রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব ভারতের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ। সকলেই মার্কসবাদী ইতিহাসবিদ। আমি ইতিহাসবিদ নই। তবে কোন স্বীকৃত রাজনৈতিক মতবাদের লোকজনের ইতিহাস একপক্ষীয় হতে বাধ্য। সে হিন্দুত্ববাদী হোক না মার্কসবাদী হোক। তারপরও তাদের ইতিহাস নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলি না কারণ আমি বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু তাদের স্ববিরোধীতা ও একপক্ষ যুক্তিগুলো চোখে পড়লে দেখিয়ে দেই। যেমন কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে রোমিলা থাপার ও ইরফান হাবিব একই অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে রোমিলা থাপার বলেন, "আর্য-জাতি তত্ত্ব আসলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী চিন্তার উত্তরাধিকার। বস্তুত, আর্য কোনও জাতি নয়, ভাষাগোষ্ঠী। এমনকি, সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গেও যে আর্যদের মিশিয়ে দেওয়া হয়, তারও কোনও প্রমাণ নেই"।
আর্যদের সম্পর্কে এই ইতিহাসই সত্য মানছি। কারণ মার্কসবাদী ইতিহাসেই ঈমান আনলাম। তাহলে প্রশ্ন হলো, "মুসলমান" কিসের ভিত্তিতে তাদের কাছে জাতির মর্যাদা পায়? ভাষা নৃতাত্বিক কোন কিছুই নেই মুসলমান পরিচয়ে। এক ধর্ম বিশ্বাস ছাড়া। তাও শিয়া সুন্নিতে বিভক্ত। তাহলে থাপার ও ইরফান সাহেবদের "ভারতীয় মুসলমান" কোন পর্যায়ের জাতিগোষ্ঠী বলে বিবেচিত হয়? আর্যও কোন জাতি নয় মুসলমানও কোন জাতি নয়- একথা তারা বলবেন না। বললে মার্কসবাদীদের ভোট নষ্ট হয়ে যাবে! একারণেই কোন রাজনৈতিক মতবাদীদের বলা ইতিহাস মাত্রই একপেশে।
রোমিলা থাপার অন্য একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন মুঘল আমলে কোন সাম্প্রদায়িক সমস্যা ছিলো না। তখন হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিলো না। তার ভাষায় "মুঘল অর্থনীতির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল রাজা তোদর মলের বিশ্বস্ত হাতে। হলদিঘাটির যুদ্ধে মুঘল সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজা মান সিং, যিনি ছিলেন রাজপুত। তিনি পরাস্ত করেছিলেন আরেক রাজপুত মহারানা প্রতাপকে। আবার মহারানা প্রতাপের সেনাবাহিনীতে বিরাট সংখ্যায় ছিলেন আফগানরা। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন শের শাহ সুরির বংশধর হাকিম খান সুরি। স্পষ্টতই ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হিন্দু বা মুসলিম কোনও পক্ষই সেই যুদ্ধে অংশ নেয়নি। পাশাপাশি মুঘল রাজ পরিবার ও রাজপুত রাজ পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে। ‘লাভ জিহাদ’ বলে তখন কিছুই ছিল না। সেই সময়ের ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণা ও আত্মজীবনীতে তার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায়নি"।
মানসিংহ যখন সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে রানা প্রতাপের কাছে গিয়েছিল তখন প্রতাপ কি ভাষায় মানসিংহকে নিজ জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে এক গাদ্দার বলে ভর্ৎসনা করেছিল রোমিলা থাপার সেটা জানেন না? আর মুঘল রাজ পরিবারে রাজপুত নারীরাই বউ হয়ে এসেছে কোন মুঘল কন্যা কি রাজপুত পরিবারে বউ হয়ে গিয়েছিল? কেন যায়নি? আর রানা প্রতাপের বাহিনীতে আফগান সৈন্য? সেকালে সৈন্যরা ছিলো ভাড়াটে। এদের পেশাই ছিলো কারোর হয়ে যুদ্ধ করা। এদের কোন আদর্শিক সেনাবাহিনী ছিলো না। আমি বলছি না মুঘলরা ইসলামী খিলাফত কায়েম করে আবু বকর ওমরদের মত শাসন চালিয়েছিলো। আকবরের মত মহান শাসক মুঘলদেরই অবদান। কিন্তু মার্কসবাদীরা তো মুঘলদের সেক্যুলার বানিয়ে ফেলেছে! আওরঙ্গজেব যে জিজিয়া কর চালু করেছিল সেটাও কি ধর্মের পরিচয়ে হয়নি?
রোমিলা থাপারদের ইতিহাস হচ্ছে ইংরেজরা খারাপ, মুসলমানদের আসার আগে হিন্দুরাও খারাপ। কেবল মুসলমান শাসকদের সময়ই হিন্দু মুসলমান ভাই ভাই ছিলো! তাদের এই ইতিহাসগুলোর নাম কিন্তু তারাই রেখেছে "মার্কসবাদী ইতিহাস চর্চা"। এই মার্কসবাদী ইতিহাসের সংজ্ঞা দেন উনারা এভাবে : "বিংশ শতকের প্রথমার্ধে যে-জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার শুরু হয়েছিল, তার ভিতরে অনেকটাই ছিল গৌরবান্বিত অতীত গঠনের চেষ্টা। তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস চর্চার নিরিখে যা গ্রহণ করা হলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে মার্ক্সবাদী ইতিহাস চর্চার ঘরানা নতুন দিক উন্মোচন করে। রাজরাজড়াদের গল্পের বাইরে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠী ও শ্রেণিকে ইতিহাসের আঙিনায় নিয়ে আসা হয়। যার ভিত্তিতে ব্রহ্মণ্যবাদী ধর্মশাস্ত্র এবং অতীতের অনেক গৌরবগাথাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাই মার্ক্সবাদী এবং প্রগতিশীল ইতিহাসবিদেরা বার বার হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ সয়েছেন"।
সুন্দর! তা আমাদের এই অঞ্চলে " ইসলামের ইতিহাস" "মুসলিম শাসন" নামে যে জাতীয়তাবাদী গৌরবগাঁথা পড়ানো হয় তা কেন মার্কসবাদী ইতিহাসের আঘাতে প্রশ্নের মুখে পড়ে না? এর প্রকৃত কারণ কি রোমিলা থাপার-ইরফান হাবিবদের ভাইপোরা বলতে পারেন?
রেফারেন্স ফাইল : https://www.blogger.com/blog/post/edit/preview/2516703223705599543/8902037125159521048
#রোমিলাথাপার #মার্কসবাদীইতিহাস
লিখেছেন : Susupto Pathok
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................