বিনা প্রশ্নে কেবল অন্ধবিশ্বাসে কোন কিছু গ্রহণ করা যাবে না।

আমি আজকের প্রজন্মকে প্রশ্ন করা শিখতে বলি। বিনা প্রশ্নে কেবল অন্ধবিশ্বাসে কোন কিছু গ্রহণ করা যাবে না। দুটি ঘটনার উল্লেখ করি। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও হযরত ফাতেমার শেষ জীবন নিয়ে। একজন সাক্ষ্যাত ভগবান অন্যজন জান্নাতে মেয়েদের সার্দানী। নবী কন্যা হিসেবে ফাতেমা শিয়া সুন্নী উভয়ের কাছে খুবই আদরণীয়। কিন্তু সেই ফাতেমাকেই চরম লাঞ্ছনা অপমান দিয়ে হত্যা করেছে নবীর সবচেয়ে কাছের সাহাবীরাই। একদম হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে সে ঘটনা বলার আগে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের শেষ জীবনের চরম অপমানজনক মৃত্যু নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। যিনি হিন্দুদের কাছে প্রায় ভগবান, কল্পি অবতার সেই ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গা দেখে ভয় পেয়ে ভারতের ঝাড়খন্ডের দেওঘরে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। এমন কি সতসঙ্গের জমি যখন এনিমি প্রোপার্টি হয়ে যায়, যে জমির উপর এখন পাবনা মেন্টাল হসপিটাল তৈরি হয়েছে তিনি ‘কল্কি অবতার’ হয়েও কেন উদ্ধার করতে পারলেন না? তারপরও তাকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী কিংবা পরকালের মুক্তিদাতা কেন ভাবতে যাবেন? 





অনুকূলচন্দ্রে শেষ জীবন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। অনুকূলচন্দ্র নিজেও সেটি জানতে বলে তিনি বাথরুম সংলগ্ন একটি ছাট রুমে বন্দি থেকে নিজে নিজের গালে থাপ্পর মেরে কাঁদতেন আর বলতেন, আমি বন্দি শাহজাহান... আমি পাবনা যাবো... আমাকে অপমান করা হচ্ছে...। এভাবেই প্রায় বিনা চিকিত্সায় অনুকূলচন্দ্র মারা যায়। অভিযোগ উঠে বড়ছেলে নিজের হাতে সতসঙ্গ নিতে বাবাকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যায়। ঔরাঙ্গজেব যেমন করে তার বাবা শাহজহানকে বন্দি করে বিনা চিকিত্সায় মেরে ফেলে। অনুকূল ঠাকুরের সতসঙ্গ তার দুই পুত্রের হাতে এখন দ্বিখন্ডিত। ছোটপুত্রের সতসঙ্গ থেকে প্রকাশিত ‘প্রেমের যমুনা কাঁদিয়া আকূল’ বইতে অনুকূলচন্দ্রের মৃত্যুকালীন বড়দা গ্রুপের অত্যাচার নির্যাতনের সব নথি তুলে ধরা হয়েছে। অনুকূলচন্দ্র ভক্তদের সব সময় বলতেন ইষ্টভৃতি (মঙ্গলযজ্ঞ) তোমাদের রক্ষা করবে। তা অনুকূলচন্দ্র নিজের ‘বন্দি শাহজাহান’ অবস্থায় মঙ্গলযজ্ঞ করে রক্ষা পেলেন না কেন? নিজের জমি পর্যন্ত এনিমি প্রোপার্টি থেকে রক্ষা করতে পারেননি!

এবার সর্বমান্য হযরত ফাতেমার শেষ জীবন নিয়ে দুটি কথা না বললেই নয়। বেশির ভাগ মুসলমান জানেই না কিভাবে হযরত ফাতেমার মৃত্যু হয়েছিলো। তারা জানে না নবীর প্রিয় স্ত্রী হযরত আয়েশাকে ফাঁদ পেতে হত্যা করা হয়েছিলো। চেয়ারসুদ্ধ তিনি একটি গর্তে পড়ে যান এবং মারাত্মক জখম অবস্থায় মারা যান। আয়েশার গল্প আজকে নয়। এখানে শুধু সহি হাদিস থেকে ফাতিমার মৃত্যু নিয়ে রেফারেন্স হাজির করছি-

মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি (মৃ: চতূর্থ হিজরি) বর্ণনা করেন:
[عَن أبِیبَصِیرٍ عَن أبِی عَبدِاللهِعلیهالسّلام: قالَ:]
وَ کانَ سَبَبُ وَفاتِها أنَّ قُنفُذاً مَولی عُمَرَ لَکَزَها بِنَعلِ السَیفِ بِأمرِهِ، فَأسـقَطَت مُحسِناً وَ مَرِضَت مِن ذلِکَ مَرَضاً شَدِیداً…
ইমাম আবু আব্দিল্লাহের কাছ থেকে আবু বাছির বর্ণনা করেছেন : ওমরের নির্দেশে তার ভৃত্য ‘কুনফুয’ তরবারির গিলাফ দিয়ে ফাতেমাকে আঘাত করেছিলো, যে কারণে মুহসিনের গর্ভপাত ঘটে এবং সে কারণেই ফাতেমা আ. মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন… (দালায়েল উল ইমামাহ/৪৫)।

وَ حالَت فاطِمَةُعلیهاالسّلام بَـینَ زَوجِها وَ بَـینَهُم عِندَ بابِ البَیتِ فَضَرَبَها قُنفُذٌ بِالسَوطِ عَلی عَضُدِها، فَبَـقِیَ أثَرُهُ فِی عَضُدِها مِن ذلِکَ مِثلَ الدُملُوجِ مِن ضَربِ قُنفُذٍ إیّاها فَأرسَلَ أبوبَکرٍ إلی قُنفُذٍ إضرِبها، فَألجَـأها إلی عِضادَةِ بَـیتـِها، فَدَفَعَها فَکَسَرَ ضِلعاً مِن جَنبِها وَ ألقَت جَنِیناً مِن بَطنِها، فَلَم تَزَل صاحِبَةَ فِراشٍ حَتّی ماتَت مِن ذلِکَ شَهِیدَه …
হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামি ও আক্রমনকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন, তখন ‘কুনফুয’ ফাতেমার উরুতে এমন আঘাত হানল যে, তার দাগ বেন্ডেজের আকার ধারণ করল। আবুবকর কুনফুযকে ফাতেমাকে মারার জন্য পাঠিয়েছিল! তাই কুনফুয ফাতেমাকে ঘর থেকে আছার দিয়ে ফেলে দিল, তখন তাঁর উরুর হাড় ভেঙ্গে গেল ও পেটের সন্তানের গর্ভপাত ঘট।অতঃপর দীর্ঘ শয্যাশায়ী হল এবং সে অবস্থাতেই শহীদি মৃত্যু বরণ করলেন …(এহতেজাজ, ১/৮৩)।

ফামেতার পর তার স্বামী হযরত আলী ও দুই পুত্র হাসান হোসনকেও হত্যা করা হয়। এই বংশের প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয় পরবর্তীকালে। যেমন: হুসাইনের ছেলে জইনুল আবেদীনকেও বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় ৭১২ খ্রিস্টাব্দে। তার ছেলে আল বাকিরকেও বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয় ৭৩৩ সালে। বাকির ছেলে জাফর সাদিক, তার ছেলে মুসা আল কাজিম, কাজিমের ছেলে আর রিযা- এদেরকেও বিষয় প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর আরো তিন-চার প্রজন্ম নবী বংশের ইমামদের বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আল্লা কেন তাদের রক্ষা করলেন না? নবী বংশের উপর এতখানি পৈশাচিক কেন হলো খোদ মুসলমানরাই? এখানে তো ইহুদীনাসারাদের কোন হাত পা ছিলো না! ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের নিষ্ঠুর খেলায় এই হত্যাযজ্ঞ কি আমাদের চিন্তার দরজায় ধাক্কা দেয় না? জান্নাতের মেয়েদের সর্দানীর যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ‘আল্লার রহমত’ জিনিসটা যে কি সেটি কি বুঝতে পারছেন?

#সুষুপ্তপাঠক
24 May 2022

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted