কেন যোগনমন্ডল ভারতে পালিয়ে এসে সেই হিন্দু বড়বাবুদের আশ্রয়ে শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন মনে আছে কি?

ভারতীয় বামেরা এখন ”নারায়ে তাকবীর আল্লাহ আকবর” ধ্বনি দিবে! আব্বাস সিদ্দিক ভাইজানের শ্লোগান ওটাই। ফুরফুরা শরীফের ওরসে ওটা বলেই হুজুর বয়ান শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গে জয় শ্রীরাম ঠেকাতে আল্লাহ আকবর আকাশ কাঁপাবে। বামপন্থি হুজুরদের লজিক্যাল ফ্যালাসী বাজারে কি এখনো আসেনি? আব্বাস ভাইজানের পার্টির নাম কিন্তু ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার পার্টি’! মানে বামেরা কোন ধর্মীয় পার্র্টির সঙ্গে জোট করেনি! এই ফ্যালাসি ছাড়া আর কোন পথ আছে? ইন্দ্রনীল ঘোষকে যারা থুতু ছিটিয়েছেন এখন সেটা চেটে নিন। তবে যারা জয় শ্রীরাম ও আল্লাহ আকবর দুটোকেই রাজনীতি থেকে বিনাশ চান তারা থুতু দিতে থাকুন অবিরাম। পশ্চিমবঙ্গে আরেক মুসলিম লীগের জন্ম দিতে যাচ্ছে বাম কংগ্রেস। এতে বাংলায় হিন্দুত্ববাদীদের সাময়িক লাভ হবে ঠিকই। কিন্তু আখেরে বাংলা ধর্মীয়ভাবে অদৃশ্য এক ভাঙ্গনের শিকার হলো।

কথা যখন উঠল আরো দুটো কথা বলি। আব্বাস ভাইজান আর হায়দ্রাবাদের আসাদ ভাইজান দুজনের কেউই কিন্তু কোন ইসলামিক পার্টি খুলেননি। সেদিন কোলকাতার এক বামপন্থি তেজি যুবক আমাকে সেটা মনে করিয়ে দিল। এমনকি এই দুজনের পার্টি ভারতের দলিত হিন্দুদের অধিকারের শর্ত আরোপ করে পার্টির গঠনতন্ত্র করেছে। যোগেন মন্ডল দলিতদের নেতা হিসেবে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলেন কারণ তিনি ব্রাহ্মণ হিন্দুদের অধিনে থাকার চেয়ে মুসলমানদের অধিনে থাকা তার সম্প্রদায়ের জন্য মঙ্গলজনক বলেছিলেন। মুসলিম লীগ আদমজিতে সেই দলিত তফসিলি সম্প্রদায়কে দিনদুপুরে মিথ্যা ধর্মীয় অভিযোগ তুলে কচুকাটা করেছিলো। আর যোগনমন্ডল ভারতে পালিয়ে এসে সেই হিন্দু বড়বাবুদের আশ্রয়ে শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আহমদ ছফা পশ্চিমবঙ্গকে পরাধীন বলতেন। তাদের উচিত ভারত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য স্বাধীনতার আন্দোলন করা। তারা সেটা করলে ছফা তাদেরকে ৭১-এ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিলেন সেভাবেই সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন আব্বাস ভাইজনারা আরো কয়েকটা দশক পর সেরকম ডাক দিলে স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুরা তার বিরোধীতা করবে। আর বাংলাদেশের ‘অসাম্প্রদায়িক মুসলমানরা’ আব্বাস ভাইজানদের সুযোগ করে দিবে। অর্থ্যাৎ আবার ৪৭! ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে। কি একদমই আজগুবি মনে হচ্ছে? তাহলে বলুন তো পুরো ভারতবর্ষ কেন শুধুমাত্র মুসলিম পরিচয়ে বিভক্ত হলো? ভারত এমন একটা দেশ যেখানে সব জায়গায় হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তাহলে শুধুমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো কেন আলাদা হয়ে গেলো? শুধু কাশ্মিক একা কেন বিশেষ মর্যাদা পেলো?

পুরোনো ইতিহাস আরেকবার একটু মনে করিয়ে দেই। তুরস্ক থেকে শ্রমিক হিসেবে যেসব মুসলিমরা বেলজিয়ামে এসেছিলো সেসব মুসলিমরা যখন সংখ্যায় একটা কমিউনিটি আকার ধারণ করল তখন সেখানে তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বামেরা সোচ্চার হলো। বেলজিয়ামের প্রগতিশীল সমাজে মাদ্রাসা ইসলামিক সেন্টার মসজিদসহ মুসলিমদের সব রকম গোঁড়ামী যেগুলো মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় অধিকার বলে দাবী করে সেগুলোকে বেলজিয়ামের বামপন্থিরা সমর্থন করল এবং সেগুলো করে দেয়ার আশ্বাসে ভোটব্যাংক তৈরি করল। বেলজিয়ামে মুসলিমদের মধ্যযুগীয় চিন্তাধারার একটা কমিউনিটি তাই গড়ে উঠল। সেই কমিউনিটি এখন নিজেই তাদের জন্য ইসলামিক পার্টি করেছে এবং স্থানীয় পৌরসভায় একটি সিট বাগিয়ে নিয়েছে। বেলজিয়ামের মুসলিম কমিউনিটির নেতারা দাবী করেছেন, ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেলজিয়াম হবে ইউরোপের প্রথম মুসলিম দেশ!

বামেরা এইভাবে মারা খেলে আমার ব্যক্তিগত কোন আনন্দ উল্লাসের অনুভূতি হয় না। কারণ আখেরে এইসব ভুলের কারণে সেক্যুলার রাষ্ট্র সমাজের সর্বনাশের কারণ হয়। বামদের ঐতিহাসিক ভুলগুলো থেকে তাদের কোন শিক্ষা নেই। ফলে ভারতের সেক্যুলার, লিবারাল ও বামপন্থিদের ‘সেকুমাকু’ বলে যারা ডাকে তাদের কোন দোষ নেই।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted