সম্প্রতি আহমদিয়া মুসলমানদের সম্পর্কে নতুন করে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। পঞ্চগড়ে তাদের জলসায় সুন্নি মুসলমানদের হামলা, আহমদিয়া মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন লাগার পর নতুন করে অনেকের প্রশ্ন এই “আহমদিয়া” কারা? এটা কি নতুন কোন ধর্ম? নাকি তারাও শিয়া সুন্নিদের মতই মুসলমান?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর বুঝতে হলে আপনাকে নবী ও রাসূল সম্পর্কে পার্থক্য জানতে হবে। রাসূল তাকেই বলে যাকে ঈশ্বর একটি বই দিবেন এবং তার জন্যই আলাদা শরীয়ত বা জীবনবিধান বাতলে দিবেন। কিন্তু নবীরা পূর্ববর্তী নবীর শরীয়তই অনুসরণ করেন। তাদের কাছে জিব্রাইল ওহি নিয়ে আসে না। তবে তাদের জন্য আল্লার কাছ থেকে ‘ইলহাম’ আসে। এটা ওহির মতই জিনিস। এটা আল্লা নবীদের অন্তরে ম্যাসেজ করে দেন সরাসরি। আহমদিয়ারা ঠিক শিয়া সুন্নীদের কাতারে পড়ে না। তাদের নবী আছেন। তিনি গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। কাদিয়ানী সাহেব নতুন কোন শরীয়ত দেননি। মুহাম্মদের শরীয়তই তার শরীয়ত। মুহাম্মদের কুরআনই তার কুরআন। তিনি ইসলাম ধর্মই প্রচার করেছেন। তার কথা হচ্ছে তিনি হচ্ছে সর্বশেষ নবী এখন পর্যন্ত তাই সমস্ত মুসলমানদের তাকেই অনুসরণ করা উচিত এবং তিনি আসার পর আগের সমস্ত মুসলমানদের মাহযাব ইমাম ছেড়ে তার নির্দেশই মান্য করা হয়েছে আল্লার তরফ থেকে। অনেকে দাবী করেন কাদিয়ানী সাহেব নিজেকে নবী দাবী করেননি। অনেক আহমদিয়া ভয়ে সুন্নীদের মাঝে একই কথা বলেন। কিন্তু ১৯০৮ সালে মৃত্যু কয়েকদিন আগে লাহোরে কাদিয়ানী তার একজন ‘সাহাবীর’ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেই বাড়ির সামনের মাঠে সকাল থেকে সারারাত পর্যন্ত সুন্নি মুসলমানরা সমাবেশ করে কাদিয়ানী সাহেবকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করত। ব্রিটিশ সরকার না থাকলে হয়ত মেরেই ফেলত। কার্যত তিনি সেই বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সে অবস্থায় বাড়ির মধ্যে এক সভায় তার উম্মদদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। পরদিন লাহারোর এক সংবাদপত্রে বের হয় কাদিয়ানী সাহেব নবুয়ত (নবীত্বের দাবী) অস্বীকার করেছেন। এটা দেখে তিনি পরদিন সংবাদপত্রে বিবৃতি পাঠান যে, তিনি নবুওয়তের দাবী অস্বীকার করেননি। তিনি একজন নবী।
এই যে “নবী” বলে নিজেকে দাবী করা এটা কোনকালেই আসলে হজম করার মত বিষয় ছিলো না। একজন রক্তমাংসের লোক দাবী করছে আকাশের ঈশ্বরের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে! অথচ তারা সকলেই আমাদের মতই মানুষ। তাদের অসুখ করত। মানুষের মত সব রকম সীমাবদ্ধতা ছিলো। সুন্নি মুসলমানরা কাদিয়ানী সাহেবের মৃত্যু নিয়ে খুব পৈশাচিক আনন্দ করে। তারা বলে কাদিয়ানী সাহেব নবী হলে তার কলেরা হয়ে মৃত্যু হলো কেন? সত্যি বলতে কি এ প্রশ্ন কিন্তু আমারও! আমি এরকম প্রশ্ন করি। যেমন আমি বলি মুহাম্মদের কেন বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলো? কেন ফাতেমার গর্ভপাতে মৃত্যু হলো? কেন আয়েশার অপঘাতে মৃত্যু হলো? কেন ওমর, আলী, ওসমান খুন হলেন? কেন রামকৃষ্ণ গলায় ক্যান্সার হয়ে মারা গিয়েছিলেন (কোলকাতা পুরসভার নথিতে সেকথা লেখা আছে), কেন বিবেকানন্দ ডায়াবেটিসে অকালে মারা গেলেন?... সমস্যা হচ্ছে, বিশ্বাসীরা অন্যের বেলায় যুক্তি খাটাতে পারলেও নিজেদের বেলায় একদম অন্ধ!
আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার কোন রাইট আসলে কারোর নেই। তার কারণ হচ্ছে মুসলমানরা ইহুদীদের নবী মুসাকে নিজেদের নবী বলে। ইব্রাহিম, দাউদ, ইউসুফকে নবী বলে। খ্রিস্টানদের যীশুকে নিজেদের নবী বলে। এটা তারা কি করে করতে পারে? কোন অধিকারে? আহমদিয়াদের নিজস্ব নবী আছে কিন্তু তাদের শরীয়ত মুহাম্মদের ফলে তারা নিজেদের মুসলমান বলেই মনে করে। এতে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পেলে ইহুদী খ্রিস্টানদের কি একই রকম অভিযোগ করার কথা নয়? মুসলমানরা তো আদম থেকে সমস্ত নবীদের মুসলমান পর্যন্ত বলে দাবী করে বসে আছে! এরকম বলার তাদের অধিকার থাকলে আহমদিয়াদের নিজেদের কেন মুসলমান বলতে পারবে না? তারাও তো মুহাম্মদকে নবী মানে। ব্রিটিশরা থাকায় সেকালে কাদিয়ানী সাহেবকে কেউ তার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে পারেনি। কিন্তু দেশভাগের পর পাকিস্তানে আহমদিয়া মুসলমানদের নিষিদ্ধ করা হয়। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আবদুস সালামের কবরের ফলক ভেঙ্গে সেখানে ‘অমুসলিম’ লিখে দেয়া হয়েছে কারণ তিনি আহমদিয়া মুসলমান ছিলেন। রীতিমত ম্যাসিস্ট্রেট সঙ্গে করে এনে ফলক থেকে 'মুসলিম' শব্দটি মুছে ফেলা হয়! লেখার সঙ্গে সালামের সমাধী ফলকের ছবি দিয়েছি যেখানে লাল দাগে চিহ্নিত করা হয়েছে মুছে দেয়া মুসলিম শব্দটি।
রেফারেন্স ফাইল: https://pathoksusupto.blogspot.com/2023/03/blog-post_7.html
#আহমদিয়ামুসলিম
লেখা ও ছবি: Susupto Pathok
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................