ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদকে নিন্দা করা হলেও মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে গর্ব করার মত এখানে বিপুল জনগোষ্ঠি রয়ে গেছে।

-পশ্চিমারা খুব খারাপ জানেন ভাইসাহেব, ওরা আমাদের কালা বলে ঘিন্না করে! ছোট করে দেখে!

-সেটা তো আরব মুসলমানরাও করে। ওরা ডাকে ‘মিসকিন’! বলে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা পুরোপুরি মুসলমান নয়। এখনকার মুসলমানদের নাম শুনেই ওরা হাসাহাসি করে।

-খালি এটা না, পশ্চিমাদের এখন যা দেখতাছেন সবই আমাদের সম্পদ লুট করে করা!

-সেটা তো আরবী তুর্কিরাও করেছে। লুটপাটে তো ওরাও পিছিয়ে ছিলো না।

-এই দেশে ইংরেজরা কত মানুষ মারছে জানেন? কত মানুষ শহীদ হইছে ওদের তাড়ানোর জন্য?

-এক তৈমুর লংয়ের উদাহরণ দিলেই তো ইংরেজ হার মানবে! আর বিদেশী মুঘল তাড়াতে রাজপুতরা আজীবন যে লড়াইটা করে গেলো সেটা এখন যে বলবে সে-ই হিন্দুত্ববাদী হয়ে যাবে!

-পশ্চিমারা কালো মানুষদের দাস করে রাখত। ওরা দাস ব্যবসায়ী ছিলো।

-সেটাও তো আরবী তুর্কি মুসলমানরাও কালো মানুষদের দাস বানাত। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের দাস বানিয়ে বিক্রি করত। যৌনদাসী পর্যন্ত বানিয়ে সাপ্লাই করত। অথচ পশ্চিমারাই দাস প্রথা বাতিল করেছিলো।

-পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদের কথাটা তো মানবেন? ওরা আমাদের গোলাম করে রেখেছিলো!

-একই কাজ তো মুসলিম সাম্রাজ্যবাদীরাও করেছিলো। ইউরোপ এশিয়া ভারতীয় উপমহাদেশে কি মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ ছিলো না? সমস্যা হচ্ছে ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদকে নিন্দা করা হলেও মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে গর্ব করার মত এখানে বিপুল জনগোষ্ঠি রয়ে গেছে। ইংরেজরা যদি এই দেশটা দখল করে এখানেই থেকে গিয়ে নিজেদের দেশ করে ফেলত যেমন আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ায় ওরা করেছে তখন খেলাটা জমত!

-আপনি দেখছি পশ্চিমা সাদা চামড়া আধিপত্যবাদী! ছিঃ!

-আমি সত্য বলব বলেই এতবেশি ট্যাগ খাই খাবো। ইংরেজ এসেছিলো বলেই এই দেশে হিন্দু ব্রাহ্মণবাদের সংস্কার সম্ভব হয়েছিলো। ইংরেজ এসেছিলো বলেই মুসলিম নারীদের মধ্যে রোকেয়ার জন্ম হতে পেরেছিলো। বিদ্যাসাগর তার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ওসব বেদ বেদান্ত পড়ে কিছু হবে না, পাশ্চত্য আধুনিক দর্শন পড়তে হবে। ধুতি চাদর চটি পড়ে বিদ্যাসাগর পাশ্চত্য দর্শন পড়তে বলা মানে তিনি জ্ঞানটা আহরণ করতে বলেছেন পোশাক আশাক সংস্কৃতিকে বলেননি। আমরা পশ্চিমের সেই জ্ঞানেরই প্রশংসা করি। সেটা করলেই কোনভাবে তাদের সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসকে সমর্থন করা হয় না। ডারউন পশ্চিমের সাদা চামড়ারই মানুষ। মার্কস পশ্চিমের সাদা চামড়ার মানুষ। নিউটন, হকিং উনারা সবাই সাদা ও পশ্চিমের মানুষ। এই পৃথিবীতে মানবজাতিকে রোগশোক থেকে বাঁচতে, উন্নত কৃষি নানা রকম যন্ত্র আবিস্কার করে পশ্চিমারাই এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের এই অবদানের জন্য তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়াকে কি করে হোয়াইট সুপ্রিমিটি বলেন? ইংরেজরা যা করেছে মুসলিম শাসকরা সেটাই করেছে। জানি বলবেন মুসলমানরা এই দেশ শাসন করতে এসে এখানেই থেকে গিয়েছিলেন আর এটাকেই নিজেদের দেশ বানিয়েছিলেন। তাহলে বলি, সেই একই যুক্তিতে আর্যরা তো এখন আর বহিরাগত বলা যায় না। কিন্তু এখনো আর্যরা বহিরাগত বলে মাঝে মাঝে আপনাদের কাঁপুনি দিয়ে জ্বরের বিকার উঠে কেন? আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার সাদারা তো সেখানেই থেকে গিয়ে নিজেদের দেশ করে নিয়েছে তবু আজো ইতিহাস বলতে গেলে সাদা আমেরিকানদের দখলদার বলতে কেন ছাড়েন না? এগুলি কি দ্বিচারিতা নয়?

-ভাই আপনি আমাদের পাঠচক্রে একদিন আসবেন। আপনার বুঝায় জানায় অনেক ভুল আছে!

-আপনিই আমার ভুল ধরায় দেন না শুনি।

-না, পাঠচক্রে আমরা দশ-বারো জন আছি, সবাই মিল্লা কেচকি মাইরা ধরমু!

Written by : সুষুপ্ত পাঠক

#copyrightfree

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted