হিজাব : এক টুকরো মৌলবাদ--
-----------
রাজনৈতিক কিম্বা ধর্মীয় বিশ্বাসে মৌলবাদী নন এমন বয়সী লোকেদের মুখে প্রায়শ একটা ক্ষোভের কথা শুনি। সখেদে বলেন তারা --
------
আমাদের সময়ে বোরখা ও হিজাবের এতটা চল ছিলনা যা এখন দেখা যায়।
-------
বলাবাহুল্য এই খেদ মিথ্যা নয়। আবহমান বাংলার অতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও তার ধারাবাহিকতা স্বাক্ষ্য দেয় এই অদ্ভুৎ পোশাকটি আমাদের ছিলনা কোনকালেও। এমনকী বাংলার আবহাওয়াও এটি অনুমোদন করেনা।
-------
কিন্তু হিজাবের এই প্রাদুর্ভাব তো একদিনে ঘটেনি। ধীরে ধীরে আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। আমরা হয় উপেক্ষা করেছি নয় নির্বিকার থেকেছি।
--------
বেশ বিতর্ক চলতেে দেখি এ দুটো পোশাক নিয়ে। একদল এগুলোকে ' ধর্মীয় পোশাক ' হিসেবে দেখিয়ে এর বহুল ব্যবহারকে স্বাভাবিক দেখাতে চান। যারা এটা করেন তারা হিজাবের পেছনে যে রাজনীতি আর সংস্কৃতি টা আছে তাকে আড়াল করেন।
-------
অন্য দলে কিছু লোক হিজাব না বিকিনি অথবা শাড়ি না সালোয়ার-কামিজ এই হাস্যকর কুতর্কে মেতে ওঠেন। তারা বুঝতে ব্যর্থ হন যে পোশাক কোন সমস্যা নয়, সমস্যা হলো পোশাকের সাথে জড়িয়ে থাকা রাজনীতি।
--------
আজ হিজাব গোটা দুনিয়ায় ধর্মীয় রাজনীতির ( সংস্কৃতির) প্রতীক হয়ে গেছে। পশ্চিমে অনেক দেশে এটি নিষিদ্ধ হচ্ছে ধর্মীয় পোশাকের কারণে নয়, নিষিদ্ধ হচ্ছে এই পোশাক সেই সব দেশে ' ইসলামি জঙ্গীবাদ ' র অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠছে বলে। তারা তাদের দেশে ক্রমবর্দ্ধমান সন্ত্রাস রুখতে চায়।
--------
মৌলবাদী রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রতীক এই পোশাক সর্বব্যপ্ত হয়ে পড়ার মানে হলো সাধারণের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আজ কেউ বিকিনি পরিধান করলে সর্বত্র তার প্রবল বিরোধীতা হবে। এটা হওয়ার কথা ছিল বোরখার ক্ষেত্রেও। কারণ দুটোই বাইরের পোশাক। একটা পশ্চিমের অন্যটা আরবের। কিন্তু হয়নি। এটাই প্রকৃত বিপদ।
-------
না। আমরা পোশাক পছন্দে বা পরিধানে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছায় আপত্তির কিছু দেখিনা। একজন ধার্মিক মুসলিম রমণী হিজাব পরুন আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি হিজাবের পেছনে যে মৌলবাদী রাজনীতি ঘাপটি মেরে আছে তার ব্যাপারে। আমরা ধর্মের শত্রু নই , শত্রু মৌলবাদের আলখাল্লা পরা সাম্প্রদায়িক অপ-রাজনীতির।
----------
কোন রাজনীতি যখন কোনো সমাজে / রাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করে তখন তা শুধু রাজনীতি নিয়েই আসেনা , আসে তার সংস্কৃতি নিয়েও। এই ভূখন্ডে দীর্ঘদিন ধরে মৌলবাদের চাষাবাদ হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি ' মৌলবাদ ' নামক এই আফিমের চাষ। সমাজে তার বিষক্রিয়া হচ্ছে।
--------
কেউ কেউ বিচলিত হন নৌকায় ভোট দেয়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা পরিবারেও কীভাবে এই 'অসুন্দর ' জায়গা করে নিলো এই চিন্তায়। তারা বুঝতে পারেননি কখন সন্তর্পনে ঢুঁকে গেছে হিজাব। প্রথমে ভেবেছে এটা নির্দোষ ' ধর্মীয় জিনিস ' কিন্তু এটা যে জামাতিরা কৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছে টেরই পাননি তারা। ছিল নিরীহ প্রতীকী রুপ ধরে কিন্তু এখন মগজে ঘূণপোকার মত কেটে চলেছে এই হিজাবী পোকা ।
-------
ধর্মীয় রাজনীতি আদর্শিক ভাবেই যে কেবল ঘৃণ্য , ভয়ানক তাই নয় ,সাংস্কৃতিকভাবেও তা অসুন্দর। গোটা কয়েক যুদ্ধাপরাধী ঘাতককে শাস্তি দেয়ায় যথেষ্ট নয় এই অসুন্দরকে রুখতে শাস্তি দিতে হবে মৌলবাদের সংস্কৃতিকেও।
----------
তাহলে কী নাম দেয়া যায় হিজাবের ? এটার নাম দেয়া যায় -
এক টুকরো মৌলবাদ !
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................