১৯৪৬ নোয়াখালী আর একালের ডিরোজিও

১৯৪৬ নোয়াখালী আর একালের ডিরোজিও  
-----------------------------------------------------
সময়ের সাথে সাথে নাকি মানুষ সভ্য হয়েছে, এবং এখনো নাকি হয়েই চলেছে । সভ্যতার বিকাশ ঘটলে তো মানুষের মধ্যে ধর্মীয় জিঘাংসা হ্রাস পাওয়ার কথা । সপ্তম শতাব্দী থেকে নিয়ে ১৯৪৬, ইসলামী ধর্মীয় জিঘাংসা কমলো না কেন, মানব সভ্যতার বিকাশে সাথে সাথে ? কেন সেদিনের নোয়াখালীর বাঙালি মুসলমান তাদের কয়েক জেনারেশন আগের আরবীয় বাপ দাদাদের ধর্মীয় আগ্রাসী জোশে নোয়াখালীর সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুর উপরে পৈশাচিক নির্মমতার খাঁড়া নামিয়ে এনেছিল ? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন পাঠক ? উপমহাদেশে প্রধানত তরবারির জোরে ধর্মীয় বিস্তার ঘটিয়েও আর নতুন করে কি পাওয়ার ছিল রাজনৈতিক ইসলামের ? উত্তর পান নি ? আমি দিচ্ছি উত্তর । ১৯৪৬ এর নোয়াখালীর বাঙালি মুসলমান, সেদিন মেতে উঠেছিল রক্তস্নাত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঈমানী হিংস্র জোশে আর তার মূল্য চুকিয়েছিলো নোয়াখালীর সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু । আগের পর্বে আমরা মুসলিম লীগ, নেহেরু, গান্ধীর নোয়াখালীর হিন্দু নিধনের প্রতিক্রিয়া ছিল ভারতের বিহারের দাঙ্গা, এই মিথ্যাচারের পর্যালোচনা করছিলাম । সেই সূত্র ধরে আপনাদের সামনে না বলা সত্যগুলো তুলে ধরি :
১৯৪৬ এর অগাস্টে কলকাতার কুখ্যাত 'গ্রেট অ্যাকশন ডে' র সময়ে গার্ডেনরিচ-ওয়াটগঞ্জে প্রায় সাতশোর উপরে হিন্দুকে হত্যা করা হয় । এদের অধিকাংশ ছিল বিহার থেকে কাজের সূত্রে কলকাতায় আসা কুলি-মজুর ।



