ইমরান খান ভুল বলেছেন কি?
ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলায় হানাফী মাযহাবের আদর্শকে ধারণ করে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় - দারুল উলুম দেওবন্দ। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ সালে। এরপর দেওবন্দ আন্দোলন নামে ইসলামিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চালু হয় দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকেই। অবশ্য দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময়েই মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতুবি, ইয়াকুব নানুতুবি, রফি উদ্দিন উসমানী, যুলফিকার আলী, ফজলুর রহমান উসমানি, হাজী আবেদ হোসেন ইসলামিক জাতীয়তাবাদী চেতনার গোড়াপত্তন করেছিলেন।
মুসলিম সমাজের জনসাধারণের মধ্যে ইসলামিক চেতনা, ইসলামিক আবেগ-অনুভূতি টিকিয়ে রাখা, ক্ষমতাবানদের ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল করা এসব কিছুই ছিল দারুল উলুম দেওবন্দের ‘দেওবন্দ আন্দোলনের’ এজেন্ডা। সে সময়ে ইংরেজদের হাত ধরে মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষার বিকাশ ঘটে বটে, কিন্তু অল্পসংখ্যক বাদে এই আধুনিক শিক্ষিতরা মনন ও মানসে মোটেই আধুনিক হতে পারেনি। এই শিক্ষিত মুসলিমরা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে আবার মাদ্রাসার হুজুরদের কাছ থেকে ইসলাম শিখে নিত। ওদেরকেই আমি নাম দিয়েছি মাদ্রাসামনস্ক। ওরা নিজেরা আকাম কুকাম করে দোয়া করানোর জন্য, মরার পরে জানাজা পড়ানোর জন্য এবং বেহেশত নসিব করানোর জন্য ও নিজেদের চরিত্রকে জনসম্মুখে পরিষ্কার রাখার জন্য মাদ্রাসা তৈরি করতে লাগল। এই আধুনিক শিক্ষিত মুসলমানেরা নিজেদের সন্তানদের কিন্তু মাদ্রাসায় পাঠায়নি। সাধারণভাবে গরিবদের সন্তানদেরই তাঁরা মাদ্রাসায় পাঠাত। শহরে চাকরি করে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নিজের টাকার ফুটানি দেখানোর জন্য, নিজের দাপট বাড়ানোর জন্য, জনসাধারণকে একত্র করে ধর্মীয় বাণী শুনিয়ে জনসাধারণের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য এই লোকগুলো গ্রামে বানিয়েছিল মাদ্রাসা এবং মসজিদ। ইংরেজ সরকার আধুনিক শিক্ষিত এই মুসলিমদের প্রমোট করত, সম্মানজনক বিভিন্ন পদ-পদবি দান করত।
মুসলিম সমাজের জনসাধারণের মধ্যে ইসলামিক চেতনা, ইসলামিক আবেগ-অনুভূতি টিকিয়ে রাখা, ক্ষমতাবানদের ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল করা এসব কিছুই ছিল দারুল উলুম দেওবন্দের ‘দেওবন্দ আন্দোলনের’ এজেন্ডা। সে সময়ে ইংরেজদের হাত ধরে মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষার বিকাশ ঘটে বটে, কিন্তু অল্পসংখ্যক বাদে এই আধুনিক শিক্ষিতরা মনন ও মানসে মোটেই আধুনিক হতে পারেনি। এই শিক্ষিত মুসলিমরা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে আবার মাদ্রাসার হুজুরদের কাছ থেকে ইসলাম শিখে নিত। ওদেরকেই আমি নাম দিয়েছি মাদ্রাসামনস্ক। ওরা নিজেরা আকাম কুকাম করে দোয়া করানোর জন্য, মরার পরে জানাজা পড়ানোর জন্য এবং বেহেশত নসিব করানোর জন্য ও নিজেদের চরিত্রকে জনসম্মুখে পরিষ্কার রাখার জন্য মাদ্রাসা তৈরি করতে লাগল। এই আধুনিক শিক্ষিত মুসলমানেরা নিজেদের সন্তানদের কিন্তু মাদ্রাসায় পাঠায়নি। সাধারণভাবে গরিবদের সন্তানদেরই তাঁরা মাদ্রাসায় পাঠাত। শহরে চাকরি করে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নিজের টাকার ফুটানি দেখানোর জন্য, নিজের দাপট বাড়ানোর জন্য, জনসাধারণকে একত্র করে ধর্মীয় বাণী শুনিয়ে জনসাধারণের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য এই লোকগুলো গ্রামে বানিয়েছিল মাদ্রাসা এবং মসজিদ। ইংরেজ সরকার আধুনিক শিক্ষিত এই মুসলিমদের প্রমোট করত, সম্মানজনক বিভিন্ন পদ-পদবি দান করত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন ইংল্যান্ড দুর্বল হয়ে পড়ল, ভারত ছেড়ে যাবে মনে হতে লাগলো সে সময়ে এই আধুনিক শিক্ষিত মুসলিমরা তৎপর হয়ে উঠল। ক্ষমতার লোভ তাদের মধ্যে প্রকট হলো। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে হাতের কাছে ব্যবহার করার জন্য বা খরচ করার জন্য পেয়ে গেল তাদেরই নিজেদের হাতে গড়া দেওবন্দি হুজুরদের।
ওই শিক্ষিত মুসলিম সমাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং কবি ইকবাল। এ দু'জনই পাশ্চাত্যের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। পাশ্চাত্যের দর্শন ওদের ঠোঁটস্থ। বোম্বে হাইকোর্টের Highest-paid ব্যারিস্টার ছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আর ইকবাল ছিল দারুণ মেধাবী একজন মানুষ। ইসলামের প্রতি, কোরআনের প্রতি, মাদ্রাসার প্রতি এবং মক্কার প্রতি এ দুজনেরই ছিল অপরিসীম প্রেম। কিন্তু এ দু'জনের কেউই নিজেদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়ায়নি। এ দু'জনের একজন রাজনীতিবিদ, আর অন্যজন বুদ্ধিজীবী। ব্রিটিশরা এ দুজনের কাউকে মৌলবাদী মনে করত না, কিন্তু পুরো ভারতজুড়ে তখন দাঙ্গা সৃষ্টি করার জন্য এ দু'জন ইসলাম-প্রেমিকই প্রধানত দায়ী। একজন বুদ্ধিজীবী - বসে বসে বুদ্ধি উৎপাদন করত এবং সেসব বুদ্ধি জিন্নাহর কানে দেয়া হতো, আর রাজনীতিবিদ জিন্নাহ সেই বুদ্ধি দিয়ে দেওবন্দি হুজুরদের উস্কানি দিত। হুজুররা উস্কানি পাওয়ার এবং উস্কানি গ্রহণ করার শিক্ষাই মাদ্রাসায় পেয়ে থাকে। দেওবন্দের আদর্শটা ওটাই।যখনই তাদেরকে উস্কানি দেয়া হবে তখনই তাঁরা রাস্তায় নেমে তাণ্ডব চালাবে, নিজের জীবন নষ্ট করবে ,জনসাধারণের সম্পদ এবং জীবন নষ্ট করবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলিমরা তাদের ইসলামিক অনুভূতি নিয়ে পাকিস্তানে চলে গেল, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসা ভারতেই রয়ে গেল। দেওবন্দ মাদ্রাসা ভারতের মুসলিম তো বটেই, হিন্দুদের মধ্যেও ইসলামিক অনুভূতি পয়দা করলো। দেওবন্দ মাদ্রাসায় এবং দেওবন্দী ধারার মাদ্রাসাগুলোতে পড়াশোনা করা হুজুররা ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ইসলামের পক্ষের। উল্লেখ্য, তালেবানসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবগুলি জিহাদি দলই দেওবন্দী।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জিন্নাহরই আদর্শের উত্তরসূরি। আর ইকবালের উত্তরসূরিরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোত, ভারতের বুদ্ধিব্যাংক সমূহে আর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক দলে জড়ো হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তালেবানদের সাধারণ নাগরিক বলেছেন, কিন্তু ভারতে যারা দেওবন্দ মাদ্রাসার রক্ষক তাঁরা তো তালেবানকে মুক্তি সংগ্রামী বলে!
আমার মনে হয় ইমরান খান ভুল বলেননি, কারণ ভারতীয়রা এবং পশ্চিমারা যাদেরকে সাধারণ মুসলিম বলে আর যাদেরকে উগ্রবাদী মুসলিম বলে তাদের উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ঠিক যেমন তালেবানের চিন্তায় আর ইমরান খানের চিন্তায় কোন পার্থক্য নেই। আর যদি পার্থক্য খোঁজেন তাহলে তো তালেবানের সাথে আল-কায়েদার পার্থক্যও দেখতে পাবেন। তালেবান ভারতীয় দেওবন্দি মতের জিহাদি সংগঠন আর আল-কায়েদা সৌদি আরবের ওহাবী মতাদর্শের জিহাদি সংগঠন।
একজন গডফাদার কাউকে মানুষ খুন করা শেখালো, এরপর অন্যকে খুন করার জন্য তাঁকে টাকা-পয়সাও দিল এবং সেই খুনি ব্যক্তি তার বসের হুকুমে মানুষ খুন করল তবে আপনি খুনির পাশাপাশি তাঁর গডফাদারকেও দোষ দেবেন না কেন? গডফাদারকে আপনি মহান সমাজসেবক বলবেন আর তার পোষ্যকে খুনি বলবেন কেন? ইমরান খানের মতো যারা মাদ্রাসা নির্মাণ করে, হুজুরদের দিয়ে জিহাদ করায়, হুজুরদের জিহাদ করতে বাধ্য করে তাঁরা সাধারণ মুসলিম বা সাধারণ নাগরিক হবে আর তালেবানরা জঙ্গি হবে আমি তা মানতে পারছিনা। আমি পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি দেখে বিরক্ত। মামুনুল হকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা সাংবাদিক পরিচয়ধারী জিহাদী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলে পশ্চিমারা নিন্দা জানায় কিন্তু মামুনুল হককে ধরলে তাঁরা নিন্দা জানায় না, এই বৈষম্য আমার বিরক্ত লাগে!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................