বাঙালি হিন্দুর বাড়ি,গাড়ি এবং নারী
--------------------------------------------------------
পাঠক, একবার ঠান্ডা মাথায় একান্তে ভাবুন: অবিভক্ত ভারতে ইংরেজ শাসনে গান্ধীর একগালে চড় খেয়ে আরেক গাল বাড়িয়ে দেওয়ার নীতি অবলম্বন করলে ভারত স্বাধীন হতো ? আসলে কোনো এক নৃপুংসক, কাণ্ডারির আসনে বসলে যেকোনো বিদ্রোহ বিফলে যেতে বাধ্য ! ১৯৪৬ এর নোয়াখালীতে একতরফা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু নিধনযজ্ঞের সময়েও গান্ধীবুড়োর এই নির্লজ্জ্ব নৃপুংসকতা প্রকাশ পেয়েছে আর তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে মুসলিম লীগ নেতৃত্ব ।
নোয়াখালীর বাঙালি মুসলমানের বর্বরতার হাত থেকে সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য যখন গান্ধীকে আহ্বান জানানো হয় তখন তার উত্তর ছিল : 'নোয়াখালী গিয়ে তার কর্তব্য কি হবে, ঈশ্বর তাকে নির্দেশ দেননি ।' তাই কেবল পীড়িত মানবাত্মার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গান্ধীবুড়ো তার প্রাথমিক দায়িত্ব সেড়েছিলো । দিল্লিতে বসে তার বিবৃতি ছিল :
নোয়াখালীর বাঙালি মুসলমানের বর্বরতার হাত থেকে সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য যখন গান্ধীকে আহ্বান জানানো হয় তখন তার উত্তর ছিল : 'নোয়াখালী গিয়ে তার কর্তব্য কি হবে, ঈশ্বর তাকে নির্দেশ দেননি ।' তাই কেবল পীড়িত মানবাত্মার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গান্ধীবুড়ো তার প্রাথমিক দায়িত্ব সেড়েছিলো । দিল্লিতে বসে তার বিবৃতি ছিল :
"Ever since I have heard the news of Noakhali, indeed ever since the blood bath in Calcutta, I have been wandering what my duty is God shall show me the way ."(Amrita Bazar Patrika-17-10-46) | নোয়াখালীর একতরফা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু নিধনযজ্ঞের প্রতক্ষ্য মদতকারী মুসলিম লীগ এবং সুরাবর্দি প্রশাসন সম্পর্কেও গান্ধী সেদিন মুখ খোলেনি । তার নিজের ভাষ্যে : "২৩ সে অক্টবর দিল্লীতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির যে মিটিং বসবে তার আগে আমি মুখ খুলবো না ।" (The Statesman-20-10-46) |
অর্ধনগ্ন, নৃপুংসক গান্ধী তথা কংগ্রেসের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন অবস্থানের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলো সুরাবর্দির মুসলিম লীগ । কালের কুলাঙ্গার সুরাবর্দী প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা করলো : "নোয়াখালীতে সম্পূর্ণ অরাজকতার কোনো চিণ্হ দেখা যায়নি । কিছু বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে মাত্র ।"{We don't see any sign of complete disturbance. Generally speaking, there are a few houses which have been damaged.} (The Statesman 21-10-46) | ২৪ শে অক্টবর, ১৯৪৬ মুসলিম লীগের বিবৃতে বলা হলো : " নোয়াখালীতে আদৌ এক সম্প্রদায়ের উপর আর এক সম্প্রদায়ের আক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটেনি । কিছু সমাজবিরোধী গন্ডগোল বাঁধাবার চেষ্টা করেছিল মাত্র । ধর্ষণ বা নারীদের উপরে অত্যাচারের কোনো ঘটনাই ঘটেনি । পত্রিকাগুলো এই নিয়ে মিথ্যা হৈ চৈ করছে ।"(Amrita Bazar Patrika 25-10-46 )| জিন্নাহ ঝানু পলিটিশিয়ান, ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত গলা মেলালো : "নোয়াখালী সম্পর্কে খবরের কাগজগুলিতে হা লেখা হয়েছে সেগুলি সবই আষাঢ়ে গল্প ।"(Amrita Bazar Patrika 25-10-46 )| বাংলার ইংরেজ গভর্নর একধাপ এগিয়ে দাবী করলো: 'নোয়াখালীতে দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা সামান্য এবং তা তিন অঙ্ক অতিক্রম করবে না' । এই মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অগ্রজ,শরৎচন্দ্র বসু । তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন : " গভর্নরের এই দাবীর ভিত্তি কি আমি জানি না । কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকায় যে খবর বেরিয়েছে তা থেকে এটা পরিষ্কার, মৃতের সংখ্যা অনেক বেশী, এবং চার অঙ্কের কম
নয় । একমাত্র সুরেন্দ্র কুমার বোসের নারায়ণপুরের কাছারি বাড়িতে একদিনে একই সাথে চারশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ।" (Amrita Bazar Patrika 23-10-46 )| কংগ্রেসের সভাপতি জে. বি. কৃপালানি নোয়াখালী ঘুরে এসে লেখেন : "নোয়াখালী এবং ত্রিপুরার জনউন্মত্ততার কয়েকটি বিশেষ দিক উল্লেখ করা দরকার । ওই উন্মত্ততার সবকিছুই ছিল প্রশিক্ষিত নেতৃত্বের অধীনে ব্যাপকভাবে পরিকল্পিত । রাস্তাঘাট কেটে দেওয়া হয়েছিল, যত্রতত্র বন্দুকের ব্যবহার হয়েছিল এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গুন্ডাদের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল । হাজার হাজার হিন্দুকে বলপ্রয়োগের দ্বারা ধর্মান্তরিত করা হয়েছে । হাজার হাজার হিন্দু নারীকে অপহরণ করা হয়েছে অথবা জোরপূর্বক বিবাহ করা হয়েছে । তাদের পূজাস্থানকে অপবিত্র করা হয়েছে । এমনকি শিশুদের প্রতিও কোনোরকম করুনা দেখানো হয়নি । আর এইরকম পরিস্থিতিতেও স্থানীয় প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় । প্রাদেশিক সরকারও ছিল নিষ্ক্রিয় এবং ভাইসরয় হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেছিলেন ।" (J.B.Kriplani-His life and Thought) | ভাইসরয় অবশ্য অস্বীকার করেই থেমে থাকেন নি ! বাঙালি হিন্দু নারী অপহৃতা হবে, ধর্ষিতা হবে, তার মোতে এটাই স্বাভাবিক কেননা তার মতে :" মুসলমান বাড়ির মেয়েরা হিন্দু বাড়ির মেয়েদের মত এত সুন্দরী নয় ।"(J.B.Kriplani-His life and Thought-'Large scale abduction of Hindu women(by Muslims) was quite natural since Hindu women were more handsome than Muslim women'. )
তাহলে পাঠক, ১৯৪৬ এর নোয়াখালীতে বাঙালি মুসলমানের বাঙালি হিন্দুর বাড়ি,গাড়ি এবং নারী তিনটেই আবশ্যিক দরকার হয়ে পরেছিল ! তাই একতরফা খুন, জখম, লুঠ, হত্যা এবং পরিশেষে নারী অপহরণ এবং ধর্ষণ সেদিনের নোয়াখালীর বাঙালি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য ছিল ! পাঠক আপনারা কিন্তু কিছু পড়েন নি ................!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................