিন্ধু বিজয়ের পর কাসিম ৩ বছর সিন্ধু শাসন করে। দাহিরের দুই কন্যা এবং লুটের মাল পাঠানো হলো ইরাকে হিজাজের কাছে। প্রথা অনুযায়ী, হিজাজ দাহিরের দুই কন্যাকে পাঠালো খলিফার কাছে। তাদের রুপে আকৃষ্ট হয়ে খলিফা দুই কন্যাকে তার শয়ন কক্ষে পাঠাতে বললো। শয়ন কক্ষে যাবার পর, সুর্য্যদেবী খলিফাকে বললো, বাদশাহ,আমরা আপনার আশ্রিত, দাসী। আপনি যা বলবেন আমরা তাই করবো। কিন্তু, আমরা আপনার অংকশায়িনী হবার উপযুক্ত নই। কাসিম আমাদের সতীত্ব হানি করে তবে আপনার কাছে পাঠিয়েছে”। সেই কথা শুনে খলিফা রেগে অগ্নিশর্মা হলেন এবং হিজাজ কে বললেন, কাসিম যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় গাধার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে তুরষ্কে পাঠাতে। কাসিম খলিফার অকৃত্রিম বান্দা ছিলো। সে নিজেই ওই শাস্তি মাথায় পেতে নিলো। কাসিমের শব যখন এসে পৌছালো তুরষ্কে তখন তার শরীর পচে দুর্ঘন্ধ বেরুচ্ছে।
সুর্য্য দেবী, একদিন খলিফাকে বললো, “ আমি যা বলেছি তা মিথ্যা। কাসিম আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। আমরা শুধু আমাদের মাতৃভুমি কে কলুষিত করার জন্য তাকে শাস্তি দিয়েছি। এই বলে, দুই বোন পরষ্পর পরষ্পরকে ছুরি দিয়ে হত্যা করলো। ক্ষীপ্ত খলিফা দুই বোনের মৃত দেহ ঘোড়ার পিছনে বেধে সারা ইস্তানবুল ঘোরালেন।
এই হলো, রানী ‘রানি বাই’ এবং তার দুই কন্যার কাহিনী। এই কাহিনী ‘চাচনামা’ তে আছে।
(চাচ নামা থেকে অনুবাদ করে দেওয়া। সত্য মিথ্যার দ্বায় আমার নয়)
“
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................