আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাসী?
একটা সময় ছিলো যখন আমিও ঈশ্বরে বিশ্বাস করতামনা। আমি হিন্দু বলতে লজ্জা পেতাম। ততাকথিত শিক্ষিত বসরা যখন সুযোগ পেলেই মালাউন বলে মজা নিতেন, গরুর মাংশ খাওয়ার জন্যে পিড়াপিড়ি করতেন, সেইসব বসরা কলিগদেরসহ যখন অফিসে জামাত করে নামাজ পড়তেন আর আমাকে ডাকতেন তাদের সাথে নামাজে দাঁড়াতে তখন তাদের অনুরোধকে ঠেকানোর জন্যে এবং সবার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্যে হাসি মুখে বলতাম, আমি তো কোনো ধর্ম-টর্মই মানিনা, কাজেই আমাকে ডেকে লাভ নেই। হাসি-ঠাট্টার মধ্যে দিয়েই এইসবের সমাপ্তি হলেও আমার ভীষণ কষ্ট হতো মনে এবং এইগুলোই ছিল সাতাশ বছর আগে দেশ ছাড়ার একমাত্র কারণ।
কিন্তু এতো বছর পরে এখন বুঝি, ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করার কোনো কারনই থাকতে পারেনা। যে যত বিজ্ঞানের কথাই বলুক আর প্রকৃতির কথাই বলুক, কোনো কিছুরই সাধ্য নেই তাঁকে অস্বীকার করার। কারণ, কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষেই শুক্রানু আর ডিম্বানু ছাড়া রক্তে-মাংশে গড়া একজন মানুষ তৈরী করা সম্ভব না। এছাড়াও আরো লক্ষ লক্ষ ব্যাপার রয়েছে যেগুলোর কোনো সঠিক উত্তর কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। অতএব, একটা কথা খুব সহজেই বুঝা উচিত যে, যেহেতু বিজ্ঞান, প্রকৃতি বা কোনো সুপারম্যান এখনো অনেক প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেন না, সেইহেতু আমরা ধরে নিতে পারি, কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণেই এই বিশ্ব-ব্রম্মান্ডের সৃষ্টি আর সেই অদৃশ্য শক্তিকেই আমরা ঈশ্বর বলে বা সর্ব-শক্তিমান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
কিন্তু যখন দেখি একজন বললেন যে ঈশ্বর বলতে কিছু নেই আর সাথে সাথেই দেখি কিছু ঝাঁকের কই বলতে শুরু করেন ঈশ্বর বলতে কিছু নেই বা আমি ঈশ্বর মানি না তখন মনে হয় তারা কি লোক দেখানোর জন্যে এটা বলেন নাকি আধুনিকতার নামে 'হাম কি হনুরে' ভেবে এটা বলেন?
আমার কথা হলো, কে ঈশ্বরে বিশ্বাস করবেন আর কে করবেন না এটা যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, বা কাউকে কাউকে খুশি করার জন্যে যারা বলেন ঈশ্বর নেই তারা দয়া করে অন্যের বিশ্বাসকে নষ্ট করার পরামর্শ দেবেন না।
আমার দৃষ্টিতে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা আর ধর্মকে বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। কারণ, ধর্ম হচ্ছে মানুষের সৃষ্টি আর ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন মানুষসহ এই বিশ্ব-ব্রম্মান্ডকে। কাজেই, আমি বিজ্ঞানকে যেমন বিশ্বাস করি তার চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাস করি ঈশ্বরকে। কারণ, আমি জানিনা আমি কখন শেষ নিঃশাস ত্যাগ করবো বা একটু পরেই আমার কি হবে? এখানেই আমার বা আপনার অক্ষমতা আর এখানেই বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।
তুকাস
লন্ডন থেকে
১৯/০৭/২০২২ইং।
(৭ বছর আগের লেখা পোষ্টে আজ একটু যোগ বিয়োগ করে দিলাম। ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন।)
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................