বাপুজি জয় হো

বাপুজি জয় হো
---------------------
১৯১৪ সাল। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গান্ধী এল ভারতে হিন্দু মুসলমান মিলন তত্ত্ব নিয়ে । তার মতে তখন এই মিলনের ফলেই ভারত স্বাধীন হবে । এই মহৎ উদ্দেশ্যে ১৯২১ সালে মহম্মদ আলি সৌকত আলি ও মৌলানা আজাদকে নিয়ে গান্ধী সংঘটিত করলো খিলাফত আন্দোলন। (সারা ভারত খিলাফত কমিটির সভাপতি ছিল গান্ধী) । পাঠক, ফল কি দাঁড়ালো ? ফল : কেরালার মালাবার অঞ্চলের মুসলমান ১৫০০ হিন্দুকে হত্যা করলো, ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হলো ২০,০০০ হিন্দুকে, হাজার হাজার হিন্দু নারী অপহৃতা ও ধর্ষিতা হলো আর সর্বস্ব হারিয়ে গৃহহীন হলো ১,০০,০০০ হিন্দু । 



গান্ধী মােপলা মুসলমানদের কোনো নিন্দা করলো না, উল্টে বললো : মােপলারা সাহসী, ধর্ম ভীরু। তারা ধর্মের জন্য ধর্ম নির্দেশিত পথেই সংগ্রাম করছে। (…..brave God fearing Moplahs who were fighting for what they consider as religion and in a manner which they consider as religious) । খিলাফত আন্দোলনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে স্বাধীনতা সংগ্রামী এ্যানি বেসন্ত বলেছিলেন : “মালাবার আমাদের শিখিয়েছে ইসলামি শাসনের মাহাত্ম। ভারতের আমরা আর একটি খিলাফতরাজ দেখতে চাই না। …সারা ভারতের মুসলমান এবং গান্ধী প্রকাশ্যে তাদের পক্ষ সমর্থন করেছে। গান্ধী এরকমও বলেছেন, তাদের ধর্ম যেভাবে শিখিয়েছে তারা সেইভাবেই কাজ করেছে। আমার আশঙ্কা তাই হয়তাে সত্যি। কিন্তু সভ্য জগতে এমন জাতির স্থান নেই, যাদের ধর্ম শিক্ষা দেয় যে, ‘পাকিস্তান’ দাবি করে ১৯৪৬ সালে কলকাতা, নােয়াখালি সহ সারা ভারতে হিন্দু রক্তের প্লাবন বইয়ে দেয় ।” পাকিস্তানের দাবি সমর্থন করেছিল গান্ধীর কংগ্রেস আর কম্যুনিস্টরা । মানব সভ্যতার এক পীঠস্থান ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত করে, বহু প্রাণের বিনিময়ে, বহু নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে জন্ম নিয়েছিল মুসলমানদের তথাকথিত পবিত্র রাষ্ট্র ‘পাকিস্তান’। ধর্ম নিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে খণ্ডিত ভারতবর্ষে সেদিনই থাবা বসিয়েছিলো ‘গজওয়ায়ে হিন্দ’ ।

পাঠক, এবারে একটু ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ কাঁটাছেড়া করবো । মধ্যযুগে ইওরােপে রাজা ও চার্চের মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণের উদ্দেশ্যেই Secular, শব্দের প্রচলন । Secularism-এর অভিধানিক অর্থ হল পার্থিব, জাগতিক, পবিত্র কিছু নয়, ধর্ম ও ঈশ্বর বিরােধী । অপরভাবে নাস্তিক্যবাদ—Worldly, not sacred, not ecleclastical, temporal, sceptical of religious truth, opposed to religious education.। পাঠক, যারা স্বধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণে অনিচ্ছুক, তাদের উপর চালাতে হবে ধ্বংসের তাণ্ডব…, আজকের বিশ্বের সভ্য মানুষের কাছে এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা কি secularism হিসেবে বিবেচ্য হবে ? গান্ধী-নেহেরু ও তাদের লেজুররা সেদিনের অবিভক্ত ভারতে, এ্যানি বেসান্তের সতর্ক বাণী গ্রাহ্যে অনেকেই আর তাই দেশভাগে শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানেই ২৫/৩০ লক্ষ হিন্দু-শিখ নিহত হয়েছিল, লক্ষ-লক্ষ হিন্দু-শিখ নারী অপহৃতা ও ধর্ষিতা হয়েছিল । সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছিল হিসাবহীন হিন্দু-শিখ ! সমস্যা অন্যত্র পাঠক । ধর্ম যাদের বর্বরতা শিখিয়েছে, কে তাদের সভ্য করবে ? মুসলমানের পারিবারিক, সমাজজীবন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আর তাই মুসলিম রাষ্ট্রমাত্রই হল ধর্মীয় রাষ্ট্র (Theocratic State) । আল্লাহ হল এই রাষ্ট্রের সার্বভৌম সম্রাট আর বাদশাহ তার প্রতিনিধি মাত্র ! ইসলাম ধর্মে অবিশ্বাস মুসলিম রাষ্ট্রে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান । সকল বিধর্মীকে ইসলামে ধর্মান্তর ও ইসলামের সকল বিরােধিতাকে নির্মূল করাই হল মুসলিম রাষ্ট্রের আসল আদর্শ । দেশ কাল নির্বিশেষে ইসলামের বিধান অপরিবর্তনীয় ও অলঙ্ঘনীয় । একবিংশ শতাব্দীতেও পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কুলাঙ্গার পারভেজ মুশারফ দাবি করে : ‘ইসলামের জন্যই এই রাষ্ট্রের সৃষ্টি। ইসলামই সেনা বাহিনীর শক্তি ও সামর্থ্যের উৎস’ । (The Statesman 7.8.2001) । ইসলাম ‘Secularism’ বা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না, বিশ্বের কোন মুসলিম রাষ্ট্র Secular নয় । ধর্মনিরপেক্ষতার দুরকম বিন্যাস হতে পারে : ১. ধর্মের ব্যাপারে রাষ্ট্র হবে সম্পূর্ণ নিস্পৃহ ও নিরপেক্ষ, অথবা ২. সর্ব ধর্মে সমদর্শী । অখণ্ড ভারত থেকে খণ্ডিত ভারতের সংখ্যাগুরু সকল সময়েই বেছে নিয়েছে সর্বধর্ম সমভাব, কিন্তু যেখানে ইসলাম ‘Secularism’ বা ধর্মনিরপেক্ষতাতেই বিশ্বাস করে না, সেখানে আজকের ভারতে ইসলামের অনুসারীদের জন্য কোন ‘Secularism’ প্রযোজ্য ? সর্বভারতীয় সংগঠন ‘Jamat-e-Islami Hind সুস্পষ্টভাবে বলেছে :’এই দার্শনিক তাৎপর্যের(ধর্মনিরপেক্ষতার) উৎপত্তি পাশ্চাত্যে।’ পাঠক, আপনারা কি অস্বীকার করতে পারবেন যে, আজকে ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রায় হিন্দুশন্য এবং বাংলাদেশ সেই পথেই হাঁটছে ? ১৯৭১ এ স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে জনসংখ্যার কত শতাংশ সংখ্যালঘুরা ছিল আর আজ কত শতাংশ তারা ? আজকের স্বাধীন ভারতের এই ইসলামিস্টদের বক্তব্যগুলো শুনলে, পড়লে তাদের মানসিকতা ও চিন্তাভাবনা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় । তাদের ভাবখানা অনেকটা : “রাষ্ট্র হোক ধর্মনিরপেক্ষ, অসুবিধে নাই কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার দায়বদ্ধতা থেকে মুসলমানকে অব্যাহতি দিতে হবে” !

মুসলমান খুবই ধর্মনিষ্ঠ, আর তাই তাদের ধর্মীয় বিধানের জন্যই কি তারা অসহিষ্ণু, আগ্রাসী ? কী এমন বিধান যা কিনা স্বয়ং আল্লাহর মুখ থেকে বেরিয়ে সংকলিত হয়েছে কোরানে ? অন্যান্য ধর্মালম্বীরা তা মানতে কেন বাধ্য ? না মানলেই তাদের উপর কেন নেমে আসবে ইসলামী আগ্রাসন ? দ্বিজাতিতত্ত্বের ধর্মীয় ভাওঁতায় যখন জেহাদি জোশে ভারত ভাগ করেছিল উপমহাদেশের মুসলমান, তখন ইসলামী পাকিস্তানকে নিজ ভূমি করতে কোনো মানা ছিল নাকি এই উপমহাদেশের মুসলমানের ? ভারত তো বলেনি এ ভূমি কেবল হিন্দুদের ! আজকের ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে সেক্যুলারিসিম ইসলামের নিরিখে বিচার্য নয়, এটা বোঝার সময় হয়েছে ভারতের ইসলামিস্টদের ।

রেফ : R. c. Majumder-History of the Freedom Movement in India,
নিত্যরঞ্জন দাস—মুসলিম শাসন ও ভারতবর্ষ ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted