‘বাঙালি মুসলমান’ দুই প্রকারের। এক প্রকার আছে যারা মনে করে কোলকাতা ত্রিপুরা আসাম এগুলি বাংলাদেশের মধ্যে এনে না ঢুকানো পর্যন্ত বাংলাদেশের মানচিত্র সম্পূর্ণ হবে না। প্রশ্ন আসবেই এসব জায়গায় যেসব হিন্দুসহ অন্যান্য সম্প্রদায় ও জাতি আছে তাদের কি হবে? অতি অবশ্য ‘সংখ্যালঘুত্ব’ মেনে নিতে হবে আর দুদিন পর পর একেকজন এদের ভয় ধরিয়ে শোনাবে ‘৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এসব চলবে না’...।
#না হয় ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে। এই প্রথম প্রকারের বাঙালি মুসলমানই মূলত শিল্প সাহিত্য সিনেমা খিয়েটার করে। এরাই দ্বিতীয় প্রকারের মুসলমানদের ‘মৌলবাদী’ বলে ডাকে। মৌলবাদীরা আবার তাদেরকে সেক্যুলার নাস্তিক্যবাদী বলে। বেশি রাগ হলে ‘হিন্দু’ বলে গায়ের ঝাল মেটায়। এটা শুনলে আবার প্রথম প্রকারের বাঙালি মুসলমান সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত হয়। ‘বাঙালি মুসলমানের স্বাতন্ত্র্যতা’ জন্য যারা পাকিস্তানের জিকির তুলেছিলো তাদেরকেই যখন ‘হিন্দু’ বলে কেমন লাগে বলেন তো?
#এবার দ্বিতীয় প্রকারের বাঙালি মুসলমানের কথা বলি। ইনারা এইসব ‘মুসলিম বাংলা’ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন না। তারা আজো তুর্কি খিলাফত, আরবী খিলাফতের এক অবিচ্ছিদ্য জাতি চেতনায় নিমগ্ন। এরাই মূলত ‘মৌলবাদী’ মুসলমান। তারাই পাকিস্তান রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে গেছে বাঙালি হবার পরও। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যদিও প্রথম প্রকারের মুসলমানদের মধ্যেই পক্ষ বিপক্ষ তৈরি হয়ে দুটো ভাগ হয়ে গিয়েছিলো স্বাধীনতার পক্ষশক্তি- স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তি নামে। এটা অবশ্য একদমই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মূল প্রকার ভেদ শুরুতে যেটা বলেছি সেটাই। এই মূল দুই প্রকারের মুসলমানকে (জাতিতে তারা বাঙালি হোক আর তামিল তেলেগু)- পুরো ভারতবর্ষ ধরে আপনি পাবেন। একদল খিলাফত আন্দোলন করেছে তো আরেক দল তুর্কি খিলাফত সমাপ্ত করা কামাল আতার্তুককে নিজেদের নেতা হিরো আইডল হিসেবে সামনে এনেছে। একদল খিলাফতী তুরস্কের স্বপ্নে বিভোর। আরেক দল আধুনিক তুরস্ক।...
#দেশভাগের পর কোলকাতা হাতছাড়া হওয়ার জন্য প্রথম প্রকারের মুসলমানদের আফসোসের শেষ ছিলো না। এই কোলকাতা পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে গেলে ঋত্বিক মৃণাল সুনীল থেকে নচিকেতা এদের ঠাঁই হতো ভারতের অবাঙালি কোন রাজ্যে নয়ত পূর্ব পাকিস্তানে ‘নির্মেলেন্দু গুণ’ হয়ে জীবনযাপন করতে হতো। শহীদ মিনারের রক্তাক্ত ইট নির্মেলেন্দু গুণকে কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলতে বলে যেমন, ঠিক তেমনি এই বাংলাদেশে এই সম্প্রদায়কে কেমন করে স্বাধীনতার পর অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিলো সেটাও বেফাঁসভাবে উনি বলেছিলেন নাসিরনগর হামলার পর তার ফেইসবুক পোস্টে।
#নির্মেলেন্দু গুণের সেই পোস্ট- “পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের অত্যাচারে জন্মভূমিতে টিকতে না পেরে ১৯৭১ সালে তো আমরা ‘মালাউনরা’ ভারতেই চলে গিয়েছিলাম। …ভারত আমাদের খুব বেশিদিন থাকতে দিল না। নয় মাসের মাথায়, ১৬ ডিসম্বরে পাকি মুচুয়ার দল মিত্রবাহিনীর কাছে ( মতান্তরে ভারতের কাছে) রমনা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে বসল। আর সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থী শিবিরগুলো বন্ধ করে দিয়ে ভারত ভদ্রভাবে আমাদের সদ্যোজাত বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিল। সবাই যে ধাক্কা খাইয়া দেশত ফিইরা আইল, তা কিন্তু না। অনেকেই আমার মতো, আপনের মতো মহানন্দে নাচতে নাচতে ফিইরা আইল তার সাত পুরুষ ( মতান্তরে সাতশ’ পুরুষ)-এর জন্মভিটায়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগও অন্তত মুখে মানা করল না। বলল- ‘আয়, আয়। ভোটের সুময় তোরারে কামে লাগব। তয় দেহিস আবার ইলেকশনে দাঁড়াইচ না কুনু। তোরা দরকার পড়লে ভোট দিবি, আর মাঝেমইধ্যে আমলীগের পক্ষে মিছিল করবি, কবিতা, গান, নাটক এসব লেখবি। আয়। আইয়া পড়”।
#কোলকাতা, ত্রিপুরা, আসাম না পাওয়ার অপূর্ণতা তাই সেখানকার মানুষের জন্য নয়। শুধু মাটিটুকু। এটাকেই বলে ‘পোড়ামাটি নীতি’। ভারতবর্ষের ইতিহাস মানচিত্র দ্বিতীয় প্রকারের রোমান্টিক খিলাফত চিন্তাজীবী মুসলমানরা কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু নাটক থিয়েটার শিল্প সাহিত্য করা প্রথম প্রকারের বাঙালি মুসলমাররাই এক সম্প্রদায়ের প্রায় পুরোটাকে শরণার্থী করে ফেলতে পেরেছিলো।
#সুষুপ্ত #পাঠক #Kolkata #Assam #Tripura #Bengali #Muslims #Hindus
Copyright © 2023 Susupto Pathok aka সুষুপ্ত পাঠক all rights reserved.
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................