দেশভাগের সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকে যেসব মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলো তার পিছনে কোন মর্মান্তিক কাহিনী নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া। ঝাকির তালুকদার নামে একজন মুসলিম লীগার লেখক পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মুসলমানদের 'করুণ কাহিনীর' গল্পের সংকলন বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। এরকম কোন গল্প উপন্যাস গত সত্তর আশি বছরে লেখা হয়নি কারণ সেরকম কোন তিক্ততার ইতিহাস নেই। হাসান আজিজুল হকের 'আগুন পাখি'তে আমরা কখনোই পূর্ববঙ্গ ফেরত রিফিউজিদের মতো কিছু দেখি না। খুলনাতে সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুসলমান এসেছিলো। তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত 'সীমান্তরেখা' ডকুমেন্টারি দেখার অনুরোধ থাকবে মুসলিম লীগার ঝাকির তালুকদারকে। এখনো পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মুসলমানদের অনেকে বেঁচে আছেন, তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে, তারা পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন ফ্যান্টাসি থেকে! মুসলমানদের নিজেদের দেশ! ঋত্বিক ঘটকের পূর্ববঙ্গ ফেরত রিফিউজিদের মতো অনুরূপ গল্প যদি মুসলমানদের থাকতো তাহলে বাংলাদেশের সাহিত্যে সেটি চরম আকারে হিন্দু বিরোধী আখ্যান হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতো। আহমদ ছফার মতো লোক এরকম ইতিহাস থাকলে তার কোলকাতার ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিবর্গের উপর (রীতিমত) সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের এতবড় মালমশলা কি ব্যবহার করতো না?
পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে, কমিউনিটি দ্বারা মুসলিম বিতাড়িত হওয়ার কোন ইতিহাস ঝাকির মিয়া বের করতে পারবে না। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়িত করার রাষ্ট্রীয় ও কমিউনিটিগতভাবে আগ্রাসন, এনিমি প্রোপার্টি নামে হিন্দু সম্পত্তি দখলের বিপরীতে ঝাকির তালুকদার ভারত থেকে মুসলিম রিফিউজি আসার কাল্পনিক ইতিহাস বানাতে ব্যর্থ হবেন কেননা মিথ্যা ইতিহাসের জন্য একটু হলেও সত্য ভিত্তি দরকার পড়ে।
পূর্ববঙ্গ ফেরত রিফিউজিদের হাতে লেখা কথাসাহিত্য ও সিনেমায় ভারতে এসে তাদের দুর্দশার চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। যদি পূর্ববঙ্গ থেকে ঝাকির তালুকদারদের পূর্বপুরুষদের আসল চেহারা দেখানো হতো তাহলে আজকে তারা এই কাল্পনিক ইতিহাস বানানোর কোন ফাঁক পেতো না।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে যদি কেউ রিফিউজি হয়ে আসতো পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া হিন্দুদের মতো করে, তাহলে মুসলিম লীগের চেতনায় জন্ম নেয়া পাকিস্তানের সাহিত্যে সেই ইতিহাস দিয়ে শ'য়ে শ'য়ে উপন্যাস কবিতা নাটক সিনেমা তৈরি হতো। সেখানে হিন্দুদের দেখানো হতো ভিলেন করে। ঋত্বিক মৃণাল সেটা দেখাননি। এটাই চরম ভুল?
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................