আজকের নবীন প্রজন্ম এবং মা বাবা দের দান বা অবদান --
এখন অধিকাংশ মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারেই সন্তান সংখ্যা সাধারণত এক, খুব কিছু ক্ষেত্রে দুই। এক অন্ন বর্তী পরিবারের বিলোপ সম্পূর্ণ হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতামাতা উভয়েই চাকুরীরত। বা পিতা চিকিৎসক বা আইনজীবী বা চাটার্ড আক্যাউন্ট্যান্ট, কিছু ক্ষেত্রে সফল ব্যবসায়ী। বাবা মা, বিশেষত মায়েদের জগতের অনেকখানিই আবর্তিত হচ্ছে সন্তান/ সন্তান দের ঘিরে।
অধিকাংশ পরিবারেই ঠাকুমা বা বিধবা পিসি র উপস্থিতি নেই এবং কথ্য ভাষা সাধারণত সামান্য কিছু বাংলা ও হিন্দি মেলানো ইংরেজি। বাংলা বই হয়তো সুদৃশ্য বুককেসে সাজানো আছে, তবে তা পড়া হয়ে ওঠে না সময় ও ইচ্ছাভাবে।
পুত্র কন্যারা অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যলয়ের ছাত্রছাত্রী, এবং বাবা মায়ের মতই এরা ইংরেজিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য।
মায়ের বা অভিভাবকদের নিষেধে এরা বন্ধু দের নিজেদের নোটস্ ও দেখায় না, বই বা খাতা বন্ধু কে দু দিনের জন্যে দেওয়ার কথাও ভাবতে পারে না। ফলতঃ এদের সমবয়সী দের সঙ্গে প্রকৃত বন্ধুতা টাই গড়ে ওঠে না, সুস্থ মানসিকতার নির্মাণে যা অতি প্রয়োজনীয়। এরা সহপাঠী বা সহপাঠিনী কেও বন্ধুর চোখে না দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী র চোখে দেখে।
স্বাভাবিক কারণেই সবাই একইরকম সফল হয় না, এবং বন্ধুতার পরিবর্তে তখন শত্রুতার উন্মেষ হয়। তৈরী হয় একটি কুতসিৎ মানসিকতার, অতি অল্প বয়েস থেকেই।
এতো গেল মানসিক স্বাস্থ্য, এবারে শারীরিক স্বাস্থ্যে আসুন।
সারাদিন স্কুল, কোচিং আর কম্পিউটার ক্লাস সেরে হা ক্লান্ত হয়ে এরা যখন বাড়ি ফেরে, তখন স্নেহময়ী জননী রা টেলিভিশন এর বিজ্ঞাপিত যথেচ্ছ হেলথ ড্রিংক, এবং অপ্রয়োজনীয় ভিটামিন এদের খেতে বাধ্য করেন, যাদের অধিকাংশ ই সুগারে ভরপুর। মন খারাপ হলেই রাশি রাশি নরম পানীয় এবং একটু গরম পড়লেই টেলিভিশনে বিজ্ঞাপিত গ্লুকোজ খাওয়াতে থাকেন, টিফিনে দেন কেক, পেস্ট্রির মতো চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য। আবার সপ্তাহান্তে একদিন বা দুদিন বাহিরে রেস্তোরাঁয় খাওয়া ও এখন ইন থিং। এর ফল ওজন ও মেদবৃদ্ধি। একেই শারীরিক পরিশ্রমের সময় ও সুযোগ নেই, তদোপরি সারাদিন রাতে ৮ থেকে ১০ বার অখাদ্য গ্রহণ। ( মায়েরদের কাছে অবশ্যই সুখাদ্য)। এই বর্ধমান ওজন ও ক্রমাগত বাড়তেই থাকে এবং অধিকাংশ কিশোর কিশোরী ই ২০ বছর বয়সে মোটা হয়ে যায়, এবং যা থেকে আরো কয়েক বছর গড়ালেই আসবে বিভিন্ন ভয়ংকর জীবনশৈলী জনিত রোগ বা life style disorder. মেয়েরা PCOS এ আক্রান্ত হবে এবং পরে মা হতে সমূহ অসুবিধে হবে বা মা হওয়া আদৌ সম্ভব ই হবে না।
সব মিলিয়ে একটি মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ প্রজন্ম তৈরী হয়েছে এবং হচ্ছে।
আরো বেদনার হলো এরা বিয়ের পরে একটু প্রতিষ্ঠিত হলেই, হয় বিদেশে বা ভারতের অন্য কোন দ্রুত বর্ধনশীল, পশ শহরে চলে যাবে, এবং স্বাভাবিকভাবেই মা বাবার অবসরোত্তর আশ্রয় হবে বৃদ্ধাশ্রম, সে কোন সংস্থায় হোক বা সল্ট লেক সিটিতে। বয়স্কা বাবা মা মনে মনে বড়ো দূঃখ পান বটে, অসুস্থ ও অনেকেই, কিন্তু এই অবস্থার জন্যে তাঁরা নিজেরাই যে সবচেয়ে বেশি দায়ী, বুঝলেও স্বীকার করতে কেমন গলায় আটকে যায়। অথচ এটিই তো তারা আত্মজ বা আত্মজা দের বার বার বুঝিয়েছেন। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তদোপরি পুত্র বা কন্যা তাদের নিয়মিত ভাবেই অর্থ পাঠায়, কিন্তু নিঃসঙ্গতা নিঃশব্দে, নিশ্চিতভাবেই নিরন্তর নিরঙ্কুশ ভাবে কুরে কুরে খাওয়াই তাঁদের নিয়তি।।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................