 যারা সেই হত্যাযজ্ঞের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলো পালিয়ে ,বিহারে ফেরত আসা সেইসব সর্বস্বান্ত মানুষদের দুরাবস্থা দেখে বিহারের আম জনতা ক্ষোভে ফুঁটছিলো । ঠিক সেই সময়েই মুসলিম লীগ বিহারে দাঙ্গা বাঁধানোর পাঁয়তারা কষে । এক ডাব্বা পেট্রোলে যেন ম্যাচিসের জ্বলন্ত কাঠি গিয়ে পরলো । দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পরলো দাঙ্গার দাবানল । কোনোরকম মৌলবাদী পরিকল্পনাবিহীন স্বতঃস্ফূর্ত উলঙ্গ ধর্মীয় দাঙ্গা । নোয়াখালীর হিন্দু নিধনযজ্ঞের সাথে এর মৌলিক পার্থক্য ছিল । নোয়াখালীতে হিন্দু নিধনের সময় হামলাকারীদের সঙ্গী হতো, মোল্লা-মৌলভীরা । তারাই মূলত ধর্মান্তকরণ সম্পন্ন করতো অস্ত্রের ভয়ে ন্যুব্জ সংখ্যালঘু হিন্দু বাঙালিদের, অপরদিকে বিহারের দাঙ্গায় ধর্মান্তকরণ বা ধর্মস্থান ধ্বংস ঘটেনি । ইসলাম গ্রহণ, তদুপরি গোমাংস ভক্ষণ যেখানে নোয়াখালীর সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুর প্রাণ বাঁচানোর প্রধান স্বর্ত ছিল সেখানে বিহারের মুসলমানদের অস্ত্রের সামনে শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করা হয়েছে এমন ইতিহাসের উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়না ! ১৯৪৬ এ নোয়াখালীর কুলাঙ্গার বাঙালি মুসলমানের হিন্দু হত্যাযজ্ঞের ট্রেডমার্ক ছিল নারী ধর্ষণ, অপহরণ ও বলপূর্বক নিকাহ করা কিন্তু বিহারের দাঙ্গায় মুসলমান নারী ধর্ষণের একটা ঘটনাও ঘটেনি, ইতিহাসে প্রমান নেই । ১৯৪৬ এ দাঙ্গা কবলিত বিহারে হিন্দু নারীরা নিজেদের গয়না বিক্রি করে মুসলমানদের পুনর্বাসনে সাহায্য করেছিল, উদ্বাস্তু শিবির থেকে মুসলমানদের নিজ নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গেছিলো ।(J.B.Kripalani- Gandhi: His Life and Thought ) | কলকাতায় দাঙ্গা শুরু করেছিল মুসলমান হামলাবাজরা, পরে হিন্দুদের পাল্টায় তাদের অবস্থা কাহিল, নোয়াখালীতে হলো একতরফা হিন্দু নিধনযজ্ঞ আর বিহারে মুসলমান কচুকাটা হলো । কিন্তু এই ধর্মীয় হিংসার সব থেকে বড় মাশুল দিয়েছিলো অবিভক্ত ভারত । ধূর্ত জিন্নাহ সেই সময়ে কংগ্রেস ও তার প্রথম সারির নেতাদের ভূমিকায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট বুঝেছিলো যে, কংগ্রেসের কাছে সেদিন কোনো 'practical leadership' ছিল না । রক্তক্ষয়ের জূজূ দেখিয়ে জিন্নাহ পাকিস্তান হাসিল করে নিয়েছিল, রক্তস্নাত দাঙ্গার দিনে কোনো নেতৃত্ব ছিলোনা ভারত বিভাজন রোখার মতো ।
১৯৪৬ এ নোয়াখালীর সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু জননী হারিয়েছিল সন্তান, শিশু হারিয়েছিল পিতা, স্ত্রী হারিয়েছিল স্বামী, স্বামীর সামনে স্ত্রী কন্যা হারিয়েছিল সম্ভ্রম, নিজের স্ত্রী হয়েছিল অন্যের বিবি, কিন্তু সেদিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত জরাক্লিস্ট হিন্দুর কোনো হেলদোল নেই । তারা ব্যস্ত ব্যানার্জি, চ্যাটার্জি, শর্মা, আইয়ার নিয়ে, দুবেলা গরুর বাট দুইয়ে আর গোমাতাকে পুজো দিয়ে তারা কুল পায়না । গোচনা বোতলে বেচে গেরুয়া ব্যবসায়ী কোটিপতি হয় । মাঝে মাঝে ইতি উতি হিন্দুরা মানুষ ঠেঙায় গোহত্যা করার জন্য আর সেকুলাঙ্গার, আঁতেল, মাকুরা পাবলিকের সামনে গোমাংস খেয়ে ডিরোজিও হতে চায় ! এইতো হলো হিন্দুদের গোদর্শনের জীবনযাপন । ১৯৪৬ এর হামলাকারী কুলাঙ্গার মুসলমান ধর্ম জেহাদিরা তাদের রূপ পাল্টেছে, কিন্তু নিয়ত পাল্টায়নি, তাই ২০২১ শে এসেও বিভাজিত ভারতে জেলায় জেলায় শরিয়তি আদালত খোলার আওয়াজ তোলে তৌহিদী জনতা আর সেকুলাঙ্গার বাঙালি হিন্দু উদারতার কামমোহে বীর্যস্খলন করে.......!
রেফ: J.B.Kripalani-Gandhi: His Life and Thought.
V.P.Menon: Transfer of Power.
https://archive.org/.../4990010060490TheTransferOfPowerIn...

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted