আর এস এস প্রতিষ্ঠার কারন।

******************
“আর এস এস প্রতিষ্ঠার কারন”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

‘ইতিহাস লেখা হয় বিজয়ীর জন্য এবং তার পক্ষে ’ এটি একটি আপ্তবাক্য। ভারত্তের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এমন ভাবে রচনা করা হয়েছে যা বলে ‘গান্ধী এবং নেহেরু’ ই আমাদের দেশ কে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু এই দুই চক্রী কিভাবে দেশ টাকে ভাগ করলো এবং তার ফলে যে মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে গেল, সেই সংগে পাকিস্তান নামক একটি বিষফোঁড়া চিরকালীন সমস্যার সৃষ্টি হলো তার বিবরন আর পাওয়া যায় না। এই ইতিহাস একপেশে, অর্ধসত্য। এই ইতিহাস বলে না , কতো কতো স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং সাধারন ভারতবাসীর রক্তের বিনিময়ে এই খন্ড স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। আমরা এই প্রশ্ন আজ আর করিনা, এটা কি সত্যিই স্বাধীনতা? দেশভাগের মতো এক “মহাপাপ” আমরা অবলীলায় মেনে নিয়েছি। যারা এটা করে মহান হয়েছেন এবং ক্ষমতা ভোগ করছেন তারা ‘মহাপাপী’।

১৯০৬ সাল , এমন একটা সময় , যখন সারা ব্রিটীশ সাম্রাজ্যে ‘সুর্য্য অস্ত যেতো না’। কিন্তু সেই পরম পরাক্রম শালী ব্রিটিশ সরকার তার বঙ্গ ভঙ্গ করার দুরভিসন্ধি থেকে সিদ্ধান্ত পালটে আবার দুই বাংলাকে এক করতে বাধ্য হলো। সারা বিশ্বে রাজত্ব করা ব্রিটিশ জানতো স্বঃতস্ফুর্ত জন আন্দোলনের কি ক্ষমতা।  রাশিয়ার ‘জার বিরোধী আন্দোলন’ ব্রিটিশের চোখ আরো খুলে দিলো।  তারা জানতো, ভারতের এই যে ব্রিটিশ বিরোধী গন আন্দোলন শুরু হয়েছে তাকে বন্ধ না করতে পারলে ব্রিটিশ এক বিদেশী দখলকারী হিসাবে আর খুব বেশী দিন ভারত শাসন করতে পারবে না। 

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ‘ভারত সভা হল’ এ সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী যে ব্রিটিশ বিরোধি আলোচনা সভা করতেন এবং কলকাতার ‘বুদ্ধিজীবি এবং অভিজাত শ্রেনী’ যারা বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারা ব্রিটিশ বিরোধী’ হয়ে পড়ছিলেন, তার থেকে মুক্ত হতে ‘কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা অক্টভিয়ান হিউম’ সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কংগ্রেসে শামিল করলে। 

ভারতের সাধারন মানুষ তখন জেগে ঊঠেছে। রাসবিহারী বসু, ঋষি অরবিন্দ, বারীন ঘোষ, চিত্ত রঞ্জন দাশ, বিপিন চন্দ্র পাল প্রমুখ ‘চরম ব্রিটিশ বিরোধি’ তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শুরু হয়েছে ‘ব্যায়াম করার আখড়া’ র নামে অনুশীলন সমিতি”। সাধারন মধ্য বিত্ত যুব সমাজ এই অনুশীলন সমিতির সদস্য এবং দেশ স্বাধীন করার ‘অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত’। বাংলা তখন উত্তাল। 

বাংলার মুসলীম সমাজ নিজেদের এই ‘স্বদেশী আন্দোলন” থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনে তাদের কোনো ভুমিকাই ছিলো না, একমাত্র নীরব দর্শক ছাড়া। ব্রিটিশের ছিলো সুদুরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা। ভারত হাত ছাড়া হলে তাদের ‘বিশ্ব সাম্রাজ্য’ চলে যাবে। ব্রিটিশের পরোক্ষ মদতে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা হলো ‘মুসলীম লীগ’, ঢাকার নবাব এবং কিছু উচ্চবিত্ত মুসলীম ব্যাবসায়ী দের নিয়ে। এক বিষবৃক্ষের বীজ রোপন করা হলো। 

কংগ্রেস “ব্রিটিশের সংগে আপোষকামী’, ‘মুসলীম লীগ’ এক বিষবৃক্ষ, মহীরুহ হবার অপেক্ষায়, অন্যদিকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ‘চরম সংগ্রাম’ করার জন্য শুধু বাংলায় নয় সারা ভারতে এক দেশ প্রেমী বৃন্দ। শেষ দলে আছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপিন চন্দ্র পাল, মহারাষ্ট্রে বাল গঙ্গাধর তিলক, পাঞ্জাবে লালা লাজপত রায়। হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠাতা বীর সাভারকার আন্দামানের জেলে পচে মরছেন। আরো কয়েক শো ‘চরম ব্রিটিশ বিরোধী’ আন্দামানের জেলে। 

এদিকে দক্ষিন আফ্রিকা থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে এক ‘শান্তির দুত’ করম চাঁদ গান্ধী কে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি হলেন কংগ্রেসের সর্বে সর্বা। তার সঙ্গে মত পার্থক্যের কারনে জিন্না গেলেন লন্ডনে আইন ব্যাবসা শুরু করতে। একের পর এক বিদ্রোহী ভারত মাতার দামাল সন্তান গুলোকে পাঠানো হলো ‘আন্দামানের জেলে”। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ গান্ধীর ওপরে বিরক্ত হয়ে ছাড়লেন কংগ্রেস, তৈরী করলেন “ স্বরাজ দল”। সুভাষ বোস তখনো লন্ডনে। ব্রিটিশের ধামাধরা, তাদের অঙ্গুলী হেলনে চলা ‘কংগ্রেস’ তখন গান্ধীর “অহিংসার বাধনে’ বদ্ধ। একমাত্র নেহেরু, যিনি—“শিক্ষায় ইংরেজ, সংষ্কৃতিতে মুসলীম, হিন্দু শুধু মাত্র জন্মের পরিহাসে”, তিনি ছাড়া আর বিশেষ কেউ নেই। ব্রিটিশ চেয়েছিলো নেহেরু থাকুন। 

 এদিকে শুরু হয়েছে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ।  নিজের নাম যশ বাড়ানোর জন্য গান্ধী শুরু করেছিলেন “আইন অমান্য আন্দোলন”। স্বদেশী আন্দোলনের পুরোধারা এবং বাংলা পাঞ্জাবের দামাল ছেলে মেয়ে গুলো যোগ দিয়েছিলো সেই চরম আন্দোলনে। সেই আন্দোলন যখন প্রায় ব্রিটিশের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলো, গান্ধী ‘হিংসার’ অজুহাত তুলে সেটা বন্ধ করে দিলেন। নইলে আমাদের দেশ অনেক আগেই স্বাধীন হয়ে যেতো। নিজের মাত্তৃভুমিকে ভাগ করতে হতো না। সুদুর লন্ডনে বসে একমাত্র সুভাষ বলেছিলেন “ It is a National Suicide”, এক চরম সত্যি কথা। 

ঠিক এই প্টভুমিকায়, এমন একটি সংগঠনের প্রয়োজন হয়েছিলো যার সদস্যা রা শুধু মাত্র রাষ্ট্র হিতে, ভারত মাতার সেবা করবে, ভারতকে পুনরায় বিশ্ব মাঝে জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লভিতে কাজ করবে। স্থাপন করা হয়েছিলো “রাষ্টীয় স্বয়ং সেবক সংঘ”। ( এবারে আমরা আসবো তার মুল কথায়)।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted