দেশে কি মন্দির কম আছে যে মান মন্দির বানাবে? এটা আমার কথা নয় এদেশের কিছু আবাল পাবলিকের কথা।
মান মন্দির কি?
বঙ্গবন্ধু মান মন্দিরের পেছনের গল্পঃ মান মন্দিরের কারিগর
বাংলাদেশে একটি বিরল ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। শুধু বিরলই নয় একেবারেই অসম্ভব। সারা পৃথিবীতে এরকম আর দ্বিতীয়টি সম্ভব নয়! শুনে অবাক হচ্ছেন?
আমরা সবাই জানি, উত্তর-দক্ষিনে ৪টি ও পূর্ব-পশ্চিমে ৩টি রেখা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে ভৌগলিকভাবে ভাগ করা হয়েছে। জ্যোতির্বিদ আবহাওয়াবিদ ও মহাকাশবিজ্ঞনীদের জন্য রেখাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও যেমন দিনরাত শীত গ্রীষ্ম বসন্তেও রেখাগুলির ভূমিকা অপরিসীম।এই রেখাগুলি সব মিলিয়ে ১২ জায়গায় ছেদ করেছে। নিঃসন্দেহে এই ১২টি বিন্দু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু।১২টি বিন্দুর ১০টি বিন্দুই পড়েছে সাগরে-মহাসাগরে, তাই মানুষ সেখানে যেতে পারে না। একটি পড়েছে সাহারা মরুভূমিতে, সেখানেও মানুষ যায় না।শুধু ১টি বিন্দু (হ্যাঁ, শুধু ১টি মাত্র বিন্দু) পড়েছে শুকনা মাটিতে, যেখানে মানুষ যেতে পারে, সেই বিন্দুটি পড়েছে আমার প্রিয় বাংলাদেশে!
জায়গাটি ফরিদপুরের কাছে ভাঙ্গা উপজেলায়।ব্যাপারটা যে এতোদিন কেউ জানতো না তা হয়তো নয়, তবে ব্যাপারটির গুরুত্ব নিয়ে এতোদিন কেউই সেভাবে ভাবেনি যেমনটি ভেবেছেন আমাদের প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার।স্যারের বহুদিনের স্বপ্ন ছিলো পৃথিবীর এই একমাত্র বিরল ছেদবিন্দুতে একটি মানমন্দির নির্মানের যেখানে একবার পা ফেলে বিরল সৌভাগ্যবানদের তালিকায় নিজের নাম তুলতে শুধু দেশ থেকেই নয় সারা পৃথিবী থেকেই পর্যটকরা ছুটে আসবে।শুধু পর্যটকই নয় যেখানে জ্ঞান বিলাতে সারা পৃথিবী থেকে ছুটে আসবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর মহাকাশবিজ্ঞানীরা।যেখানে জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশবিদ্যা নিয়ে জটিল জটিল সব গবেষণা হবে।শিঘ্রই স্যারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। স্যারের অনুরোধে ও পরামর্শে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বিরল ছেদবিন্দুতে একটি মানমন্দির নির্মানের অনুমোদন দিয়েছেন।শিঘ্রই এই বিরল ছেদবিন্দুতে নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির’ আর আমরা হতে যাচ্ছি একটি বিরল সৃষ্টির সাক্ষী।এই মানমন্দিরকে ঘিরে কর্কটক্রান্তি বরাবর ও ৯০’ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বরাবর সারি সারি হাজারো কৃষ্ঞচূড়া গাছ লাগানো হবে। যখন এইসব গাছে ফুল ফুটবে তখন অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতা দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের যাত্রীরা দেখতে পাবে অপার সবুজের মাঝে লাল কৃষ্ঞচূড়ার বিরল সেই ছেদবিন্দুটি যা পুরো পৃথিবীতে আর কোথাওই নেই।
ফয়সল ইসলাম।
এবার পড়ুন জাফর ইকবাল স্যারের লেখাঃ
আমি আজকাল ভাগ্য বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। (না, আমি অন্যদেরকেও আমার মত ভাগ্য বিশ্বাস করা শুরু করতে বলছি না!) তবে আমি নিজে কেন ভাগ্য বিশ্বাস করতে শুরু করেছি সেই কাহিনীটা একটু বলি।
সেই ছেলেবেলায়- দেখে যখন পৃথিবী আঁকতে হয়েছে তখন প্রথমে একটা গোল বৃত্ত একেঁছি, তারপর তার মাঝে ডান থেকে বামে এবং উপর থেকে নিচে কয়েকটা রেখা টেনেছি এবং সেটা দেখতে তখন ‘পৃথিবী’, ‘পৃথিবী’ মনে হয়েছে। তবে কেন গোল বৃত্তের মাঝে এরকম রেখা টানলে সেটাকে পৃথিবীর মত মনে হয় সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। একটু বড় হয়ে জানতে পেরেছি পৃথিবী তার অক্ষের উপর ঘুরছে বলে দিন রাত হয় এবং সূর্যের সাপেক্ষে এটা একটু বাঁকা হয়ে আছে। (ঠিক করে বলা যায় ২৩-৫ ডিগ্রী) বলে শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এসব পাই। তা না হলে সারা বছর একই রকম থাকতো, একঘেঁয়েমিতে আমরা নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেতাম! ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যে দিন ছোট বড় হয় আমরা সবাই সেটা লক্ষ্য করেছি। কিন্তু তার সাথে আরো একটা ব্যাপার ঘটে সবাই সেটা লক্ষ্য করেনি। আমরা ধরেই নিয়েছি সূর্য পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়, কিন্তু তার সাথে সাথে সেটা যে কখনো কখনো ঠিক মাথার উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায় এবং কখনো কখনো একটু দক্ষিণে হেলে পড়া অবস্থায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়- সেটা কিন্তু সবাই জানে বলে মনে হয় না। সত্যি কথা বলতে কী পৃথিবীর সব মানুষ কিন্তু দাবি করতে পারবে না যে, তারা বছরের কোনো না কোনো সময় সূর্য ঠিক তাদের মাথার উপর দিয়ে যেতে দেখেছে। পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকার ছোট একটা অংশের মানুষের সূর্যকে ঠিক মাথার উপর দিয়ে যেতে দেখার সৌভাগ্য হয়।
সৌভাগ্য শব্দটা ব্যবহার করেছি তার একটা কারণ আছে। কারণ সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থাকে তখন আমরা অবাক হয়ে দেখি মাটিতে আমাদের যেন কোনো ছায়া নেই! বিষুব রেখার আশে পাশে শুধু বিষুবীয় অঞ্চলে সেটা ঘটে এবং সবচেয়ে উত্তরে যেখানে সেটা ঘটে সেটাকে একটা রেখা দিয়ে নির্দিষ্ট করা আছে এবং সেই রেখাটির নাম কর্কট ক্রান্তি। ঠিক সেরকম দক্ষিণে যে পর্যন্ত এটা ঘটতে পারে সেটা আরেকটা রেখা দিয়ে নির্দিষ্ট করা আছে, সেই রেখাটির নাম মকর ক্রান্তি। (কর্কট ক্রান্তি এবং মকর ক্রান্তির মতো আর দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেখা আছে দুই মেরুর কাছাকাছি কিন্তু সেখানে মানুষজন বেশি যায় না বলে আপাতত কিছু বলছি না। অল্প জায়গার ভেতরে অনেক বেশি জ্ঞান দেয়ার ঝুঁকি নিয়ে হলেও আর দুটো তথ্য দিয়ে শেষ করে দিই। কর্কট ক্রান্তি, মকর ক্রান্তি এবং বিষুব রেখা নামে পূর্ব পশ্চিম বিস্তৃত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেখার কথা বলা হয়েছে। মাপ জোক করার জন্য উত্তর দক্ষিণ বিস্তৃত রেখারও প্রয়োজন। সে জন্য গ্রিন উইচকে শূন্য ডিগ্রি ধরে উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত একটি রেখা ধরে নেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তখন ৯০ ডিগ্রি, ১৮০ ডিগ্রি এবং ১৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমার রেখাগুলোর একটা বাড়তি গুরুত্ব চলে আসে। আমরা যখন পৃথিবী আঁকি তখন একটা বৃত্ত এঁকে তার মাঝখানে এই রেখাগুলো আঁকার চেষ্টা করি এবং তখন বৃত্তটাকে পৃথিবীর পৃথিবী মনে হয়!
যারা এখন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার লেখাটি পড়ে এসেছেন এবং আমি কী বলার চেষ্টা করেছি বোঝার চেষ্টা করেছেন- তারা যদি বিষয়টা পুরোপুরি নাও বুঝে থাকেন তাদেরকে আমি খুব শর্ট কাটে মূল কথাটি বলে দিই। ভৌগলিক কারণে পৃথিবীতে তিনটি পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত রেখা আছে সেগুলো হলো কর্কট ক্রান্তি, মকর ক্রান্তি এবং বিষুব রেখা। ঠিক সেরকম চারটি উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত রেখা আছে সেগুলো হলো শূন্য ডিগ্রি, ৯০ ডিগ্রি, ১৮০ ডিগ্রি এবং ২৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা।এবারে একটা তথ্য দিতে পারি যেটা সবার জন্য নিঃসন্দেহে একটি চমকপ্রদ তথ্য হবে। চারটি উত্তর-দক্ষিণ রেখা এবং তিনটি পূর্ব-পশ্চিম রেখা, সব মিলিয়ে বারো জায়গায় ছেদ করেছে। নিঃসন্দেহে এই বারোটি বিন্দু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বারোটি বিন্দু। বারোটি বিন্দুর দশটি বিন্দুই পড়েছে সাগরে মহাসাগারে তাই মানুষ সেখানে যেতে পারে না। একটি পড়েছে সাহারা মরুভূমিতে সেখানেও জন-মানুষ যায় না। শুধু একটি বিন্দু (হ্যাঁ শুধু একটি মাত্র বিন্দু) পড়েছে শুকনো মাটিতে যেখানে মানুষ যেতে পারে, সেই বিন্দুটি পড়েছে আমাদের বাংলাদেশে। জায়গাটি ফরিদপুরের কাছে ভাঙ্গা উপজেলায়। কেউ যদি আমার কথা বিশ্বাস না করে গুগল ম্যাপে গিয়ে 23.5 N 90E লিখতে পারে সাথে সাথে সেটি কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা কোথায় ছেদ করেছে সেটা দেখিয়ে দেবে।সেই শৈশবে যখন বিষুব রেখা, কর্কট ক্রান্তি মকর ক্রান্তি এই বিষয়গুলো পড়েছি আমি তখন থেকে জানি বাংলাদেশের উপর দিয়ে কর্কট ক্রান্তি গিয়েছে। সেটা গিয়েছে কুমিল্লা যশোর এই এলাকার উপর দিয়ে। কিন্তু ঠিক কোথায় সেই রেখাটি সেটা জানার অনেক কৌতুহল ছিল কিন্তু জানার কোনো উপায় ছিল না। কেউ একজন বলেছিল এটা নাকি কুমিল্লা শহরের টমসন ব্রিজের উপর দিয়ে গিয়েছে, আমি সেই জায়গাটা বের করে গিয়েছিলাম (আসলে তথ্যটি সঠিক নয়, প্রকৃত কর্কট ক্রান্তি আরও দুই কিলোমটার উত্তরে!)।এখন সস্তা থেকেও সস্তা টেলিফোনে জিপিএস থাকে তাই পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ বের করে ফেলা যায়। কিন্তু আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন পর্যন্ত জিপিএস সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। দুই হাজার সালে সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং বাজারে জিপিএস কিনতে পাওয়া যেতে থাকে। আমি একবার আমেরিকা গিয়েছি এবং সেখানে থেকে একটা জিপিএস কিনে এনেছি। সেই জিপিএসকে সম্বল করে আমি প্রথমবার ঢাকা চট্টগ্রাম রাস্তায় ঠিক কোথায় কর্কট ক্রান্তি পার হয়েছি সেটা বের করে আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলাম। আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল, যে রাস্তার পাশে একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিই সেখানে লেখা থাকবে, “আপনারা এখন পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক রেখা কর্কট ক্রান্তি পার হতে যাচ্ছেন!” তবে আমার ইচ্ছে বাস্তবায়িত হয়নি আমি টের পেয়েছিলাম রাস্তার পাশে ইচ্ছা করলেই সাইনবোর্ড লাগানো যায় না। এবং আমি প্রতিবার কর্কট ক্রান্তি পার হলেই যেভাবে আনন্দে চিৎকার করি অন্য সবাই সেভাবে চিৎকার নাও করতে পারে!
খুব সঙ্গত কারণেই একদিন আমি তারপর একজনকে সাথে নিয়ে কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দুটি খুঁজে বের করার জন্য বের হলাম। আগেই ম্যাপে জায়গাটি দেখে রেখেছি কিন্তু ঠিক কোন দিক দিয়ে যেতে হবে জানি না। খুঁজে খুঁজে সেই জায়গাটি বের করতে হয়েছে, ভয় ছিল হয়তো গিয়ে দেখব আসলে সেটা একটা নদীর ভেতর কিংবা বিলের ভেতর পড়েছে। তখন আমার দুঃখের শেষ থাকবে না। কিন্তু দেখলাম জায়গাটি ছোট একটা রাস্তার পাশে একটা ক্ষেত। যখন আমি গিয়েছি তখন সেখানে মটরশুটি না হয় কলাই লাগানো হয়েছে। আমি কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুললাম। আমি নিশ্চিত জমি চাষ করার সময় অনেক মানুষ এই বিন্দুটির উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছে কিন্তু এই জায়গাটির অচিন্ত্যনীয় ভৌগলিক গুরুত্ব অনুভব করে সম্ভবত আর কেউ এখানে পা দেয়নি। প্রতি বছর জুন মাসের ২১ তারিখ (অর্থাৎ ঠিক এক সপ্তাহ আগে) দুপুর বারোটার সময় কেউ যদি বাইরে দাঁড়ায় এবং আকাশে মেঘ না থাকে তাহলে আবিষ্কার করবে সূর্য ঠিক মাথার উপর এবং সেজন্যে সেখানে তার কোনো ছায়া পড়ছে না। কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার সেই ছেদ বিন্দুতে সেটি একেবারে পুরোপুরি আক্ষরিকভাবে সত্যি। তবে বাংলাদেশ যেহেতু ছোট এবং সূর্য যেহেতু ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে তাই সারাদেশেই এটা দেখা সম্ভব। তবে জুন মাস বর্ষাকাল এবং প্রায় সময়েই আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। আমি যখন শাবিপ্রবিতে ছিলাম, তখন আকাশ মেঘ না থাকলে জুন মাসের ২১ তারিখ দুপুর বারোটায় ছাত্র এবং সহকর্মীদের নিয়ে খেলার মাঠে দাঁড়িয়ে অনেকবার ছায়াহীন মজার ছবি তুলেছি।যাই হোক আমার কাছে মনে হয়েছে কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদবিন্দু এই জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বলা যায় এটি সারা পৃথিবীর একমাত্র এরকম একটি জায়গা। মাদাগাস্কার উপর দিয়ে মকর ক্রান্তি গিয়েছে এবং শুনেছি সেটাকেই তারা গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের বেলায় শুধু কর্কট ক্রান্তি নয় তার সাথে ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাও আছে এবং সেটি একটি নির্দিষ্ট বিন্দু। বলা যেতে পারে এটি হচ্ছে একটা মানমন্দির তৈরি করার জন্য একেবারে আদর্শতম জায়গা। যেহেতু পৃথিবীর আর কোথাও এরকম নেই তাই অন্যরা কীভাবে করেছে তার সাথে তুলনা করারও কিছু নেই। আমরা যেভাবে করব সেটাই হবে একমাত্র উদাহরণ। এটা যে শুধু একটা মানমন্দির হবে তা নয় এটা যদি ঠিকভাবে তৈরি করে সবাইকে জানানো যায় তাহলে শুধু যে দেশ থেকে মানুষজন জায়গাটতে একবার পা দিতে আসবে তা নয় সারা পৃথিবীর থেকেই আসবে। এটা হতে পারে দেশের অন্যতম একটা পর্যটন কেন্দ্র। যদি বিশ্বমানের একটা মানমন্দির তৈরি করা যায় তাহলে আমরা সেটা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করতে পারি। আসলে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক তাই ছোট খাটো স্থাপনা তাঁকে উৎসর্গ করে হয়তো তাকে যথাযথ সম্মান দেখানো হয় না, কিন্তু সারা পৃথিবীর একমাত্র এধরণের একটি জায়গায় একটা মানমন্দির তৈরি করা হলে সেটি নিশ্চয়ই তাকে উৎসর্গ করা যাবে। বঙ্গবন্ধুর নামেই সেই মানমন্দিরটি তৈরি করা যেতে পারে।
সেটি করার জন্য সবার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটা অধিগ্রহণ করতে হবে। আমি বহুদিন থেকে এই প্রক্রিয়াটা শুরু করার চেষ্টা করে আসছি। এটা নিয়ে বেশি আলোচনা করি না কারণ যদি কোনো একজন ঋণ খেলাপী জমি খেকো কোটি কোটি পতি এটা সম্পর্কে জেনে যায় এবং জায়গাটার দখল নিয়ে সেখানে একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক বানানো শুরু করে দেয় তাহলে কী হবে? বলাই বাহুল্য পুরো ব্যাপারটাই আমার অসংখ্য স্বপ্নের মত একটা স্বপ্ন হিসেবে রয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল যদি কোনোভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টা জানানো যেতো তাহলে তিনি হয়তো কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন। কিন্তু একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কীভাবে নিজের একটি ব্যক্তিগত স্বপ্ন নিয়ে যাওয়া যায় কিংবা আদৌ যাওয়া সম্ভব কী না সেটা আমার জানা ছিল না।এখন একেবারে হঠাৎ করে আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল, আমি আবিষ্কার করলাম বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটিতে আমার নাম আছে, এবং সেই কমিটির একটি সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হল। সেই সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। শুধু তাই নয় সেই সভায় সবাই যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে কী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা করছেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি আমার এই দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নটির কতা দেশের অনেক গণ্যমান্য মানুষের সামনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বরার সুযোগ পেলাম। আমি বেশ অবাক হয়ে এবং খুব আনন্দের সাথে লক্ষ্য করলাম সভার সকল গণ্যমান্য মানুষ এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রস্তাবটি খুব পছন্দ করলেন। প্রধানমন্ত্রী জায়গাটি কোথায় জানতে চাইলেন, যখন আমি বললাম সেটি ভাঙ্গা উপজেলার কাছাকাছি তিনি খুশি হয়ে বললেন আমাদের পদ্মা ব্রিজ ঠিক সেখানেই শেষ হবে। একেই নিশ্চয়ই বলে সোনায় সোহাগা! আমি উৎসাহ পেয়ে বললাম, যদি সেখানে সত্যিই বঙ্গবন্ধুর নামে একটা মানমন্দির বসানো হয় তাহলে আমরা দেশের ছেলেমেয়েদের নিয়ে পুরো কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা বরাবর কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়ে দিতে পারি। সেই কৃষ্ণচূড়া গাছে যখন ফুল ফুটবে তখন বাংলাদেশের উপর দিয়ে যখন কোনো প্লেন যাবে তারা অবাক হয়ে দেখবে সবুজ দেশটির মাঝখানে দুটো লাল রেখা। যে বিন্দুতে ছেদ করেছে সেখানে আমাদের বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে একটি মান মন্দির। কী চমৎকার!
আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির” স্থাপন করার জন্য একটা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে! কারিগরি কমিটি তৈরি করে তারা একটি সভা পর্যন্ত করে ফেলেছে! কাজেই আমি যদি বলি আমি ভাগ্য বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, কেউ কী আমাকে দোষ দিতে পারবে?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................