শরৎচন্দ্রের "মহেশ" ছোটগল্পটি নিয়ে তো কমিউনিস্টদের অনেক পোস্ট দেখেছেন। উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা সিলেবাসে একসময় গল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। পড়তে পড়তে নিশ্চয়ই ভেবেছেন দরিদ্র মুসলমানদের ওপর কিভাবে হিন্দু জমিদার আর ব্রাহ্মণরা অত্যাচার করত। হিন্দুধর্মের ওপর , ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতি নিশ্চয়ই আপনার একটি তীব্র ঘৃণা তৈরী হয়েছে। আপনি নিশ্চিতরূপে হিন্দু বলে লজ্জিত হতে শুরু করেছেন।
কিন্তু ইসলামের সমভ্রাতৃত্ববোধ কি তাদের সবাইকে এক করতে পেরেছিল, মুসলিম অন্তেবাসীদের কি মুসলমান জমিদারদের হাতে অত্যাচারিত হতে হত না?
ঠিক সেইরকমই একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, "তৃণ" নামের একটি ছোটগল্পে।
মুসলমান জেলে সম্প্রদায় "ধাওয়া", তারা নিষ্ঠাবান মুসলমানদের কাছে অস্পৃশ্য, কেননা মাছ ধরা কাফেরদের কাজ।নমাজের সময় সবার পিছনে চোরের মত দাঁড়ায় তারা,তাদের দেখলে ইমামের চোখ সরু হয়ে ওঠে। সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানেও তাদের দাফন করা নিষিদ্ধ।
সেই ধাওয়া সম্প্রদায়ের একজন দরিদ্র জেলে বসির। ভাদ্রের রোদে সারাদিন পুড়ে মাছ ধরে বাড়ি ফেরার পর জমিদার হালিম শাহুর বরকন্দাজ পীরু মিঞা সবচেয়ে বড় বোয়াল মাছটা তুলে নেয়,কেননা জমিদারের বাড়িতে মৌলানা সাহেবের পায়ের ধুলো পড়েছে যে, তাঁর নজরানায় লাগবে। চোখ ফেটে কান্না আসলেও বসিরকে চুপ করে থাকতে হয়। ধাওয়াদের ঔদ্ধত্য জমিদার ক্ষমা করবে না।
পরেরদিন পাইকার রহমতুল্লাহ বসিরকে মৌলানার ওয়াজে নিয়ে গেলে যখনই মৌলানা জানতে পারেন সে ধাওয়া, ঘৃণায় মৌলানার মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করে । " তোদের মুখ দেখলেও ঘৃণা হয়। বাজারে নিয়ে গিয়ে তোকে পয়জার মারা উচিত।"
শেষে রহমতুল্লাহ তাকে পরামর্শ দেয় "মোছলমান যেখানে মোছলমানের ওপর এত জুলুম করে,সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে কিসের জন্যে?"
"এর চাইতে হিন্দুর গাঁও ভালো।তারা আর যাই করুক, ধর্মের ওপরে জুলুম করে না।"
কিন্তু ভিটেমাটি ছেড়ে লাহিড়ীবাবুদের জমিদারিতে চলে যেতে বসিরের মন সায় দিচ্ছিল না।
কিন্তু পরেরদিন পীরু মিঞা বসিরের কাছে হুজুরের মেহেরবানীর সন্দেশ নিয়ে আসে। বসিরের রূপসী বিবি রোসেনার ওপর হুজুরের নজর পড়েছে, তাই...
বসিরের দা পীরু মিঞার কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর মূহুর্তেই বসির বুঝতে পারে, এবার ভিটেমাটি ছাড়তে হবে।
সেদিন গভীর রাতে বিবির হাত ধরে বসির রওনা দেয় লাহিড়ীবাবুর জমিদারির উদ্দেশ্যে।
অবশ্যই এই গল্পটি নিয়ে ফেসবুকের সাহিত্যের গ্রুপে কোনও আলোচনা দেখবেন না। সিলেবাসে ঠাঁই পাওয়া তো দূরের কথা।
বাই দ্য ওয়ে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু বামপন্থী ছিলেন।
গল্পসমগ্র। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।মিত্র ও ঘোষ। পৃষ্ঠা ৩১২।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................