মহরম এবং কারবালার যুদ্ধ : এক ইসলামী মিথ্যাচার
--------------------------------------------------------------------------
হিজরী তৃতীয়ের শেষ দিকে ও চতুর্থ শতক শুরুর দিকে মুসলিম ইতিহাস প্রথম ইমাম তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ খ্রীঃ) দ্বারা লিখিত হয়। ভিন্ন ব্যক্তির শোনা কথার উপর ভিত্তি করে এই লেখা। কেউ কোন ঘটনার সাক্ষী ছিল না। তাবারী তার বইয়ের শুরুতে বলেছেন যে, যে সব অসংগত ঘটনা তিনি বর্ণনা করেছেন তার জন্য তিনি দায়ী নন বরং যারা তাকে বলেছেন তারাই দায়ী। পারসিক পুরোহিতমন্ডলীগণ (Magian) তাকে যে ভাবে উপদেশ দিতেন এবং তার রাজকীয় নিয়োগ-কর্তাদের আদেশ অনুযায়ী তিনি তার বই লিখেছেন।
১৩ খন্ডের ইতিহাস এবং ৩০ খন্ডের কোরানের ব্যাখ্যা তাকে ইমামদের মধে অন্যতম হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। ইসলামের ইতিহাসের পরিচিত ইতিহাসবিসগণের প্রায় সবাই তাবারী-কালীনী পরবর্তী যুগের!
১৬৫ আল-হিজরীতে আব্বাসীয় বংশের খলীফা হারুন-আর-রশীদ যখন ইমাম আহমাদ বিন হানবালকে তার তথ্যের সত্যতা প্রমানের নথি-পত্র দেখাতে বলে, সে পারেনি! ‘কোরান আল্লাহর বাণী না অন্য কিছু’ এই নিয়ে বিতর্কে অংশ গহণ করে তাকে বেতের ঘা পর্যন্ত সহ্য করতে হয়েছিল।
সূত্রের ভিত্তিতে জানা যায় যে ইমাম তাবারী তার পারসীয়ান পরিচয় গোপন করার জন্য নিজ নাম ইবন জরীর বিন রুস্তম ইবন তাবারী (Ibn Jareer bin Rustam Ibn Tabar) থেকে ইবন জরীর বিন ইয়াজিদ তাবারী (Imam Ibn Jareer bin Yazeed Tabari) রেখেছিলেন।
কারবালা যুদ্ধের ঘটনার সম্পূর্ণটাই তাবারীর লেখা। এই লেখা কারবালা যুদ্ধের ২৩৯ বছর পর| শুরু করেছেন,”আবু মুকনিফ বলেছিল” এই ধরনের লেখা দিয়ে:শাহ আব্দুল আজিজ, আল্লামা তামান্না ইমাদি, এবং মওলানা হাবিবুর রহমান খানদালবী এক গবেষণার পর মতামত দেন যে ‘আবু মুকনিফ’ একটা কাল্পনিক চরিত্র। অন্যান্য স্কলারগণ এ প্রসঙ্গে বলেন যে আবু মুকনিফ বলে যদি কেউ রক্ত-মাংসের থেকেও থাকে, তিনি মৃত্যূ বরন করেছিলেন তাবারী জন্মেরও ৫০ বছর আগে। ঘটনা ঘটার প্রায় ২৩৯ বছর পর তাবারী বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন; এর মধ্যবর্তী সময়ে আর কেউ কি এ বিষয়ে জানতেন না ?
শুধু তাবারীর মাধ্যমেই এটা জানা গেল ? মোল্লা দরবান্দী তার ‘আসরার আল-সাহাদাহ’ বইতে লিখেছে যে কারবালার যুদ্ধে উমর ইবন সা’দের বাহিনীতে প্রায় ৬০০,০০০ অশ্বারোহী, ২০ মিলিয়ন পদাতিক বাহিনী একত্রিত হয়েছিল। সেই সময় পুরো আরব এবং ইরাকে কি সত্যি এত লোক বাস করত ? এ ছাড়াও কুফা থেকে ১ মিলিয়ন ৬০০,০০০ অর্থাৎ কুফার সকল জনগন যোগ দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন, কত বড় শহর ছিল কুফা ? এত লোক জড়ো হওয়া এবং ইমাম হুসেনের ৩০০,০০০ হাজার লোক হত্যা করা পুরো ঘটনাটাই কি সন্দেহজনক নয় ?? ইবনে জযির মতে শত্রুপক্ষের মোট সৈন্য সংখ্যা ৬ হাজার, সৈয়দ বিন তুসির মতে ২০ হাজার, আবি ফারাস মতে ৫০ হাজার, আর আবি নাহাফ আজওয়ির মতে ৮০ হাজার। অন্যদিকে, ইমাম হুসেনের বাহিনী: আবি ফারাসির মতে ১ হাজার, শেইখ মুফীদের মতে ৭২ জন (৩২ জন অশ্বারোহী এবং ৪০ জন পদাতিক সৈন্য), ইমাম বাকীর বলেন ১৪৫ জন। মিথ্যে না কি নির্লজ্জ বানোয়াট ?
কারবালার যুদ্ধ এমন অসম্ভব ও অবাস্তবপূর্ণ বর্ণনা যে, পুরো ঘটনাটাই প্রশ্নের মুখে। সময়ের হিসাব করা যাক:
৬৮০ খ্রীঃ উল্লেখিত কারবালার ঘটনা সংঘটিত (??)
৭০০ খ্রীঃ ইমাম হুসেনের পুত্র ইমাম যয়নুল আবেদিন দু’টো বই লেখে (মুনাজাত-ই-যয়নুল আবেদিন ও সহীফা সাজ্জাদিয়া) যাতে কারবালার ঘটনার কোন উল্লেখ নেই; বরং ইয়াজিদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইয়াজিদ ছিলেন দ্বিতীয় বনি উমায়াদ খলীফা, যিনি সুরা কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় এবং সিরিয়া, ইসরাঈল, ইরাক, মক্কা, মদীনা, মিশর, ইয়েমেন, ইরান এবং অন্যান্য কাছের অংশে যেখানে উট দ্বারা যাওয়া-আসা সম্বম্ভ সেখানে তাকে খলীফা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়।
৭৫৮ খ্রীঃ ইমাম মালিকের বই ‘মুওয়াত্তা’ লেখে, তাতে কারবালার কোন উল্লেখ নেই
৮৬০ খ্রীঃ হাদিস বইগুলো লেখা শুরু হয়, সেখানেও কারবালার ঘটনা নেই
৯০০ খ্রীঃ ইমাম তাবারী কারবালার যুদ্ধের বর্ণনা করে, তবে তার লেখার পক্ষে কোন প্রমাণ বা নথি-পত্র নেই।
৯১০ খ্রীঃ এরপর থেকে আজ পর্যন্ত নিত্য-নতুন ঘটনা জুড়ে এটি সমাজে আশুরা হিসেব প্রতিষ্ঠা পেয়ে পালন হয়ে আসছে।
তাহলে, কারবালার ঘটনা কি সত্যিই ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্নটা স্বাভাবিক নয় কি ?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................