ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক শামসুল আলমের বিরুদ্ধে তার মাদ্রাসায় পাহাড়ী শিশুদের এনে ধর্মান্তরিত করছে।

সেদিন লিখেছিলাম কি করে পাকিস্তানে জোরপূর্বক অমুসলিমদের মুসলিম করা হয়। আজকে বাংলাদেশের পাহাড়ী আদিবাসীদের কি করে জোরপূর্বক ও প্রতারণা করে মাদ্রাসা ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মুসলমান বানান তা কিছুটা বলি।
দুর্গম পাহাড়ে মাদ্রাসার এজেন্টরা কখনো মিশনারী স্কুলে ভর্তির কথা বলে কখনো উন্নত জীবনের কথা বলে পাহাড়ী শিশুদের নিয়ে এসে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়। সেখানে তাদের ধর্মান্তরিত করে মুসলমান করা হয় এবং জঙ্গি ওরফে জিহাদের টেনিং দেয়া হয়। কালের কন্ঠে ২০১৩ সালের রিপোর্টে বিস্তারিত এভাবে লেখা হয়েছিল -

"মিশনারি স্কুলে ভালো খাবারদাবার আর উন্নতমানের শিক্ষার কথা বলে দুর্গম পাহাড়ের কোল থেকে ওদের নিয়ে আসা হয় ঢাকা শহরের বিভিন্ন মাদ্রাসায়। এরপর ওই শিশুদের অভিজ্ঞতা হয় ভয়ংকর। ধর্মান্তরিত করে শেখানো হতে থাকে জঙ্গিবাদ। রাঙামাটির বিলাইছড়ির আদিবাসী শিশু রবিন ত্রিপুরা (১১) বাংলায় বলল, 'মাদ্রাসার হুজুররা আমাদের আরবি পড়াতেন। আর শেখাতেন আমেরিকা খুব খারাপ। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে হবে। সব ইসলামের শত্রুদের ধ্বংস করতে হবে। এর পুরস্কার পাওয়া যাবে বেহেশতে।' রবিন জানায়, মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার কথা বলে রাঙামাটির বিলাইছড়ি থেকে তাদের ঢাকায় এনে মাদ্রাসার শিক্ষকরা আটকে রেখেছিলেন। তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয়। নতুন নাম দেওয়া হয় শামসুল ইসলাম। তার ছোট ভাই হামজানা ত্রিপুরাকেও (৮) ধর্মান্তরিত করা হয়। তার নাম দেওয়া হয় সুমন। চমকে ওঠার মতো এ রকম আরো তথ্য মিলেছে সম্প্রতি মিরপুর ও মোহাম্মদপুর তিনটি মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করা ২১টি আদিবাসী শিশুর কাছ থেকে। এই শিশুদের বয়স পাঁচ থেকে ১২ বছর। উদ্ধারের পর রাজধানীর সুবজবাগ থানার পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় এসব শিশু কালের কণ্ঠকে জানায়, তাদের মা-বাবা গরিব, নিরক্ষর। পাহাড়ে জুম চাষ (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ চাষাবাদ) তাদের পেশা। মা-বাবাকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ঢাকায় এনে মাদ্রাসাগুলোতে আটক রাখা হয়েছিল। কথার অবাধ্য হলেই চলত শারীরিক নির্যাতন। রাঙামাটির বিলাইছড়ির সংরাছড়ির বালেশ্বরী গ্রামের আরেক শিশু সারথি ত্রিপুরা (৯) কালের কণ্ঠকে জানায়, সে যখন আরো ছোট তখন তার বাবা আনন্দ ত্রিপুরা মারা যান। সংসারে খুব অভাব। মা রাঙামাটির ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে তিন বেলা খাবার চেয়ে আনতেন। পরে মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাকে ঢাকায় এনে ধর্মান্তরিত করেন। নাম রাখা হয় মতিয়ার রহমান। সারথি ত্রিপুরা বলল, 'হুজুররা বলতেন, তোমরা সবাই ইসলামের সৈনিক। তাই তোমাদের ইসলামের শত্রুদের কতল করতে হবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা কাফের, মোনাফেক। সে ইসলামের শত্রু। তাঁরা স্লোগান শেখাতেন ওবামার চামড়া, তুলে নেব আমরা। আমেরিকার আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও। বিশ্ব নবীর অপমান মানব না, মানব না।' রোহিত (১১) নামের আরেক শিশু বলল, 'দুই বছর আগে আমাকে মুসলমান বানানো হয়। হুজুররা বলতেন, যারাই ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের হত্যা করতে হবে। প্রয়োজনে শহীদ হতে হবে।' হুজুরদের এ রকম নিগড় থেকে পালিয়ে মা-বাবার কাছে ফিরতে সক্ষম হয় কয়েকটি শিশু। তাদের এক শিশু কর্ণজয় ত্রিপুরা বলল, 'পাহাড়ি মাটিতে আমার জন্ম। আমি সেখানেই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ঢাকায় এনে ধর্মান্তরিত করে মিরপুরের ১৬ নম্বর আকবর কমপ্লেক্স মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। শেখানো হয় ইসলাম ধর্ম ভালো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। ইসলামের শত্রুরা কাফের। ওদের খতম করতে হবে। প্রয়োজনে মেরে ফেলতে হবে। আমেরিকানরা ইসলামের শত্রু। ওবামার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে হবে। অস্ত্র দিয়ে ওদের মোকাবিলা করতে হবে। আফগানিস্তানে যেতে হবে।' পুলিশ এমন ২১ আদিবাসী শিশুকে গত শনিবার সবুজবাগের আবুজর গিফারি মাদ্রাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্স এবং দাওয়া বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার করে। পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং আদিবাসী ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সহায়তায় তাদের ফেরত পাঠানো হয় গ্রামের বাড়িতে।"
[কালের কন্ঠ, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩]

ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক শামসুল আলমের বিরুদ্ধে তার মাদ্রাসায় পাহাড়ী শিশুদের এনে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ উঠে কারণ তার মাদ্রাসা থেকেই আদিবাসী শিশুদের একটি চালান আটক করা হয়। এরকম নিউজ এপর্যন্ত অনেক গুলো ছাপা হলেও এর বাইরে পাহাড়ের নিরবে ইসলামীকরণের বিজ ঢালা হচ্ছে মাদ্রাসা মসজিদ ও তাবলীগের মাধ্যমে। দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি ট্রেনিং ও আস্তানার কথা তো প্রায়শই শোনা যায় অথচ পাহাড়ে আছে সেনা ক্যাম্প! পাকিস্তানে ধর্মান্তর কার্যক্রম দেরিতে হলেও আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রচার পেলেও বাংলাদেশের পাহাড়ের কান্না চার দেয়ালের মাঝখানেই বন্দি হয়ে আছে!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted