জয় শ্রীরাম ও ঘন্টাকর্ণ পিসি
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুশাসনের দৃষ্টান্ত হল রাম-রাজত্ব। তাই আজও পৃথিবী জুড়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুশাসনের প্রসঙ্গ উঠলেই রামরাজ্য শব্দটি ব্যবহার করে। ভগবান শ্রীরাম এবং তাঁর রাজ্যশাসনের কথা শুধু মহর্ষি বাল্মিকী রচিত রামায়ণেই নয়; মহাভারত সহ বিবিধ পুরাণে উক্ত হয়েছে। শ্রীরামচন্দ্রের রাজ্যশাসনে ঋষি, দেবতা, মানুষ, পশুপাখি সহ জগতের প্রাণী মিলিত হয়ে একত্রে অত্যন্ত সম্প্রীতির সাথে বসবাস করেছিল। এ কারণেই যুগযুগ ধরে আজও মানুষ শ্রীরামচন্দ্রের জয়গাথা গেয়ে চলছে ।
ঋষীণাং দেবতানাঞ্চ মনুষ্যাণাঞ্চ সর্বশঃ।
পৃথিব্যাং সহবাসােঽভূদ্রামে রাজ্যং প্রশাসতি।।
(মহাভারত:দ্রোণ পর্ব,৫১.১২)
"শ্রীরাম রাজ্যশাসন করতে থাকলে, সমস্ত ঋষি, দেবতা ও মানুষেরা পৃথিবীতে একত্রে মিলিত হয়ে বাস করছিল।"
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে, স্বাধীন ভারতের জন্যে একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হয়। সেই সংবিধানে একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী অলঙ্কৃত ভারতবর্ষের ইতিহাস, পুরাণ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত বাইশটি ছবি রয়েছে।এ অনন্য নান্দনিক ছবিগুলো অঙ্কন করেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু (৩রা ফেব্রুয়ারি; ১৮৮৩-১৬ই এপ্রিল; ১৯৬৬)। ছবিগুলো সংবিধানের বিভিন্ন অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অনুসারে অঙ্কিত। সেই সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারের শুরুতেই মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র, দেবী সীতা এবং লক্ষ্মণের ছবি অঙ্কিত। সুশাসন এবং মৌলিক অধিকার রক্ষায় আদর্শিক দৃষ্টান্ত হিসেবে ভারতীয় সংবিধানে শ্রীরামচন্দ্রকে গ্রহণ করা হয়। কারণ শ্রীরামের রাজ্যশাসনগুণে জগৎটাই রামময় হয়ে উঠেছিল। সকলেই শান্তিতে বসবাস করত।
রামাে রামাে রাম ইতি প্রজানামভবৎ কথা।
রামাদ্রামং জগদভূদ্রামে রাজ্যং প্রশাসতি।।
(মহাভারত:দ্রোণ পর্ব,৫১.২২)
"শ্রীরামের রাজ্যশাসনকালে প্রজাদের মধ্যে সর্বদা রাম রাম রাম—এইরূপ আলােচনাই কেবল হত। এক শ্রীরামের রাজ্যশাসনগুণে জগৎটাই রামময় (পরম আনন্দময়) হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু আজ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই ভূখণ্ডের অনেকেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে শ্রীরামচন্দ্রের এবং তাঁর নামের বিরোধিতা করে। অথচ তারা একবার ভেবে দেখে না যে শ্রীরামচন্দ্র প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঊর্ধ্বে। তিনি ছিলেন এই ভূখণ্ডের শ্রেষ্ঠ আদর্শের মূর্তিমান বিগ্রহ। আমি সাধারণত আমার টাইমলাইনে সর্বদা সিরিয়াস বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি। ইদানীং রাজনৈতিক কারণে শ্রীরামচন্দ্রের বিরোধিতা প্রসঙ্গে আমার একটি মজার গল্প মনে পরছে। গল্পটি একটু ভিন্ন ধারায় এবং শিক্ষনীয়। গল্পটির নাম হল, 'জয় শ্রীরাম ও ঘন্টাকর্ণ পিসি'। আশাকরি সকলের ভাল লাগবে গল্পটি।
মাদারীপুর শহরেই আমাদের বাড়ি।আমাদের বাড়ির নাম ঠাকুর বাড়ি। সে বাড়ির পেছনে অনেক পূর্ব থেকেই একটি বাগানে রয়েছে। আমাদের ছোটকালে এ বাগানে অনেক গাছপাল ছিলা। সে সূর্যের আলোও প্রবেশ করত না। প্রচুরসংখ্যক গাছপালায় ভয় করত, গা ছমছম করত। যখন ছোট ছিলাম আমাদের শিশুমনে বিশ্বাস ছিল, বাগানের এ গাছগুলোতে ভূত-পেত্নী বসবাস করে।বিশেষ করে তেঁতুল গাছে তো ভূত আছেই। গাছের নিচে দিয়ে যেতে গা ছমছম করত। প্রচণ্ড রকমের ভয় তাড়া করত। সে সময়্র আমরা ভূত-পেত্নীর ভয় তাড়াতে একটি ছড়া আত্মস্থ করি। ছড়াটি আমাদের মা-দিদিমায়েদের শেখানো। তারাও হয়ত তাদের মা-দিদিমায়েদের থেকে পেয়েছে। ভূত-পেত্নীর ভয় থেকে মুক্তি পেতে ছড়াটি এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। সেই ছড়াটির বিষয়বস্তু হয়, ভূত-পেত্নীকে শ্রীরামের নাম শোনানো। তারা শ্রীরাম নাম শুনলে ভয়ে পালায়।
"ভূত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি;
রাম লক্ষ্মণ বুকে আছে করবি আমায় কি? "
এই ছড়াটির সাথে সাথে তারা শিখিয়ে দিয়েছিল, বেশি ভয় পেলে শ্রীরামের নাম জপ করতে।তাই যখনই বাগানের মধ্যে দিয়ে যেতে ভয় পেতাম ; কিংবা তেঁতুলগাছ, তালগাছের নিচে দিয়ে যেতাম তখনিই বুক ফুলিয়ে শ্রীরামনাম করতে করতে যেতাম। কারণ ভূত-পেত্নীরা শ্রীরামনাম সামান্যতম সহ্য করতে পারে না। শ্রীরামনাম তাদের কাছে আজেবাজে অশ্লীল শব্দ। তাই শ্রীরামনাম শুনলে তাদের মেজাজ মর্জি গরম হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
একবার এক দেশে সাধারণ মানুষের সাথে দস্যুতা,লুটপাট,লুন্ঠন বিভিন্ন রকমের অরাজকতা করে একজন অনেক অবৈধ-বৈধ ক্ষমতার
অধিকারী হয়। তাকে কেউ বলে ক্ষমতা মাসি, কেউ বলে ক্ষমতা দিদি, বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন নামে তাকে ডাকে। কিন্তু আমরা আজ তাকে ক্ষমতা পিসি নামেই অবিহিত করব। বাবার বোন বলে পিসি নামটা একটি মধুর সম্মোধন। সেই ক্ষমতা পিসি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধীরেধীরে প্রচণ্ড রকমের দুরাচারী হয়ে যায়। প্রচণ্ড দুরাচারী এবং পাপাচারী হওয়ার কারণে; তার মধ্যে শ্রীরাম নামের প্রতি এক সুতীব্র বিদ্বেষ জাগরিত হয়। শ্রীরামনাম শুনলেই তার মনের মধ্যে পূর্ববর্তী পাপকর্মের স্মৃতি জেগে উঠে পাপবোধ কাজ করতে থাকে। শ্রীরাম নাম করলে যেহেতু পাপবোধ কাজ করে, তাই সে শ্রীরাম নাম সহ্য করতে পারেনা। শ্রীরাম নাম শুনলেই তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে যায়। এভাবে শ্রীরামচন্দ্র এবং তাঁর নামের এত বিরোধিতা করতে লাগল যে বিষয়টি আর গোপনীয় রইলো না।পিসি শ্রীরাম নাম বিরোধিতা করলেও, সে নিজেকে শ্রীকৃষ্ণভক্ত বলে পরিচয় দেয়। সে বলে বেড়ায়, আমি শুধুই শ্রীকৃষ্ণের উপাসক, শ্রীরামচন্দ্রকে ও তাঁর নামকে একদম পছন্দ করি না। কিন্তু শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ দুজনেই যে ভগবানের অবতার এটা তার মস্তিষ্কে নেই। বাংলার ঘরে ঘরে যে 'হরে কৃষ্ণ' মন্ত্রটা জপ করা হয়; সেখানে যেমন শ্রীকৃষ্ণ নাম আছে, তেমনি শ্রীরাম নামও আছে। এটা তার খেয়াল নেই।
হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণকৃষ্ণ হরেহরে।
হরেরাম হরেরাম রামরাম হরেহরে।।
ক্ষমতা পিসি পূর্ব জন্মের কিছু সুকৃতি ছিল।এমনি একটি পর্যায়ে, সেই পূর্বজীবনের সুকৃতির ফলে
ভগবান শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণরূপে তার কাছে এসে উপস্থিত হয়। ভগবান তাকে বলে উন্মত্ততা পরিত্যাগ করে দেখ, যেই রাম সেই কৃষ্ণ ; সেই শ্রীরামকৃষ্ণরূপে তোর সম্মুখে । ক্ষমতা পিসিকে জ্ঞানোদয়ের জন্যে ভগবান রামকৃষ্ণরূপে অর্ধেক শ্রীরাম এবং অর্ধেক শ্রীকৃষ্ণ রূপে তার সামনে আবির্ভূত হয়। ভগবান বলে, দেখ আমার যে দেহে শ্রীরাম সে দেহেই শ্রীকৃষ্ণ।ভগবানকে অর্ধেক শ্রীরাম এবং অর্ধেক শ্রীকৃষ্ণ রূপে আবির্ভূত হতে দেখে পিসি এক দৌড়ে তাদের পুকুর ঘাটে চলে গেল। সেই পুকুর থেকে বড় একথালা কাদা নিয়ে এসে ভগবানের শ্রীরামকৃষ্ণ রূপের শ্রীকৃষ্ণ অংশটুকু রেখে শ্রীরাম অংশটুকু কাদা দিয়ে লেপে দেয়। তখন ভগবান বলেন ওরে মূর্খ তোর কি কোনদিন জ্ঞানোদয় হবে না? তোর ভুল ভাঙ্গানোর জন্য আমি তোকে দর্শন দিলাম এবং শ্রীরামকৃষ্ণরূপে দর্শন দিলাম। এরপরও তুই শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণের অভেদতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারলি না যেই শ্রীরাম সেই শ্রীকৃষ্ণ; তেনিই স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ। মূর্খ কোথাকার!
ভ্রান্তি নিরসনে ভগবানের দর্শনদানের পরেও ক্ষমতা পিসি তার সাঙ্গপাঙ্গের পাল্লায় পড়ে শ্রীরামের বিরোধিতা নিরবচ্ছিন্ন করেই যায়। পিসির সেই বিরোধিতা এমন এক পর্যায়ে চলে যায় যে, রাস্তাঘাটেও শ্রীরাম নাম শুনলেও সে চেনা মানুষ হোক আর অচেনা মানুষ হোক ; সকলের উদ্দেশ্যেই উন্মত্ততা নিয়ে তেড়ে যায়।প্রথম প্রথম সে বিরোধিতা সবাই টের না পেলেও, পরবর্তীতে সবাই ক্ষমতা পিসির পাগলামির বিষয়টি টের পেয়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চারা যখন বিষয়টি টের পায়, তখন বিষয়টি বাচ্চাদের একটি মজার খেলায় পরিণত হয়। শিশু,তরুণ, যুবকেরা পিসিকে দেখলেই "জয় শ্রীরাম" বলে চিৎকার করে উঠতো।তা শুনেই পিসির রেগেমেগে তেড়ে আসতো। মুখে বিড়বিড় করে বলতো, "এই তোরা এসব আজেবাজে কথা আমাকে বলবি না, তোর বাবা জয় শ্রীরাম তোর মা জয় শ্রীরাম"।জয় শ্রীরাম শব্দটি পিসির কাছে একটা গালাগালি। দুষ্ট বাচ্চাদের যখন আর কোনক্রমেই সামলাতে পারছে না জয় শ্রীরাম বলা থেকে। তখন ক্ষমতা পিসি দুষ্ট বাচ্চাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি বুদ্ধি বের করলো। তার কানের সাথে বড় বড় দুটি ঘন্টা বেঁধে নিল। যখনই কেউ জয় শ্রীরাম বলবে সে কান নাড়াবে, তাতে আর কানে জয় শ্রীরাম প্রবেশ করবে না।
কানে যেন জয় শ্রীরাম শব্দটি প্রবেশ না করে, এর কানে ঘন্টা বেঁধে রাখায় ধীরেধীরে একদিন পিসির নামই হয়ে গেলো ঘণ্টাকর্ণ পিসি।এভাবেই বিভিন্ন ঘটনাচক্রে পিসির দিনকাল এবং পাগলামি চলছিল। যতই তার পাপের কলশী পূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল, ততই তার সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার বেড়ে চলছিল। তার স্বৈরাচারীতা এবং নিপিড়ন বেড়েই যাচ্ছিল। একদিন গঙ্গার পাড়ে এক সাধু তাকে বলে, "রে মুর্খ তুই এ কি করসিছ? কেন তুই এভাবে রাম নামের বিরোধিতা করিস, ভগবানের বিরোধিতা করিস, ধর্মের বিরোধিতা করিস, তোর নির্মম পরিণতি আসন্ন। অতি দ্রুত তোর অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পতন হবে।সাধুর কথায় পিসির মধ্যে সামান্য বোধদয় হয়। সে তখন সাধু বাবাকে বলে, "আপনি যেহেতু বলেছেন আমার পতন হবে, তো কিভাবে হবে যদি তা একটু আগে থেকে বলতেন, তাহলে আমি সাবধান হতে পারবো"। তখন সাধুবাবা বলেন, "তুই দস্যুতা করে যত মণিরত্ন সংগ্রহ করেছিস, যখন তুই দেখবি এই মণিরত্ন আস্তে আস্তে তোর কাছ থেকে চলে যেতে শুরু করছে; তখনই বুঝবি তোর অন্তিমকাল সন্নিকটে। প্রথমে প্রচণ্ড বড় মণিটা, যার ঔজ্জ্বল্য সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি, সেই মণিটা সবার প্রথমে তোর থেকে নিখোঁজ হবে। এরপরেই আস্তে আস্তে সকল মণি নিখোঁজ হতে শুরু করবে। যখন দেখবি তুই সকল মণিহারা, তখনই বুঝবি তোর পাপের ঘরা শতভাগ পূর্ণ হয়েছে। তাই তোর মৃত্যু সন্নিকটে। তোর মৃত্যু হবে হিমালয় থেকে আসা এক সন্ন্যাসীর দর্শনে। যে সন্ন্যাসী আধুনিক পোশাকে থাকবে, প্যান্ট, শার্ট, কুর্তা এসব পোশাক পরিধান করবে। সেই সন্ন্যাসী তোকে কিছুই করবে না।তার নিষ্পাপ চাহনি তুই সহ্য করতে পারবি না।সে যখন তোর সামনে আসবে, তোর পাপের কথা, তোর দুরাচারের কথা মনে হয়ে তোর সাথে সাথেই মৃত্যু ঘটবে। এত পাপ তোর ঘটে জমা যে, সেই পাপকে স্মরণ করে আধুনিক সন্ন্যাসীর নিষ্পাপ চোখের চাহনিই তোর মৃত্যুর কারণ হবে।"
এমনিভাবেই সেই দিনগুলো চলে আসে।একদিন ঘুম থেকে উঠে ক্ষমতা পিসি দেখে তার সবচেয়ে মণিটা হাতছাড়া, সেটা আর তার কাছ নেই। সেই বৃহৎ মণিটির আকর্ষণে অন্যান্য ক্ষুদ্র মণিগুলোও আস্তে আস্তে নিখোঁজ হতে থাকে। পিসি বুঝতে পারে তার মৃত্যু সময় আসন্ন। ঘটনা পরম্পরায় সত্যি সত্যি একদিন হিমালয় থেকে এক সন্ন্যাসী আসে। সেই সন্ন্যাসীর নিষ্পাপ চোখের দর্শনে অত্যাচারী পিসির মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে পিসি উপলব্ধি করে, তার মৃত্যু এভাবে হয়ত হতো না; যদি সে তার কিছু পৈশাচিক এবং আসুরিক ভাবাপন্ন সাঙ্গপাঙ্গের পাল্লায় না পড়ত। পৈশাচিক এবং আসুরিকদের পল্লায় পরে, তাদের খুশী করতেই এমন পাপাচারিণী হতে হয়েছে। ইচ্ছায় হোক, আর অনিচ্ছায় হোক, শ্রীরাম নামের বিরোধিতা করতে হয়েছে।মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে পিসি বলে,"তোমরা কেও এমন করো না, তবে আমার মত তোমাদেরও এমন করুণ পরিণতি হবে। আমি সারাজীবন যে পাপ করেছি, সে পাপকে খণ্ডন করার সাধ্য কারো নেই। আমি আমার পাপকর্মের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ, আমি চাই আমার সমাধির উপরে অনেক বড় একটি শ্রীরাম মন্দির হবে। সবাই যখন সেই মন্দিরে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিবে, এতেই আমার কিছুটা পাপক্ষয় হবে। পারে।আমাকে তোমরা সমাধি দিবে ওই মন্দিরের সিঁড়ির নিচে। যাতে আমার উপরে পা রেখে সবাই মন্দিরে উঠতে পারে। আমার মত কেউ যেন আর শ্রীরাম নামের বিরোধিতা করে পাপিষ্ঠ না হয়। আমাকে দেখে সবাই যেন শিক্ষা নেয়।"
এক ধ্বনি, এক নাম,
জয় শ্রীরাম!জয় শ্রীরাম!
মহর্ষি বাল্মিকী মরা মরা থেকে শ্রীরাম শ্রীরাম নাম জপ করে রত্নাকর দস্যু থেকে মহর্ষি বাল্মিকী হয়েছিল। তিনিই পরবর্তীতে সপ্তকাণ্ডের রামায়ণ রচনা করেছিলেন। বর্তমানকালে ক্ষমতা পিসির মত অনেকে আছে যাদের কাছে স্বয়ং ভগবান এসে দর্শন দিলেও তাদের উপলব্ধি হয় না। সাধু-সন্ত এসে তাদের পথ দেখালেও তাদের মার্গ উপলব্ধি হয় না। ক্ষমতার মোহ এবং আসুরিক ভাবাপন্ন পরিবেশ তাদের অন্ধ করে রাখে। একটা সময় সাধু-সন্তদের অভিশাপ, নিষ্পাপ চাহনিতে তারা অতিদ্রুতই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কোন অসভ্যতাই খুব বেশিদিন টিকে থাকে না। জগতের সকল কিছুরই একটি সীমা-পরিসীমা থাকে। তা লঙ্ঘন করলে সে যত বড় শক্তিশালী ব্যক্তিই হোন না কেন তার পতন হবেই। আমাদের পুরাণগুলোতে এরকোম অসংখ্য কাহিনী এবং দৃষ্টান্ত আছে। ভগবানের পবিত্র শ্রীরাম নামের বিরোধিতা মানুষরূপ ভূত-পেত্নীরাই করে। সেই ভূত-পেত্নীদের পরিণতি দিনশেষে ভাল কিছুই হয় না।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................