চীন বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য কেনে না। কিন্তু চাইনিজ পণ্যে বাংলাদেশের বাজার ছয়লাব।

চীন বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য কেনে না। কিন্তু চাইনিজ পণ্যে বাংলাদেশের বাজার ছয়লাব। চাইনিজ পণ্যের কারণে দেশীয় পণ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হলেও দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের কখনোই চীনের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ ‌আওড়াতে দেখা যায় না। বাংলাদেশকে ‘করদ রাজ্য’ করতে চীন তার বাজার দিয়ে বাংলাদেশ দখল করছে এমন অর্থনীতিবিদের দেখাও আমরা পাইনি। কেন? ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু ভারতে বিপুল পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে। অবৈধ পথে তারচেয়ে বেশি পরিমাণে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি হলেই সেখানে ‘দেশ বিক্রির’ দাসখত লেখা ছিলো কিনা সেটি নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের সন্দেহ শংকা দেখা গেলেও চীনের সঙ্গে এক সফরেই দেড়শোর উপর চুক্তি করা হলেও কেউ সেই চুক্তিতে কি লেখা ছিলো জানতেও চাইল না। 


ভারত থেকে তিন গুণ বেশি দামে করোনার টিকা কিনতে হলো চীন থেকে, কই দেশপ্রেমিকদের তো এটা নিয়ে কোন হৈ চৈ শোনা গেলো না। ভারতে মুসলিম নিপীড়নের প্রোপাগন্ডার (এটা ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধী পক্ষ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করায় বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে অতিরঞ্জিত করা হয়) বিপরীতে উইঘুর মুসলিমদের চাইনিজ থেরাপি, মসজিদ গুড়িয়ে বাথরুম বানানো, মুসলিমদের ধরে ধরে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো নিয়ে কেউ শব্দ করে না। যে বামরা ঘুমের ঘোরেও সাম্রাজ্যবাদ সাম্রাজ্যবাদ বলে চেঁচিয়ে উঠে তারা টিনের চশমা পরে চীনের দিকে চেয়ে থাকে। চীন কতগুলো দেশকে দখল করে নিজের বলে দাবী করছে সে বিষয়ে তাদের কোন কথা নেই। তাহলে দেশপ্রেমিকদের এতসব অভিযোগ ভারত বার্মা আমেরিকার বিরুদ্ধে তার পিছনে যৌক্তিক কারণের চেয়ে কুম্ভীরাশ্রেই মুখ্যে?

এটাই সত্যি। ভারত বিরোধীতা মানেই হিন্দু বিরোধীতা। ঐতিহাসিক পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ই মুসলিম লীগের মাধ্যমে যে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছিলো সেই থেকেই ভারত বিরোধীতার পিছনে সত্যিকারের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক কারণ এখানে কাজ করে না, অন্ধ হিন্দু বিরোধীতাই কাজ করে। নইলে চীনের বিরুদ্ধে এখানকার দেশপ্রেমিকদের একই রকম রিএ্যাকশন দেখি না কেন?

বাচ্চাদের প্রশ্ন থাকতে পারে, চীন কমিউনিস্ট তায় অমুসলিম- তাহলে তাদের প্রতি বাংলাদেশ পাকিস্তানের মুসলমানদের এত ভক্তি কেন? সেটার পিছনের কাজ করে ভারতকে ‘টাইট’ করতে উপমহাদেশে ইসলামিক আন্দোলন তথা জঙ্গিবাদকে প্রমোট করতে চীনের সহায়তা। ১৯৭১ সালে চীন ইন্দিরা গান্ধির কাছে হেরে ছিলো। তখন পাকিস্তান ভেঙ্গে গিয়েছিলো। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিলো ইসলামিক চেতনা বাংলাদেশ হওয়ার মা্ধ্যমে দুর্বল হলো। কারণ বাংলাদেশ ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় যুদ্ধে জিতে ছিলো। কিন্তু পরে ধরা পড়ে বাংলাদেশ মূলত আরেকটি ছোট পাকিস্তান হিসেবেই ভাগ হয়েছে মাত্র। তখন চীন আবার বাংলাদেশকে ব্রিজ কালভার্ট করে দিয়ে উন্নয়নের সহযোগী হয়ে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশের চীনের দুতাবাস ঘোরাও না করার কারণ বাংলাদেশের সমস্ত ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের ইসলামিক জঙ্গি দলগুলোর সঙ্গে আদর্শিক ও সাংগঠনিক যোগাযোগ আছে। পাকিস্তান ভারতের ইসলামিক দলগুলো চীন থেকে সহায়তা পায়। যে কারণে দুধ দেয়া গরুর লাথি খেয়েও তারা কিছু বলে না। এই হচ্ছে সংক্ষেপে উপমহাদেশের রাজনীতির হালচাল...।

-সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted