পৃথিবীতে দুইটা রাজনীতি আছে যারা কোন রকম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। যারা পৃথিবীকে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুইভাবে বিভক্ত করে অবিশ্বাসীদের খতম করে বিশ্ব দখলের স্বপ্ন দেখে।

কার্ল মার্কস নিজেও জানতেন না শ্রেণীহীন সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে তিনি যে থিউরী দিয়েছেন সেটা এককালে ধর্মে পরিণত হয়ে যাবে!

কমিউনিস্টরা এভাবে কথা বলে, যেমন: ‘মার্কস বলেছেন’, কিংবা ‘এটা তো মার্কস বলেননি’, কিংবা ‘সে সহি মার্কসবাদী নয়’...। ইসলামিক লোকজন যেমন বলে, ‘আমাদের নবী বলেছেন’, ‘আমাদের নবী এমনটা বলেন নাই’, ‘সে আমাদের নবীর সহি অনুসারী নয়’...

সমস্যাটা মার্কসবাদে নয়, কমিউনিস্টদের। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যতগুলি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র... থুড়ি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছিলো তার সবক’টাই স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছু হয়নি। মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মানুষকে স্রেফ ভেড়া ছাড়া এ্ররা অন্য কিছু মনে করে না। পূর্ব জার্মানির মানুষ কমিউনিজমকে ঘৃণাভরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো। তারা বাস্তিল প্রচারী ভেঙ্গে দিয়েছিলো। কমিউনিস্টদের এই সীমান্ত দেয়াল টপকে পশ্চিম জার্মানিতে পালিয়ে যেতে পারলে পূর্ব জার্মানির মানুষ মনে করত নরক থেকে স্বর্গে গেলাম! কমিউনিস্টরা ভুলেও পূর্ব জার্মানির ইতিহাস মুখে আনে না।

এর মানে এটা নয় এটা মার্কসবাদের সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে মার্কস পুঁজিবাদী বিশ্বের বদলে এক সাম্যের বিশ্বের সমাধান দিয়েছিলেন। সেই তত্ত্ব প্রয়োগ কোথাও ঘটেনি। লেনিন, মাও, ক্যাস্ট্র সবাই এক-একজন স্বৈরশাসক ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ সমালোচনা করলেও সে গুম হয়ে যাবে। এখানে কোন স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না। সংবাদপত্র সবই সরকারী মালিকাধীন হয়। ফলে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে... থুরি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আসল খবর কেউ পায় না। ভিন্ন কোন রাজনৈতিক আদর্শ কমিউনিস্টরা স্বীকার করে না।

পৃথিবীতে দুইটা রাজনীতি আছে যারা কোন রকম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। যারা পৃথিবীকে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুইভাবে বিভক্ত করে অবিশ্বাসীদের খতম করে বিশ্ব দখলের স্বপ্ন দেখে। এই দুইটা শক্তির নাম ইসলাম ও কমিউনিজম। এই দুইটি শক্তির মধ্যে আশ্চর্য রকমের মিল আছে। দুঃখজনক হচ্ছে মার্কসের মত একজন দার্শনিকের একটি তত্ত্ব ইসলামের মত খুবই ফালতু মতবাদের একটি রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে উঠেছে।

সমস্যাটা মার্কসবাদে নয়, সমস্যাটা কমিউনিস্টদের। তারা মার্কসকে নবী বানিয়ে ফেলেছে এবং মার্কস লিখিত বইগুলিকে ‘আসমানী কিতাব’ করে তুলেছে। ইসলামী রাজনীতির যেমন নবী ও কুরআন। ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে যেমন ইসলামী রাজনীতির নানা তড়িকা ফেকরা তৈরি হয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ বেধেছে। একইভাবে মার্কস এটা বলেন নাই, এটা বলেছেন এই দ্বন্দ্বে কমিউনিস্টরা বিভক্ত হয়ে গেছে। ইসলামের যেমন ওলামা কেরাম আছে যারা মাসালা দেন, কমিউনিস্টদেরও তেমন তাত্ত্বিক গুরু আছেন। ইসলামের কমন শত্রু হচ্ছে কাফের এবং এটি ছাড়া ইসলামের রাজনীতি মৃত। কাফেররা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করছে এটি না বললে ইসলামী রাজনীতি বাঁচবে না। ঠিক তেমনি কমিউনিজমে ‘বুর্জোয়া’ শ্রেণী শত্রু যারা প্রতিনিয়ত সমাজতন্ত্রে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ইসলামের একটি মিথলজি হচ্ছে ইহুদীরা ইসলাম ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। কমিউনিস্টদের হুবহু একই মিথলজি হচ্ছে কমিউনিজমকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে। ইসলাম পুরো পৃথিবীতে মুসলমান ও অমুসলমানে বিভক্ত করে ফেলে। এটা মার্কস নিজেও বলেছেন ইসলাম সম্পর্কে। দুঃখজনক হচ্ছে, কমিউনিস্টরাও পৃথিবীকে কমিউনিস্ট ও অকমিউনিস্টে বিভক্ত করে ফেলে। ইসলামের রাজনীতি যেমন আরব তুর্কি খিলাফতের উত্তরাধিকার রূপে বিভক্ত। কমিউনিস্টরাও চীন মস্ক দুই ভাগে বিভক্ত। মুসলমানরা যেমন আরবদেশকে তাদের আদর্শ মানে, আরবী সংস্কৃতি আদব আকিদাকে ইসলামিক জ্ঞানে অনুসরণ করে এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা করে, কমিউনিস্টরা হুবহু রাশিয়া চীনকে নিজেদের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে নিজেদের শেকড় মনে করে। পারে না তারা নিজেদের নামের সঙ্গে ভস্কি না হয় চং বং বসায়! কোন কমিউনিস্ট বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, ভগবত সিং-এর কথা বলবে না। তাদের কাছে লেনিন, গোর্কি আর চে গুয়েভারাই শেকড়। মুসলমানরা যেমন নিজের সংস্কৃতি ইতিহাসকে অনৈসলামিক কুফরি মনে করে কমিউনিস্টদের ঠিক সেরকম করে নিজেদের পা নিজের দেশে মাটিতে নয় চীন রাশিয়াতে। ইসলামে উম্মাহ চেতনার অনুরূপ কমিউনিজমে প্রলিতারিয়েত নামের একটি ফাঁপানো শ্রেণী শক্তির কথা বলা হয়। ইসলাম খতমের রাজনীতি করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের কথা বলে যার নাম জিহাদ। কমিউনিজমের হুবহু একই কায়দায় বিপ্লব করে ক্ষমতা দখলের কথা বলে। যারা জিহাদ না করে সাধারণ ভোটের রাজনীতি করে ইসলাম কায়েম করতে চায় তাদেরকে যেমন জিহাদীপন্থিরা সহি ইসলাম অনুসারী মনে করে না, তেমনি ভোটের রাজনীতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করা মার্কসবাদীদের বিপ্লবী কমিউনিস্টরা সহি কমিউনিস্ট মনে করে না। ইসলাম মুসলমানদের শিক্ষা দেয় একমাত্র ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে উন্নতি সুখ শান্তি আসবে না। তাই এটা কায়েম করতেই হবে। কমিউনিস্টরা একই রকমভাবে মনে করে কমিউনিজম ছাড়া বিশ্বের কোন উন্নতি সুখ শান্তি আসবে না। অথচ ইউরোপ ইসলাম ও কমিউনিজম ছাড়া খুবই শান্তি স্বস্তি ও উন্নতিতে পৌঁছেছে। সেখানে ধনী গরীবের সামাজিক অবস্থান এমন এক স্তরে, এমন এক সামাজিক ভদ্রতার চর্চায় গড়ে উঠেছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে ‘সমাজতন্ত্র’ (কমিউনিস্টরা মনে করেন এটি কেবল তাদের পকেটেই পাওয়া যায়) ছাড়াও বিশ্ব দিব্যি ভালো থাকতে পারে।

আমি লেখার শুরুতেই বলেছি সমাজতন্ত্র নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। সমস্যাটা কমিউনিস্ট হুজুরদের নিয়ে। সমস্যাটা লেনিন মাও স্টালিনদের নিয়ে। উত্তর কোরিয়া দেখে যাদের শিক্ষা হয়নি তারা কমরেডদের উপর আস্থা রাখুন। আফগানিস্থান, ইরান, পাকিস্তানসহ পুরো আরব বিশ্বে ইসলামী শাসনে নারীর অবস্থান, মানুষের অধিকারের চিত্র দেখে যাদের শিক্ষা হয়নি তারাই ইসলামিক শাসনের স্বপ্ন দেখতে পারে। গণতন্ত্র, সেক্যুলারিজম- এই দুটিই শেষ কথা। এখন পর্যন্ত মানব সভ্যতায় এই দুটি জিনিস একটি রাষ্ট্র ধারণ করলে সেখানে সমস্ত মানুষ, - ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে অধিকার নিয়ে বাস করতে পারে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। ইউরোপের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।

Written by : সুষুপ্ত পাঠক

#copyrightfree

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted