নোয়াম চমেস্কি আমেরিকাতে বসে আমেরিকাকে সাম্রাজ্যবাদী, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধবাজ বলতে বলতে বুড়ো হয়ে গেলেন তবু উনার একটি সিঙ্গেল বাল মুবারাক কেউ ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। কিন্তু উনি যদি রাশিয়াতে বসে রাশিয়ার সরকার ব্যবস্থার নিন্দা করতেন তাহলে উনাকে জেল খাটতে হতো নতুবা পালিয়ে এসে আমেরিকায় এ্যাসাইলাম নিতে হতো।
কমিউনিস্ট বিপ্লবের আগে রাশিয়াতে কোন বই বের করতে হলে সেটা জারের অনুমতি নিতে হতো। গোগল, তলস্তয় সবার বই-ই জারের অনুমতি নিতে হয়েছিলো। দস্তয়ভস্কির তো মৃত্যুদ্বন্ড রায় হয়েছিলো জারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে। যে সময় তাকে ফায়ারিং স্কোয়ারে গুলি করে মারা হবে শেষ সময়ে এসে জারের সাধারণ ক্ষমায় জীবন রক্ষা পায়। তো, সেই রাশিয়াতে লেনিন বিপ্লব করে জারের পতন ঘটান। জারকেই কেবল হত্যা করা হলো তাই নয়, জারের নিস্পাপ কন্যাগুলিকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে লাশগুলি ট্রাকে ছুড়ে ছুড়ে ফেলে রাখা হয়েছিলো। এই হত্যাগুলির পক্ষে অতিতে আমার পোস্টে কমিউনিস্টরা এসে সাফাই গেয়েছিলো। হায়, মতবাদ মানুষকে কতখানি অমানবিক নিষ্ঠুর করে তোলে!
কথা সেটাও নয়, কথা হচ্ছে লেনিনের রাশিয়াতেও কিন্তু জারের মত সেন্সরশীপ মেনে বই বের করা লাগত! জারের রাশিয়ার মতই ষড়যন্ত্রের কোন অভিযোগ পেলে লেনিন তাকে জেলে ভরে রাখত। কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা দেশ ছাড়তে লাগল। তাহলে রাশানদের কি লাভ হয়েছে জার থেকে লেনিন পর্যন্ত এসে? সোভিয়েত ইউনিয়ন টেকেনি। কেবল অভাব নয়, মানুষের মনের খিদেটাই নেপথ্যে কাজ করে। আপনি মানুষকে তিনবেলা রেশন দেন, জামা কাপড় দেন বিনিময়ে তার স্বাধীন মতামত দেয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেন, স্বাধীন চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেন- দেখবেন সে বিদ্রোহ করে বসবে! এটাই মানুষের প্রাকৃতিক চরিত্র। এটাই মানুষকে অন্যসব প্রাণী থেকে পৃথক করে দিয়েছে। কাজেই যারা স্বপ্ন দেখে পুরো পৃথিবী খিলাফতের আওতায় চলে আসবে, কিংবা সর্বত্র কমিউনিস্ট লাল পতাকা উড়বে এগুলো স্রেফ বিশ্বাস। কাল্ট বিশ্বাস।
ইরানের ইসলামিক সরকার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। আফগান মুল্লা শাসনও ভেঙ্গে যাবে। চীনের কমিউনিস্ট সরকার আজ হোক কাল হোক বিলুপ্ত হবে। কিন্তু আমেরিকা জার্মানি ফ্রান্স ইউরোপ আমেরিকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা যেমন আছে তেমনই থাকবে। কেন? কারণ গণতন্ত্র। ট্রাম্পকে আমেরিকাতে তার ব্যঙ্গ কার্টুন তার চোখের সামনে বেলুনের মত ফুলিয়ে জনগণ উড়াতে পেরেছে। এটাই আমেরিকার শক্তি। চার্চিল বিশ্বযুদ্ধ জিতিয়ে দেবার পরও নির্বাচনে হেরে রাজনীতি থেকে প্রস্তান করেছিলেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্র তাই ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের মত হারিয়ে যাবে না।
সমাজতন্ত্র চাইলে বামপন্থী হতে হবে এটি একটি মিথ। আমি একবার একজন আমেরিকা প্রবাসী কমিউনিস্টকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি কি আমেরিকাতে কমিউনিস্ট শাসন আশা করেন? উনি বলেছিলেন, না। আমেরিকার জনগণ যা পায় সেটা সমাজতন্ত্রের চাওয়া পাওয়া প্রতিফলিত হয়। কাজেই আমেরিকায় নয়, বাংলাদেশের মত দেশেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া কাম্য...। মার্কস সমাজতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে সেটা কিন্তু কোনদিন বাতলে দেননি। লেনিন বা মাও যে বিপ্লব করেছিলেন সেটি তাদের নিজস্ব থিউরী। মার্কস বলেছিলেন পুঁজিবাদ নিজেই তার পতন ডেকে আনবে। পুঁজবাদ সবাইকে নিঃস্ব করে দিয়ে যখন সবাইকে তার ভোক্তা বানাবে তখন কেনার মত কোন অর্থ ক্রেতার পকেটে থাকবে না। তখনই পুঁজিবাদের পতন ঘটবে...। আমি মনে করি বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানসহ এশিয়ার অনেক দেশেই সমাজতন্ত্র দরকার যেখানে সম্পদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া উচিত। কিন্তু এসব চাইতে গিয়ে কোন কমিউনিস্টকে ডেকে আনলে সে প্রথমে আপনার কন্ঠস্বরটি চেপে ধরবে। আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। আপনি একটি জেলখানা রাষ্ট্রে বসবাস করতে বাধ্য হবেন। চীনে গিয়ে দেখে আসুন সাধারণ মানুষের জীবন আর কয়েদীদের জীবনে কোন তফাত নেই। জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাস তাই কোন কমিউনিস্টের পছন্দ নয়। এই উপন্যাস যে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে তেমন কোন তথ্য কোনদিনই জানা যায়নি। সব স্বৈরশাসকদের রূপকভাবে দেখানো উপন্যাসটি কমিউনিস্টরা কেমন করে যেন বুঝে যায় এটি তাদেরকে নিয়েই লেখা হয়েছে! যেমন মুহাম্মদের কোন ছবি না থাকার পরও তাকে নিয়ে কার্টুন আঁকা হলে মুমিনরা কেমন করে যেন বুঝে যায় এটা মুহাম্মদেরই কার্টুন!
না, এসব কিছুই আমাকে টানে না। আমি যুদ্ধ বিরোধী। যুদ্ধের প্রথম বলি নারীরা। তাদের গণহারে ধর্ষণ যুদ্ধের প্রথম শর্ত! নাজি বাহিনী রেপ করেছে। আবার জার্মানিতে ঢুকে মিত্র বাহিনীও একই কাজ করেছে। শিশুদের অনাহারে হত্যা করে যুদ্ধ। এসব বলেও কোন লাভ নেই। কেননা মতবাদ মানুষকে অমানুষের পরিণত করে। আপনি যে রাজনৈতিক কাল্টে বিশ্বাসী আপনি আপনার যুদ্ধাপরাধ দেখতে পাবেন না। আপনি চাইবেন বাকীরা আপনাদের দাসে পরিণত হোক। অনেকে সাধারণ পাকিস্তানীদেরও ঘৃণা করে। মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার দায় কি তাদের? ভারতের রাজনৈতিক আচরণে ক্ষুব্ধ আপনি কি যুক্তিতে ভারতের সাধারণ একটি ব্রিজ দুর্ঘটনায় হা হা রিয়েক্ট দেন? কারণ আপনি একটি বিশেষ মতবাদের মানুষ। আপনার কাছে ভিন্ন মতবাদের দেশে জন্ম নেয়া শিশুর কান্না আপনাকে স্পর্শ করে না।
Written by : সুষুপ্ত পাঠক
#copyrightfree
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................