পৌষ সংক্রান্তির দিনে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর চলা ভয়ংকর ও নৃশংস ইতিহাস।

আপনি জানেন কি আজকের পৌষ সংক্রান্তির দিনে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর চলা ভয়ংকর ও নৃশংস ইতিহাস । ইতিহাস জানুন , চোখ খুলুন -

১৯৬৪ সালের জানুয়ারী মাস। এমনই এক পৌষ সংক্রান্তির দিন ছিলো। বাঙালি বাড়িতে বিশেষ করে হিন্দু বাড়িতে পিঠে পায়েস পুলির আয়োজন চলছে।

সেই সময়টাতেই ভারতের হযরত বাল মসজিদ থেকে নবীর চুল চুরি হয়েছিলো। এবং মসজিদ থেকে নবীর চুল চুরি হওয়ার সংবাদ পূর্ব পাকিস্তানে এসে পৌঁছে গেছে।

নবীর চুল চুরি যাওয়ার সংবাদ পেয়ে সেই পৌষ সংক্রান্তি পরবের দিনে পূর্ব পাকিস্তানে থাকা হিন্দুদের উপর চড়াও হয়েছিল পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা।

হিন্দুদের উপর আক্রমণের কোপ নারায়ণগঞ্জের মাটিতেও পড়েছিলো।



ভারতের কাশ্মীরে ঘটেছে চুরীর ঘটনা, সেই অপরাধে নারায়ণগঞ্জে শহরে এবং গ্রামের বাড়িতে থাকা আমাদের বাড়ির আট জনের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছিলো।

উল্লেখ্যঃ নবীর চুল পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু আমরা ফিরে পাইনি তাঁদের, পৌষ সংক্রান্তির দিন যাঁদের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছিলো।

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান বদলে বাংলাদেশ হলো।
১৯৭৩ সালে দুর্গাপূজার সময় দুর্গাপ্রতিমা ভাঙা শুরু হলো।

অখণ্ড ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির ভেঙে মন্দিরের স্থান জবরদখল করে মুঘলরা বাবরি মসজিদ বানিয়েছিলো, তখন লক্ষ্মণ সেনের উত্তরসুরী হিন্দুরা রুখে দাঁড়ায়নি!

১৯৯২ সালে ভারতের সেই বাবরি মসজিদ ভাঙলো ভারতের হিন্দুরা,

ভারতের হিন্দুদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বাংলাদেশের মুসলমানরা। সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশে থাকা হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট, হিন্দু মেয়েদের ঘর থেকে টেনে নিয়ে ধর্ষণ, হিন্দুদের ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংস পরিশেষে হিন্দুদের মন্দির ভেঙে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিশোধ নিয়েছিলো।
১৯৬৪ সালের রায়টের চেহারা দেখিনি, কিন্তু ১৯৯২ সালে দেখেছি পাশের বাড়ির প্রতিবেশীদের ভয়ংকর রূপ। যে বাড়ির ভাবীর সাথে আমার এতো ভালো সম্পর্ক ছিলো, ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার আক্রোশ দেখিয়েছিলো ভাবীর কলেজ পড়ুয়া মেজো ছেলে আর তার বন্ধুরা।

সন্ধ্যার সময় ভূতের গলির সারা পাড়া থমথমে, পুরো এলাকায় আমরা একমাত্র হিন্দু, স্ত্রী আর দুই শিশু কন্যা নিয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের নিরীহ অধ্যাপকের সংসার। ভাবীর মেজো ছেলে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসে আমাদের দরজায় লাথির পর লাথি মারছিলো আর অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছিলো। 
দরজায় ডাবল পাল্লার খিল দেয়া ছিলো বলে দরজা ভাঙেনি। দরজা ভাঙলে আমাদের অবস্থা কী হতো জানি না।
ঘরের ভেতর অধ্যাপক ভদ্রলোক তার ভয়ে ক্রন্দনরত দুই শিশু কন্যাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন।
আমি শুধু সাহস করে দরজার কড়ায় তালা ঝুলাতে গিয়ে দরজার ফুটো দিয়ে দেখে ফেলেছিলাম ভাবীর মেজো ছেলে হায়দারকে। 
আমি খুবই শকড হয়েছিলাম ভাবীর ছেলেকে দেখে। ধর্মীয় জোশে ভাবীর মতো এত্তো ভালো মানুষের ছেলেও কী রকম ভয়ংকর হয়ে ওঠে!

উল্লেখ্যঃ দীর্ঘ সময় বিচার শেষে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট রাম মন্দিরের সেবায়েতদের পক্ষে রায় দিয়েছিলো। 
ভারতের হিন্দুরা রাম মন্দিরের অধিকার ফিরে পেয়েছিলো,
কিন্তু বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় যত মুসলমান-হিন্দুর প্রাণ চলে গেলো, ধন সম্পদ মান হারিয়ে গেলো,
প্রতিবেশীর প্রতি বিশ্বাস ভরসা হারিয়ে গেলো, 
কোনোটিই আর ফিরে পাওয়া যায়নি।

তারপরেও প্রতিদিন আকাশে সূর্য চন্দ্র ওঠে, নদীতে জোয়ার ভাঁটা আসে, দিন রাত হয়, ঋতুও নিয়মমাফিক বদলায়।

দুঃখে শোকেই তো কাটছে বেলা,
আজ নাহয় সুখ আসুক সবার দ্বারে!

রীতা রায় মিঠু ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted