ইতিহাসের পাতা থেকে
"আজ সেই ইন্দিরাও নেই, সেই অটলও নেই !"
“ভারত যদি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো বন্ধ না করে, তাহলে আমেরিকা চুপ করে বসে থাকতে পারেনা। ভারতকে শিক্ষা দিতে বাধ্য হবে।”
....... রিচার্ড নিক্সন।
“আমেরিকাকে ভারত বন্ধু মনে করে, বস্ নয় ! ভারত তার ভাগ্য নিজেই লিখতে জানে ! আমরা জানি কাকে কিভাবে জবাব দিতে হয় !"
........ ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৭১ এর নভেম্বরে হোয়াইট হাউসে বসে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের চোখে চোখ রেখে ঠিক এই কথাগুলিই বলে এসেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী।
তথ্যসুত্রঃ তৎকালীন মার্কিন এশিয়া বিষয়ক সচিব হেনরী কিসেন্ঞ্জারের আত্মজীবনী।
সেদিনের ভারত মার্কিন যৌথ সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে, নিক্সনের সামনে থেকে গটগট করে উঠে চলে এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
হেনরী কিসেন্ঞ্জার তাঁকে গাড়িতে ওঠার সময়ে বলেছিলেন, “ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার ! প্রেসিডেন্ট স্যারের প্রতি আরেকটু ধৈর্য্য দেখালে বোধ হয় ভালো করতেন !"
উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে বলেছিলেন - "থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার সেক্রেটারি ফর ইওর ভ্যালুয়েবল সাজেশন ! বিইং এ ডেভলপিং কান্ট্রি উই হ্যাভ ব্যাকবোন এনাফ টু ফাইট দা এ্যাট্রসিটিস !
উই শ্যাল প্রুভ দ্যাট ডেজ আর গন টু রুল এনি নেশন ফার ফ্রম থাউজেন্ডস অফ মাইলস!!"
এরপর......
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের চাকা পালামের রানওয়ে ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীমতী গান্ধীর জরুরি তলব পেয়ে বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। এক ঘন্টার রূদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বেরিয়ে গেলেন বাজপেয়ী।
জানা গেলো রাষ্ট্রসংঘে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী।
বিবিসি’র সাংবাদিক ডোনাল্ড পল জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাজপেয়ীকে, “আপনাকে ইন্দিরার কট্টর সমালোচক বলেই সবাই জানে!! তার পরেও আপনি সরকারের হয়ে রাষ্ট্রসংঘে গলাফাটাচ্ছেন?”
অটলবিহারী_বাজপেয়ী বলেছিলেন - "একটা বাগানে গোলাপও থাকে, লিলিও থাকে। প্রত্যেকেই ভাবে সেই সবচেয়ে সুন্দর! বাগান যখন সঙ্কটে পড়ে, তখন সবচেয়ে সুন্দর কিন্তু বাগানটাই।
আমি আজ বাগান বাঁচাতে এসেছি। এটার নামই ভারতীয় গণতন্ত্র!!
বাকি ইতিহাস আমরা সকলেই জানি।
পাকিস্তানে ২৭০ টা প্যাটন ট্যাঙ্ক পাঠানোর আগে আমেরিকা সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমকে ডেকে ডেমনস্ট্রেট করে দেখালো, এই ট্যাঙ্ক এমনই প্রযুক্তিতে তৈরি যাকে কখনোই কেউ ধ্বংস করতে পারবেনা। উদ্দেশ্য ছিলো এটাই, যাতে সারা পৃথিবীর কোনও দেশই ভয়ে ভারতকে সাহায্য করতে না এগোয়।
শুধু এখানেই আমেরিকা থামলোনা। ভারতে তেল সরবরাহ করা একমাত্র মার্কিনী কোম্পানি ‘বার্মা শেল’ কে জানিয়ে দিলো, তারা যেন ভারতে তেল সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করে।
এরপরের ইতিহাস শুধুই লড়াই আর লড়াই। ইন্দিরা গান্ধীর তীক্ষ্ণ কূটনীতিক দৌত্যে ইউক্রেইন্ থেকে তেল আনিয়ে চললো আমাদের জান কবুল করা লড়াই।
একদিনের মধ্যে ২৭০ টা প্যাটন ট্যাঙ্ককে ধ্বংস করে তাদের তুলে নিয়ে ভারতের মধ্যে চলে এলাম আমরা। রাজস্থান মরুভূমির তপ্ত বালিতে মুখ রগড়ে দিয়েছিলাম মার্কিনী অহঙ্কারের।
১৮ দিনের যুদ্ধের শেষে ফলাফল--
১ লক্ষ পাকিস্তান সৈন্য ভারতের হাতে বন্দী লাহোর জেল থেকে মুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান। ভারতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি।
অটলবিহারী বাজপেয়ী সংসদে ইন্দিরা গান্ধীকে মা দুর্গা বলে সম্বোধন করলেন।
লেখক : হরপ্রসাদ রায়।
এই লেখাটা প্রত্যেকের পড়া উচিত।
ইতিহাস টা জানা উচিত। ইতিহাস জানলে মানুষ বিভ্রান্ত কম হয়।দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রকে কতটা শক্তিশালী হতে হয় তার একটা উদাহরণ এটা।আমার আইডি লক।
প্রয়োজন এ কপি পেস্ট করতে পারেন।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................