আর এস এস, হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদের প্রাসঙ্গিকতা।

“আর এস এস, হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদের প্রাসঙ্গিকতা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

(ভুমিকা)

রাষ্ট্রীয় স্ব্যয়ং সেবক সঙ্ঘ ( আর এস এস) বর্তমান পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ‘সামাজিক, জাতীয়তাবাদী এবং সাংষ্কৃতিক’ সংস্থা। যে সংস্থাকে,  ১৯২৫ সালে তার প্রতিষ্ঠা থেকে আজো অবধি অন্য দেশে কেনো আমাদের ভারতেও সঠিক মুল্যায়ন করা হয় নি , হয়না। বেশীর ভাগ মানুষ, যারা এই প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক পরিকাঠামোর বাইরে আছেন, আর এস এর আদর্শে অনুপ্রানিত নন, তারা বোঝেন না, কেনো এই সংগঠন তৈরী করা হয়েছিলো, এর মুল আদর্শ, বর্তমান সামাজিক,-সাংষ্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতে এর প্রয়োজনীয়তা কতোখানি। 

আর এস এস কে পছন্দ করতে, ভালোবাসতে , এই সংস্থার আদর্শে অনুপ্রানিত হবার আগে, আর এস এস কে  অপছন্দ করা, গালাগাল দেওয়ার আগে জানা দরকার, এই সংঘটনের মুল আদর্শ, কেনো কিভাবে এবং কোন পরিস্থিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ তৈরী হয়েছিলো। একটি সংস্থা বা সংগঠন যার সক্রিয় সদস্য ৬০ লক্ষ, এবং প্রতিদিন সারা ভারতে এবং দেশের বাইরে তার নিয়মিত ‘শাখা’ (নিত্যকার প্রশিক্ষন শিবির) হয় , সেই সংস্থাকে নানা ঘৃনাত্মক ভাষা দিয়ে বিদ্ধ করা সপুর্ন অনুচিত , যা অনেকেই প্রতিনিয়ত করে থাকেন। বহুজনে আর এস এস কে নাৎসীবাদ এবং মুসলিম বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে শ্লাঘা বোধ করেন। বর্তমান পৃথিবীর ‘সন্ত্রাসী মুসলিম’ সংগঠনের সঙ্গে আর এস এস কে এক পংতিতে বসিয়ে গাল দেন। সত্যের এমন অপলাপ এবং আসল সত্যের থেকে সম্পুর্নভাবে বিচ্ছিন এবং বহু দুরের আর কিছু হয় না।

প্রায় ৯৫ বছর আগে ২৫ শে সেপ্টেম্বর, আর এস এস এর প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার। অনেকেই এই প্রতিষ্ঠার পিছনের ইতিহাস জানেন না। অনেকেই জানেন না, কেনো হেদগেওয়ারজী কলকাতায় এসেছিলেন এবং কলকাতা ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজে ( ভাগ্য বলে আমিও সেই কলেজ থেকে পাশ করেছি) ডাক্তারী পড়েন। সারা দেশে আরো অনেক মেডিকেল কলেজ থাকতে ‘ কলকাতা ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজ’ কেনো?? অনেকেই সমালোচনা করেন, আর এস এস “ গান্ধীর দ্বারা পরিচালিত’ স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অন্দোলন করেনি। এর কারন বুঝতে গেলে , অনেক কিছুই আছে যার সুক্ষ্ম পর্যালোচনা প্রয়োজন এবং “ডাক্তারজী’ কে জানতে হবে ,বুঝতে হবে তার প্রকৃত মানসিকতা। 

১৯০৫ সাল থেকে, সোভিয়েট রাশিয়াতে সাধারন মানুষজন ‘জার’ এর ‘সার্বিক একনায়ক্তন্ত্র’র প্রতি অসন্তুষ্ট হতে শুরু করে। ঠিক সেই বছর ই ভারতে লর্ড কার্জন বাঙ্গলা প্রদেশকে বিভক্ত করেন প্রসাশনিক সুবিধার নাম করে। বাংলার হিন্দু জনগন এই ভাগ মেনে নিলো না। শুরু হলো তুমুল আন্দোলন, যার নেতৃত্ব দিলেন বাংলার অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি, যারা আজো প্রাতস্মরনীয় মহাজ্ঞানী ,মান্যবর ব্যাক্তিত্ব। বঙ্গ বঙ্গ বিরোধী সেই বিপ্লবী আন্দোলন এক বছরের মধ্যেই সফল হয়, ব্রিটিশরাজের পিছু হঠতে হয়। 

বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলন এবং তার সফলতা ভারতের ভুমিপুত্র হিন্দুজাতিকে তার ১০০০ বছরের পরাধীনতার শৃংখল মোচনে উৎসাহিত করলো, শুরু হলো দেশ ব্যাপি এক ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ এর সুচনা। ভারতের মুসলমানরা এই দুটির কোনোটিতেই সামিল হলো না বরং ঢাকায় প্রতিষ্ঠা হলো “ মুসলীম লীগ” ঠিক সেই ১৯০৬ সালে। মুসলীম লীগের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো “মুসলীম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা’, দেশ বা দেশের অন্য সম্প্রদাইয়ের জন্য তাদের কোনো মাথাব্যাথা ছিলো না। 
এর কিছুদিন পরেই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং সোভিয়েট রাশিয়া এতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মারা যায় প্রায় ৬ মিলিয়ন রাশিয়ান। এর ফলে শুরু হয় “জার বিরোধি” সংগ্রাম। একটি জার বিরোধী ‘ প্রাথমিক সরকার’ ও গঠিত হয় কিন্তু সেটা টিকলো না। তখন “ট্রটষ্কি’ তার সাংগঠনিক প্রতিভা দিয়ে শুরু করেন শ্রমিক, কৃষক এবং জন্সাধারন কে “জার বিরোধী আন্দোলনে’ এক সুত্রে গেথে ফেলতে।

লেনিন তখন বাস করতেন সুইৎজারল্যন্ডে। সুযোগ বুঝে তিনি চলে এলেন রাশিয়ায় এবং তার বামপন্থী দল তৈরী করলেন যার নাম “বলশেভিক দল”। তিনি যখন দেখলেন যে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে তখিন তিনি পালিয়ে গেলেন ‘ফিনল্যান্ড’ এ। সেখানে বসে লেলিন পড়াশুনা করলেন মার্ক্স, এঙ্গেলস এর ক্যমুনিষ্ট মতবাদ, তৈরী করলেন “ক্যমুনিষ্ট মেনিফেষ্টো’।

লেনিন যখন ফিনল্যান্ডে নিরাপদে আছেন, রাশিয়াতে তখন ট্রটষ্কির নেতৃত্বে শুরু হয় প্রবল জার এবং ‘ডুমা’ ( রাশিয়ান পার্লামেন্ট) বিরোধি সংগ্রাম। “জার পন্থী’ এবং ‘জার বিরোধী’ সিভিল ওয়ার। সুজোগ বুঝে লেনিন এসে গেলেন রাশিয়ায়। ট্রটষ্কির তৈরী করা ‘জন গন আন্দোলনে’ সামিল হয়ে তার নিজ দলকে (বলশেভিক) বাড়িয়ে নিলেন। লেনিন বেছে নিলেন এক “ গ্যাং লীডার” এবং নৃষংশ মানসিকতার ( ডাকাতি মাস্তানীর সর্দার) ষ্ট্যলিনকে তার সহযোগী হিসাবে। তাকে বললেন এক “সামরিক বাহিনী’ তৈরী করতে, নাম হলো “লাল ফৌজ”। শুরু হলো স্ট্যালিনের নেতৃত্ব পরিচালিত ‘লাল ফৌজের’ মারন যজ্ঞ। মারা গেলো প্রায় ২ মিলিয়ন সাধারন রাশিয়ান। তাদের রক্তে তখন ভেসে গেলো সারা রাশিয়া।

লেনিন মারা যান ১৯২৪ সালে। রাশিয়ার ক্ষমতায় এলেন স্ট্যালিন , এক ক্রুর রক্ত পিপাসু শাসক। আরো প্রায় ৩০ মিলিয়ন রাশিয়ানকে মারা হলো স্ট্যালিনের রাজত্ব কালে। মানুষের প্রতি অবিশ্বাস, ঘৃনা থেকে যে অমানবিক মত তৈরী হয় তা টেকে না। শেষ হলো ১৯৯১ সালে। নাৎসী বাদ, মার্ক্সসিজম এবং দুটি সিমেটিক ধর্ম , যাদের মতবাদ টাই মাত্র একটি মানুষের কথায় চলে তা বেশীদিন থাকে না, সাধারন মানুষের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এক ‘মানবিক শাসন ব্যাবস্থা’। 

অমানবিক, নৃশংষতা পুর্ন মতবাদের ঠিক বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে তৈরী হলো আর এস এস--- মানবিকতা এবং সংষ্কৃতির মাধ্যমে দেশ সেবাই যার ব্রত। রাশিয়ার “বলশেভিক দল তৈরী হবার কিছু পরেই তৈরী হলো আর এস এস। মাত্র ৯০ বছরের মধ্যে নৃশংস ক্যমুনিষ্ট তার নিজের দেশ থেকেই মুছে গেলো, পৃথিবী থেকে মুছে গেলো ( পশ্চিম বংগ এবং কেরালা বাদ) । অন্য দিকে আর এস এস বিগত ৯৫ বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। 

তার কারন, আর এস এস সেই দেশে এবং সেই দেশের প্রাচীন মতবাদ ( যা চলে আসছে প্রায় ১০০০০ বছর ধরে) গ্রহন করেছে-“ বসুদেব কুটুম্বকম’, সর্বম ক্ষল্লিদং ব্রহ্ম’, যার হদিশ ওই রাশিয়ান নরখাদক এবং মরুভুমির রুক্ষভুমি থেকে মাত্র একজন মানুষের মুখের বুলি থেকে উদ্ভুত নয়। 
******************

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted