ইছলামি রাস্ট্রে অমুসলিমদের জিজিয়া চুক্তিতে থাকার সম্মানজনক শর্তাবলী

ইছলামি রাস্ট্রে অমুসলিমদের জিজিয়া চুক্তিতে থাকার সম্মানজনক শর্তাবলী

লেখক: সুষুপ্ত পাঠক
...................................................................

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর সতর্কবাণী দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে হ/ত্যা করলো, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের দূরত্বে থেকেও জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।“ (বুখারি)
.
খুবই সুন্দর কথা। একজন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যে কিনা ইসলামী রাষ্ট্রে নিন্মবর্তিত শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি করে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন জিজিয়া কর দিয়ে তাকে যদি হ/ত্যা করা হয় কারই ভালো লাগবে? প্রথমত একজন জিজিয়া করদাতার মৃত্যু হলে।
.
একটি ইসলামী রাষ্ট্রে এই ‘চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম’ কেমন তরো চুক্তিতে সেই রাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি পান তার একটি দলিল ইবনে কাথির তার কুরআনের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন। 
.
ইবনে কাথির লিখেছেন, আব্দুর রহমান ইবনে গানাম আসআরী বলেন, আমি নিজের হাতে চুক্তি লিখে খলিফা ওমর (রা:) এর নিকটে পাঠিয়েছিলাম যে সিরিয়াবাসী অমুক অমুক শহরে বসবাসকারী খৃষ্টানদের পক্ষ হতে আল্লাহর বান্দা আমিরুল মুমেনিন হযরত ওমরের নিকট। 
.
চুক্তি পত্রের বিষয় হলো এরকম-
যখন আপনারা আমাদের ওপরে এসে পড়লেন, আমরা আপনাদের নিকট হতে আমাদের জান মাল সন্তান সন্ততির জন্য নিরাপত্তার প্রার্থনা জানাচ্ছি। আমরা এ নিরাপত্তা চাচ্ছি এ শর্তাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে যে-
.
১)আমরা এ শহর গুলোতে ও আশে পাশের শহরগুলোতে কোন নতুন মন্দির গির্জা বা খানকা নির্মান করব না।
.
২)এসব ঘরে যদি কোন মুসলিম মুসাফির অবস্থানের ইচ্ছা করেন তবে আমরা তাদেরকে বাধা দেব না। তারা রাত্রে অবস্থান করুক বা দিনে অবস্থান করুক। 
.
৩)আমরা পথিক ও মুসাফিরদের জন্য ওগুলোর দরজা সব সময় খোলা রাখব। যে সব মুসলিম আগমন করবেন তাদেরকে আমরা তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারি করব।
.
৪)আমরা ঐ সব ঘরে বা বাসভূমি প্রভৃতিতে কোন গুপ্তচর লুকিয়ে রাখব না। মুসলিমদের সাথে কোন প্রতারণা করব না। নিজেদের সন্তানদের কুরান শিক্ষা দেব না। নিজেরা শিরক করব না বা অন্য কাউকে শিরক করতে দেব না।
.
৫)আমাদের মধ্যে কেউ যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে চায় আমরা তাকে বাধা দেব না। মুসলিমদেরকে আমরা সম্মান করব। যদি তারা আমাদের কাছে বসার ইচ্ছা করেন তবে আমরা তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেব। কোন কিছুতেই আমরা নিজেদেরকে মুসলমানদের সমান মনে করব না।
পোশাক পরিচ্ছদেও না, তাদের ওপর কোন কথা বলব না। আমরা তাদের পিতৃপদবী যুক্ত নামে ডাকব না। জিন বিশিষ্ট ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হবো না।
.
 ৬)আমরা তরবারি লটকাবো না ও আমাদের সাথে তরবারি রাখব না। অঙ্গুরির ওপর আরবী নকশা অংকন করব না ও মাথার অগ্রভাগের চুল কাটব না। আমরা যেখানেই থাকি না কেন পৌত্তলিকদের চিহ্ন অবশ্যই ফেলে রাখব।
.
৭)আমাদের গির্জার ওপর হতে ক্রুশ রাখব না, আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো মুসলিমদের যাতায়াত স্থানে ও বাজারে প্রকাশিত হতে দেব না, গির্জায় উচ্চৈস্বরে শাঁখ বাজাবো না, মুসলিমদের উপস্থিতিতে আমরা আমাদের ধর্মীয় পুস্তকগুলো উচ্চৈস্বরে পাঠ করব না।
.
৮)নিজেদের রীতি নীতি ও চাল চলন প্রকাশ করব না। নিজেদের মৃতদের জন্য হায় হায় করব না, মুসলিমদের চলার পথে মৃতের সাথে আগুন নিয়ে যাব না। যেসব গোলাম মুসলিমদের ভাগে পড়বে তা আমরা গ্রহন করব না। আমরা অবশ্যই মুসলিমদের শুভাকাংখী হয়ে থাকব ও মুসলমানদের ঘরে উকি মারব না।‘
.
যখন এ চুক্তি ওমরের হাতে দেয়া হলো তখন তিনি তাতে আরও একটি শর্ত বাড়িয়ে দিলেন তা হলো- আমরা কখনো কোন মুসলিমকে প্রহার করব না।
.
অত:পর তারা বলল- আমরা এসব শর্ত মেনে নিলাম। আমাদের ধর্মাবলম্বী সকল লোক এসব শর্তের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করল। এগুলোর কোন একটি যদি আমরা ভঙ্গ করি তাহলে আমাদেরকে নিরাপত্তা দানের ব্যপারে আপনাদের কোন দায়িত্ব থাকবে না এবং আপনি আপনাদের শত্রুদের ব্যাপারে যে আচরণ করেন আমাদের সাথেও সেই আচরণের উপযুক্ত হয়ে যাব। [
.
দেখুন: ইবনে কাথিরের তাফসির , খন্ড-৮ম,৯ম,১০ম,১১শ পৃষ্ঠা নং-৬৭৫-৬৭৬]
.
তো এই সন্মানজনক (!) ধারাগুলির শর্তে যাদের চুক্তি করতে হয় তাদের কাউকে কোন মুসলমান যদি মেরে ফেলে সেটা তো আল্লা ও তার রসূলের লস! এই হাদিস দেখিয়ে এখন ইসলামে সংখ্যালঘুদের অধিকার যে কত বেশি তার প্রচার করা হয়। মানে অমুসলিমদের মারলে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না! তারা মুসলমানদের ‘জিন্মি’! ‘আমানত’! কত্ত সন্মান দিছে! 
.

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted