পঞ্চাশ কোটি বন্যপ্রাণী ইতিমধ্যে ভস্মীভূত হয়েছে!

পঞ্চাশ কোটি বন্যপ্রাণী ইতিমধ্যে ভস্মীভূত হয়েছে! দাবানল কবলিত এলাকায় বাতাস বয়ছে ঘন্টায় ১২৮কিলোমিটার বেগে। ফলে দাবানল নিয়ন্ত্রণে তো আসেইনি, উল্টো ছড়িয়ে পড়ছে হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত বনভূমিতে। আমি ইশ্বরকে অন্ধ এবং বধির বলছি না। আমি জানি, তিনি সর্বদ্রষ্টা এবং সর্বস্রোতা (!) আমি শুধু বলতে চাই- সভ্যতার এই ক্রান্তিলগ্নেও ইশ্বর যদি বরাবরের মতো নির্বিকার থাকেন, তবে তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে সৃষ্টির মনে প্রশ্ন উঠবেই! 

মানিক বন্দ্যেপাধ্যায়ের মতো আমি ইশ্বরকে কেবল ভদ্রপল্লীতে বসবাসের অভিযোগ দিবো না। আমি জানি- তিনি ভদ্র-অভদ্রে, লোকালয়-নির্জনে, প্যারিসে কিংবা আমাজনে সর্ববস্থায় সমানভাবে বিচরণ করেন। ইশ্বর আলো ঝলমলে আলাস্কায় যেমন আছেন, তেমনি আছেন দাবানলে দাহ হওয়া অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, তাসমানিয়া উপকূলেও। 

সৌদি আগ্রাসনে ইয়েমেনে লক্ষ লক্ষ শিশু অনাহারে, অপুষ্টিতে মারা গেছে, ইশ্বর নির্বিকার ছিলেন! আরাকানে মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধবাদে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, ইশ্বর সে বারও তাঁর বধিরাবস্থা অটুট রেখেছেন। ইসরায়েল মেরেছে ফিলিস্তিনে, সিরিয়ায়, চীনের উইঘুরে এক কথায় গোটা পৃথিবী জুড়ে হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান, বৌদ্ধ, ইয়াহুদী, ক্যাথলিক, নাস্তিক স্ব স্ব অঞ্চলে সংখ্যা গরীষ্ঠের হাতে নির্মম নির্যাতিত হচ্ছে, মহা শক্তিধর ইশ্বরকে কখনো নির্যাতিতের হয়ে একটা ঝাকুনি পর্যন্ত দিতে দেখিনি। কিন্তু তবুও ইশ্বরে আমার অবিচল আস্থা! মানুষ মরে গোটা পৃথিবী মহাশ্মশান হয়ে যাক, আগুনে দগ্ধ হোক সমস্ত নিরীহ প্রাণীকুল, নিরীহ ক্যাঙারুর বুক কারবালার হাজার হাজার পানি প্রত্যাশীর মৃত্যুপথ যাত্রী মুমূর্ষুের মতো তৃষ্ণায় ফেটে চৌচির হয়ে যাক, তবুও আমি ইশ্বরে বিশ্বাস করি!

সে বার আমাজনের বিশাল বনভূমি ভয়ানক দাবানলে পুড়ে পরিনত হয়েছে ভয়ংকর বিরানভূমিতে। মানুষ এবং বন্যপ্রাণী আগুনে দগ্ধ হয়েছে শ'য়ে শ'য়ে। প্রাণীকূলের ভস্মীভূত দেহ দেখে সনাক্ত করার উপায় ছিলো না কোনটা কোনটা বাঘ, কোনটা সিংহ৷ কোনটা বানর, কোনটা কাঠবিড়ালি। আলাদা করা যায়নি মানুষে আর শিম্পাঞ্জিতে! সে বারও দেখেছি ইশ্বরের আরসে মহাশ্মশানের নীরবতা! আমাজন ট্র্যাজেডির কোথাও ইশ্বরকে না দেখে আমি একবারও এ কথা বলিনি যে, তিনি স্বর্গবাসীর জন্য হুরদের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ প্রদান অনুষ্ঠান কার্যে ব্যস্ত আছেন, কারণ আমি 'ডে অব জাস্টিস' এ বিশ্বাস করি। যে কাঠবিড়ালিটি সেদিন দাবানলে পুড়ে ভস্মীভূত হলো, মৃত্যুর পর সে বেহেস্তের জয়তুন বৃক্ষে ঝুলে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করবে। হাউজে কাউসারের পানি যোগে তার তৃষ্ণা নিবারণ হবে। 

নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া এবং তাসমানিয়া উপকূলে নিরবে ভস্মীভূত হওয়া পঞ্চাশ কোটি প্রাণী, উজাড় হয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ বনভূমি, ধ্বংস হওয়া হাজার হাজার বসতি এবং মরে যাওয়া কয়েক'শ মানুষের সাথে মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত থাকার পরও ইশ্বর নির্বিকার। তারপরও ইশ্বরে আমার অবিচল আস্থা। কিন্তু সভ্যতার এমন ভয়ংকর দুর্দিনে ইশ্বরের এমন নিষ্ঠুরতম নিস্তব্ধতায় পৃথিবী জুড়ে তার অস্তিত্বে সন্দেহ পোষণকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বড়বে।


যদি ক্যাঙারু মায়ের মতো মমত্ববোধও আজ ইশ্বর প্রদর্শন করতেন, অন্তত দমকলকর্মীর চোখের আর্দ্রতাটুকু আজ ইশ্বরের দৃষ্টিতে দৃশ্যমান হতো, তবে ইশ্বরের সর্বদ্রষ্টা বিশেষণটুকু এ যাত্রায় বর্ত্যে যেতো!

রহমান বর্ণিল।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted