অবিভক্ত ভারতের, বাংলার মুসলমান উদ্বাস্তু হয়নি কেন ?

অবিভক্ত ভারতের, বাংলার মুসলমান উদ্বাস্তু হয়নি কেন ?
---------------------------------------------------------------
গোদা বাংলায় কিছু সত্য না লিখলে, বাঙালির পক্ষে তা অনুধাবন করা কষ্টসাধ্য হয়। আদতে, বাঙালি একটি নির্লজ্জ্ব, ইতিহাস বিস্মৃত জাতি, মানতে কস্ট হলেও এটাই সত্য। তাই বারেবারে ইতিহাস ঘেঁটে, তাদের সামনে তুলে ধরতে হয় এই আশায় যে, কোনোদিন হয়তো বাঙালির সম্বি ফিরবে, সে প্রকৃত ইতিহাসকে মর্যাদা দিয়ে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেবে।

গান্ধী বলেছিলো :"আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে দেশভাগ হবে", আর জিন্নাহ বলেছিলো :'আমি পোকায় কাটা পাকিস্তান চাই না।" বস্তুত, অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই দুই কুলাঙ্গারের কোনো অবদানই নেই। একপা এগিয়ে বলতে হয়, অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে কজন হাতেগোনা মুসলমানের নাম ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাওয়া যায়, তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসন হঠিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা।
ইসলামী জীবন বিধানের পূর্ণাঙ্গ কিতাব কোরানে নির্দেশিত দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা জিন্নাহ ও তার অনুসারী মুসলিম লীগের টাউটরা জেলও খাটনি, দিপান্তরেও যায়নি, গুলি-লাঠিও খায়নি ! স্রেফ হিন্দু নিধনের মাধ্যমে আর ' মু মে বিড়ি হাত মে পান. লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান' করে একটি মোটামুটি বিশাল রাজত্ব পেয়ে গিয়েছিলো ! (এখন সেটিও দ্বিখণ্ডিত-ইতিহাসের প্রতিশোধ !) । বাঙালি হিন্দুর জীবনে এই স্বাধীনতা এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ! ১৯৪৬ সাল থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দুই বাংলাতেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গে হয়েছিল একতরফা পরিকল্পিত হিন্দু নিধন ও বিতাড়ন । পশ্চিমবাংলার সাম্প্রদায়িক হানাহানি মূলত শুরু হয় বসবাসকারী অবাঙালি মুসলমানদের উস্কানিতে । শুরুটা তারাই করেছিল । পরবর্তীতে, জোরদার প্রতিরোধ ও পাল্টা জিঘাংসায় পশ্চিমবাংলার এই অবাঙালি মুসলমানেরা পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যায় । এদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২৫-৩০ হাজার । এছাড়াও সাম্প্রদায়িক হানাহানি শুরু হলে পশ্চিমবাংলার সীমান্ত জেলাগুলো থেকেও কিছু সংখ্যক বাঙালি মুসলমান জমি-সম্পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায় । এদের সংখ্যা প্রায় আনুমানিক ৪০ হাজার ছিল । ভারত সরকারের অনুরোধে পরবর্তীতে এদের প্রায় ২০ হাজার ফেরৎ আসে । পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগী মুসলমানের সংখ্যা এত কম হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো কাজ করেছে, সেগুলো হলো :
১.ভারত সরকারের সার্বিক ধর্ম নিরপেক্ষ কাঠামো ধরে রাখা ।
২.পশ্চিমবাংলার মুসলমানদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ।
৩. পূর্ব বাংলার সামাজিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলার মুসলমানদের মানিয়ে নিতে না পারা ।
৪. সেই সময়ে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতির অভাব ।

একতরফা সাম্প্রদায়িক বাঙালি হিন্দু নিধনযজ্ঞে, পূর্ববঙ্গে সংখ্যালঘুর টেঁকা দায় হবে, এটাই স্বাভাবিক ছিল, আর হয়েও ছিল তাই । বাংলা ভাগের সময় পূর্ববঙ্গে ১.২০ কোটি সংখ্যালঘু হিন্দু জিম্মি ছিল । পূর্ববঙ্গের বাঙালি মুসলমান দ্বিজাতিতত্ত্বকে ১০০% আঁকড়ে ধরে এদের যেন তেন প্রকারে নির্মূল করতে, ভূমিহীন করতে, উঠে পরে লেগেছিল ! ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গ থেকে ৬০-৭০ লক্ষ সংখ্যালঘু হিন্দু বিতাড়িত করা হয়েছে । অগণিত সংখ্যালঘু হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে, মাত্রাহীন হিন্দু নারী ধর্ষিতা হয়েছে এবং পরিশেষে অগুনতি জীবন বাঁচাতে ধর্মান্তরিত হয়েছে । ১৯৪৭ থেকে প্রথম ১০ বছরে ৪১.১৭ সংখ্যালঘু হিন্দু নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়। সুপরিকল্পিত উপায়ে সংখ্যালঘু হিন্দুকে নিঃশ্চিন্হ করতে যা যা করা দরকার সকল প্রক্রিয়া রাষ্ঠ্রের মদতে হয়েছে যেমন, লুট,ধর্ষণ,ডাকাতি, মিথ্যে মামলা, চাকরি ক্ষেত্রে অযথা হেনস্থা, বঞ্চনা ইত্যাদি । এমনকি '৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পরেও আজও পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলেই আসছে ! বাঙালি হিন্দুই তাই বঙ্গভঙ্গের একতরফা উদ্বাস্তু, আর এর প্রধান কারণগুলো হলো :
১.দ্বিজাতিতত্ত্ব নামক ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগকে পূর্ববঙ্গের মুসলমান ১০০% প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়েছিল।
২.ইসলামী নিয়ম মেনে ভূখণ্ডকে অমুসলিমহীন করা ।
৩.পশ্চিমবাংলার সেকুলাঙ্গারদের না না অছিলায় এই জঘন্য নীতিকে ডিফেন্ড করা ।
৪.পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের বেক্তি স্বার্থের জন্য ঐক্যের অভাব ।

কথাগুলো রূঢ় জানি, আর এও জানি যে, অনেকেই পড়ে মনে মনে গাল দেন। দিন, আপত্তি নেই, তবু যদি আপনাদের সম্বিৎ ফেরে.....

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted