আজ থেকে ১০০ বছর আগে যশোরে কংগ্রেস অফিসের জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাগান বাড়ি কেনা হয়েছিল। বর্তমান যেখানে যশোর হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ, সেখানে ছিল ওই কংগ্রেস অফিস। তবে এখন যে আদলে ভবন রয়েছে, আগে ওই রকম ছিল না। সেখানে কয়েকটি বড় বড় আম গাছ ছিল।
কবিরাজ বিমলানন্দ তর্কতীর্থের সহায়তায় যশোরে নিজস্ব কংগ্রেস ভবন প্রতিষ্ঠা বিপ্লবী বিজয়কৃষ্ণ রায়ের এক অনন্যসাধারণ কীর্তি। বিজয়কৃষ্ণের প্রস্তাব ও চেষ্টায় বিমলানন্দ বাবু যশোর থেকে আইন সভার(লেজিসলেটিভ এসেম্বলি) প্রার্থীরুপে দাঁড়াতে সম্মত হন। নির্বাচনে জয়ী হবার পর তিনি যশোর কংগ্রেসকে নগদ ৫ হাজার টাকা দান করেন। মুলত এই টাকায় ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর কংগ্রেস কর্তৃপক্ষ উপেশচন্দ্র ঘোষ(ছাট) এর কন্যা শরৎ কুমারীর কাছ থেকে বিস্তৃত বাগানসহ একটি বাড়ি কেনেন। সেই ভবনটি জেলা কংগ্রেসের দফতর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান ঘাঁটি হয়ে দাঁড়ায়। টাকা বিমলানন্দ বাবু দিলেও মুলত অফিস কেনার কথা মাথায় আসে বিজয়কৃষ্ণ রায়ের।
বিজয়কৃষ্ণ রায় এতো বড় মাপের নেতা ছিলেন যে কলকাতায় তাঁর শবযাত্রায় সুভাষ চন্দ্র বসুসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নিয়ে ছিলেন। বিজয়কৃষ্ণ রায়ের বাড়ি ছিল যশোরের নড়াইল মহকুমার আউড়িয়া গ্রামে। যৌবনেই বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেফতার হয়ে খুলনা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রমাণাভাবে মুক্তি পান। তিনি বাঘা যতীনের একজন বিশিষ্ট সহবিপ্লব ছিলেন। তাঁর কলকাতার বহুবাজার ষ্ট্রিটস্থ ‘আয়ূর্বেদ ভান্ডারটি’ ছিল বিপ্লবীদের গোপন কেন্দ্র। বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ব্যাপারে যুক্ত থাকার দায়ে ‘হ্যারি এন্ড সন্স’ খ্যাত হরিকুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিন আইনে বন্দি হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ছাড়া পেয়ে কংগ্রেসে যোগদেন। যশোর জেলায় কংগ্রেসকে শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে কলকাতায় এই বিশিষ্ট বিপ্লবীর জীবনাবসান হয়। তাঁর শবযাত্রায় সুভাষ চন্দ্র বসু, হেমন্ত বসু, ভূপতি মজুমদারসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও অনুগামী যোগ দেন।
লেখা ও ছবি- সাজেদ রহমান আঙ্কেল
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................