বাংলাদেশ আর্দশগতভাবেই সূর্যসেন-প্রীতিলতাকে স্বীকার করে নিতে পারে না।

বাংলাদেশ আর্দশগতভাবেই সূর্যসেন-প্রীতিলতাকে স্বীকার করে নিতে পারে না। বাংলাদেশের জন্ম ও তার আদর্শ সম্পর্কে লেখক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ তাঁর বইতে স্পষ্ট করে লিখেন, “এক পাকিস্তানের জায়গায় দুই পাকিস্তান হইয়াছে। ভারত সরকার লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমাদের সাহায্য করিয়াছেন।...লাহোর প্রস্তাবে “পাকিস্তান” শব্দটার উল্লেখ নাই, শুধু মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে। তার মানে রাষ্ট্রের নাম পরে জনগণের দ্বারাই নির্ধারিত হওয়ার কথা। পশ্চিমা জনগণ তাদের রাষ্ট্র-নাম রাখিয়াছে “পাকিস্তান”। আমরা পুরবীরা রাখিয়াছি “বাংলাদেশ”। এতে বিভ্রান্তির কোনো কারণ নাই” (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, আবুল মনসুর আহমদ)।


লেখক একদম খোলামেলা বলছেন, পাকিস্তান ভেঙ্গে আরেকটি পাকিস্তানেরই জন্ম হয়েছিলো। এই কথা আমি যখন বলি তখন আমি বিজেপির লোক হয়ে যাই! “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” বলে বিশেষ যে আদর্শ এদেশে একদল বুঝাতে চান তারা সত্যটা বলেন না। তারা সূর্যসেন প্রীতিলতাকে কোথায় এই রাষ্ট্রে মেলাবেন, বা তাদের কিভাবে সংযুক্ত করবেন সেটি এড়িয়ে যান। কিন্তু মুসলিম জাতীয়তাবাদী ও ইসলামিস্ট যারা তারা সহজভাবেই সূর্যসেন-প্রীতিলতাকে বাতিল করে দেন। কারণ “মুসলমানদের দেশে” এই “হিন্দু বিপ্লবীদের” পূর্বসূরী ধরে নিলে বাংলাদেশের জন্ম, পাকিস্তান আন্দোলন সব কিছু উল্টে যায়!

আবুল মনসুর আহমদকে বুঝার জন্য তাঁর সম্পর্কে এটা বলা আবশ্যক যে তিনি ব্রিটিশ ভারতে স্কুল জীবনে কৃষক প্রজা পার্টি থেকে মুসলিম লীগ, সেখান থেকে পাকিস্তান তৈরি হলে আওয়ামী লীগের জন্ম হলে তিনি হলেন প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়ে যে ২৩ দফা উত্থাপন করে সেই ২৩ দফা তিনিই লিখে দিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে লাহারে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের বিখ্যাত যে “৬ দফা” উত্থাপন করেন তাকে ভিত্তি করে পরে যে বই লেখা হয় “আমাদের বাঁচার দাবী ছয় দফা কর্মসূচী” সেটি লিখে দিয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ যা শেখ মুজিবুর রহমান নামে ছাপা হয়েছিলো। কাজেই আবুল মনসুর আহমদকে জামাতী বিএনপি এজেন্ট বলে আবার নতুন প্রজন্ম ঠাউরে না ফেলে।

আবুল মনসুর আহমদের এই বইটি হচ্ছে একটি ইতিহাসের দলিল। এখানেই তিনি লিখেছেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য মুসলমানদের কোন অবদান নেই। তারা তুরস্কের ইসলামিক খেলফাত রক্ষার আন্দোলন করেছে, কখনোই ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এরকম স্বীকারোক্তি দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি যারা নিজেদের “বাঙালী মুসলমান” বলে পরিচয় দেন তারা দিতে পারেননি। উল্টো সব কিছুর জন্য হিন্দুদের পাইকারীভাবে দোষ দিয়েছে, দেশভাগের জন্য জয়া চ্যাটার্জির বই দেখিয়ে বুঝাতে চাইছে দেশভাগ হিন্দুরা করেছে। পাকিস্তান যে তারা হাতে বিড়ি মুখে পান নিয়ে করেছিলো সেটি চেপে যান। যদিও পাকিস্তানের ২৩ বছর “পাকিস্তানের” জন্য তারা যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলো সেকথা পাঞ্জাবী পাঠানদের বারবার মনে করিয়ে দিতো। এখন বাংলাদেশ হওয়ার পর তারা জয়া চ্যাটার্জির বই দেখায়! এই যে ইদানিংকালে ফেইসবুকে নতুন নতুন ইতিহাসবিদের আমদানি হচ্ছে, যারা আবার পিনাকীর মত একটি ধূর্ত ধান্দাবাজ এক্টিভিস্টের বইয়ের সুখ্যাতি করেন, তারা সূর্যসেন-প্রীতিলতা, এদেশে জন্ম নেয়া বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ যারা দেশভাগের পর ভারত চলে গিয়েছিলেন তাদেরকে অস্বীকার করার যে প্রবণতা সেটি একটি পরিস্কার আদর্শের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। এটি সেই আদর্শ যেটিকে ভর করে শেরেবাংলা ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাবে দুটি  মুসলিম স্টেট্র দাবী করেছিলেন। হিসেব খুব পরিস্কার। আমি খুশি যে লোকজন মুখোশ ফেলে দিয়ে এখন প্রকাশ্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রচার করছে। অন্তত ভন্ডামী তো দেখতে হচ্ছে না!

-সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted