দিল্লী দাঙ্গাতে হতদের তালিকায় দেখা যাচ্ছে দুই সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় সমান।কিন্তু বিবিসি সহ বাংলাদেশ মিডিয়া শিরোনাম করছে শুধু বেছে মুসলিম হত্যা করছে।

আমি নিশ্চিত দিল্লিতে যারা মুসলিম পরিচয় দেখে, মুসলিম পাড়া জেনেই বাড়িতে আগুন দিচ্ছে, মসজিদে আগুন দিচ্ছে তাদের পরিচয় তারা হিন্দু। কারণ তারা ধর্মীয় প্রতিহিংসা থেকেই এ কাজ করতে গেছে তাই তাদের ধর্মীয় পরিচয়টাই এখানে মুখ্য। তাই বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে যে শিরোনাম আসছে সেগুলোকে আমি সমর্থন করি। যেমন ‘হিন্দুত্ববাদীরা বেছে বেছে মুসলমানদের হত্যা করছে’ বা ‘হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের মসজিদে আগুন দিলো’। কিন্তু এই কাগজগুলোর শিনোরাম যারা করেন তারাই নাসিরনগর হামলার সময় মুসলমান শব্দটি আড়াল করে লিখেছিলেন ‘দুর্বৃত্ত’। শরতকালীন মূর্তি ভাঙ্গা উৎসবের হোতাদেরও নাম ‘দুর্বত্ত’। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার সময় সারা বাংলাদেশে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদেরও পরিচয় লেখা হয়েছিলো ‘দুর্বৃত্ত’। এদের মুসলমান পরিচয়টি লেখা হয়নি কারণ এটাকে ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ হিসেবে দেখা হবে!

বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায় বাংলাদেশে রাত জেগে মুসলমানরা হিন্দুদের বাড়ি মন্দির পাহাড়া দিয়েছে। অভয় দিয়েছে কেউ কিছু করতে আসলে আগে আমাদের লাশের উপর দিয়ে করতে হবে। এরকম মানুষ সব দেশেই থাকে। দিল্লিতেও আছে। বহু হিন্দু তাদের মুসলিম প্রতিবেশীকে রক্ষা করছে। সম্প্রীতির আবহ তৈরি করছে। কিন্তু কোনটাই আসলে অসাম্প্রদায়িক সমাজের বিজ্ঞাপন হতে পারে না। যদি সাম্প্রদায়িক মানুষ সংখ্যায় কম হতো তাহলে কিছুতে পরিস্থিতি এতখানি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারত না। কিন্তু আমরা দেখলাম বাংলাদেশে মন্দির পাহারা দেয়াকে বড় করে দেখিয়ে সাম্প্রদায়িক সমাজ মানুষকে ছোট করে দেখানো হয়। এরাই দিল্লিতে হিন্দুদের মুসলিমদের প্রতি এগিয়ে আসাটাকে কিন্তু বলছে না ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। তারা বলছে ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে গেছে! হিন্দুদের উপর প্রতিহিংসা জাগানোর জন্য শিরোনাম লিখছে, হিন্দুদের হামলায় দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২! অথচ দাঙ্গা হতদের তালিকায় দেখা যাচ্ছে দুই সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় সমান! যদি হিন্দুরা বেছে বেছে মুসলমানদের হত্যা করে থাকে তাহলে হিন্দু লাশগুলো কারা বেছে বেছে ফেলেছিলো?

এরদোয়ান বলেছে ভারতে হিন্দুরা মুসলমানদের হত্যা করছে। আর্মেনিয়া খ্রিস্টানদের জেনোসাইডের রক্ত যাদের হাতে লেগে আছে তারা এখন ভারতের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে চোখ মুছছে! পৃথিবীতে এখন কেউ একথার প্রতিবাদ করে বলবে সন্ত্রাসীদের কোন ধর্মীয় পরিচয় নেই? কেউ কি এখন বলবে দুই একজন হিন্দুর জন্য আপনি সমস্ত সম্প্রদায়কে দায়ী করতে পারেন না? এখন কি কেউ বলবে হিন্দুফোবিয়া ছড়ানো হচ্ছে? এসব খালি মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ। যখনই মুসলমানরা অমুসলিমদের উপর হামলা চালাবে তখনই এইসব অস্ত্র বের করে সামনে আনতে হবে। আমি কিন্তু মনে করি দিল্লিতে ‘হিন্দুরাই’ মুসলিম মারছে, ‘মুসলিমরাও’ হিন্দু মারছে। তেমনি আমি চাই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলাকারীদের সবাই ‘মুসলমান’ বলুক। ধর্ম সম্প্রদায়কে আড়াল করে কিছুতে সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা যায় না।