ঋষি সুনাক ইংলেন্ডের প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা সাধারণ কোন ঘটনা নয়। ঋষি সুনাক ইংলেন্ডের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় জয় হয়েছে সাদা ইউরোপীয়ান ব্রিটিশদের! তারা যে একটি মহান জাতি সেটি তারা এই ঘটনায় আবার একটি দৃষ্টান্ত রাখল। এককালে উপনিবেশন চালিয়েছিলো যে জাতি তারাই নিজেদের নেতা বানিয়েছে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে। উপনিবেশ ভারতে যে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের দেশ চালানোর জন্য অনুপযুক্ত মনে করত সেই তারা ঋষিকে নিজেদের নেতা বানিয়েছে। তারা বদলে গেছে। তাদের অতিত ধরে সমালোচনা করতেই পারেন কিন্তু তারা তো নজির রেখেছে। কিন্তু এতখানি উদার এই উপমহাদেশে আপনি হতে পারবেন না। একই জাতির মানুষ হওয়ার পরও বাংলাদেশ পাকিস্তানে একজন হিন্দুকে প্রধানমন্ত্রী করার মত উদারতা দেখাতে পারবে না। এমনকি ক্রিকেট টিমের একজন অমুসলিম খেলোয়াড়কে ক্যাপ্টেন বানাতেও এই দেশগুলির জনগণ প্রস্তুত নয়! এই দেশের ‘ধর্মমন্ত্রী’ হিসেবে সব সময় মাথায় টুপি দাড়িওয়ালা হুজুর হবেন এটাই অঘোষিত নিয়ম। যে দেশের টাকায় একটি মন্দিরের ছবি স্থান পায় না সে দেশের মানুষ অন্যকে বলে বর্ণবাদী! হায়, ঝাঝর বলে সুঁইকে তোর পাছায় ছেঁদা...!
হ্যাঁ, ভারতীয়রা সুনাক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হলে কিছুটা গর্ব প্রকাশ করতেই পারে বৈকি। কেননা ভারতীয়রা বলতেই পারে একজন দুজন নয়, একাধিক মুসলিম ভারতের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। একজন সাঁওতাল নারী ভারতের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। একজন শিখ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ভারতের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আদিবাসী, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের আসাটা নতুন কিছু নয়। সোনিয়া গান্ধি নিজে থেকে যদি অরাজি না হতেন তাহলে একজন ইতালিয়ান নারীর ভারতের প্রথানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনা আমাদের দেখার সুযোগ হতো। পাকিস্তানের কোন প্রদেশেও এমন নজির দেখাতে পারবে না কেউ। বাংলাদেশের কোন পৌরসভার মেয়র কোন হিন্দু হতে পারবে না। আগামী একশো দুইশো বছরেও বাংলাদেশ কোন হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধকে- তারা এই দেশের মানুষ, বাঙালি হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না চোখ বুজে বলে দেয়া যায়। সেখানে উন্নাসিক ব্রিটিশদের ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী করাটা ব্রিটিশদের জয়। এটা তাদের কসমপলিট্রন জাতীয়তাবাদের বিজয়। এখনো ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী, লুট করেছিলো, সাদা চামড়া আধিপত্যবাদী গেয়ে চলেছেন অথচ নিজেরাই কতবড় মুসলিম আধিপত্যবাদী সেকথা বললেই ‘মুসলিম বিদ্বেষী’! ঋষি সুনাক প্রথমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে না পারায় আপনি ঈদের আনন্দ পেয়েছিলেন কারণ আপনি এখানে একজন ইন্ডিয়ান ও হিন্দু ইংলেন্ডের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছে সেটি মেনে নিতে পারেননি। সেই আপনি ব্রিটিশদের, ইউরোপীয়ানদের বলেন বর্ণবাদী! সাদা চামড়ার সুপ্রিমেসি বলেন ইউরোপীয়ানদের আর তারাই এশিয়ানদের নিজেদের নেতা বানিয়ে বসাচ্ছে। আর আপনি নিজের জাতির শুধুমাত্র ধর্মে মিল নেই বলে তাকে নিজেদের নেতা বানাতে প্রস্তুত নন। এমনকি মুসলমান হওয়ার পরও আপনি ৫০ বছর সৌদি কাতার দুবাই বাস করলেও ওরা আপনাকে নাগরিত্ব দিবে না! দেশের নেতা বানাবে না! সেই আপনি আরব সুপ্রিমেসি দেখতে পান না। ‘আশরাফ মুসলমানিত্ব’ চোখে দেখেন না। সেই আপনি আসছেন ব্রিটিশদের, ইউরোপীয়ানদের সমালোচনা করতে? যারা অভিবাসীদেরও নিজেদের নেতা বানায়!
উপনিবেশ কলোনি সেই সব জাতিই চালিয়েছিলো যারা সেকালে উন্নত ছিলো। ইউরোপীয়ান সাদারা যে মগজে অনেক উন্নত জাতি সেটি গোটা বিশ্বের জন্য তাদের আবিস্কার, দর্শন, সাহিত্য তার প্রমাণ করছে। মধ্যযুগে দেশ দখল করে উপনিবেশ চালিয়েছে অনেক জাতি ধর্মের মানুষই। ব্রিটিশ উপনিবেশ অপ্রিয় সত্য হলো অনেক কিছু দিয়েছেও। মুসলিম উপনিবেশ নিয়ে যদিও আপনি কথা বলতে রাজি নন, কিন্তু প্রশ্ন তো থেকে যাবেই, ভারতবর্ষে মুসলিম হানাদার ও সাম্রাজ্য স্থাপনকারী মুসলমানরা এইদেশে কি উপহার দিয়েছিলো?
Written by : সুষুপ্ত পাঠক
#copyrightfree
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................