পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কেন অনুভব হয়না ?
***********************************
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে এবং ৩৬৫ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে । এই গতিকে বলা হয় বার্ষিক গতি ।
আবার পৃথিবীর একটি লাটিমের ন্যায় নিজ অক্ষের চারদিকে সেকেন্ডে 364 মিটার বেগে ঘুরছে এবং ২৪ ঘন্টায় একবার নিজ অক্ষ প্রদক্ষিণ করছে । এই গতিকে বলা হয় আহ্নিক গতি ।
সাথে সাথে একজন বলে উঠল এটি বিজ্ঞানের মিথ্যা তথ্য এবং বিজ্ঞানীরা মানুষকে এইভাবেই ধোঁকা দেয় ।
ঘন্টায় ৬০ মাইল বেগে অর্থাৎ সেকেন্ডে মাত্র ২৯ গজ বেগে চলমান একটি গাড়িকত ঝাঁকুনির কারণে ঠিক থাকা যায় না ।
একটি রাইফেলের গুলির চেয়েও অধিক গতিতে অর্থাৎ সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবী চলছে । এইরূপ ভয়ানক দ্রুতগতিতে চলার পরও আমরা তা বিন্দুমাত্র অনুভব করতে পারছিনা । এটা কিভাবে সম্ভব ?
দ্বিতীয়তঃ একটি গাড়ি ইঞ্জিন এর সাহায্যে পরিচালিত হয় । কিন্তু পৃথিবী সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে চলছে , তাহলে তার এত বড় ইঞ্জিনটি কোথায় ? কেউ কি কখনো সেটি দেখেছে ? আসলে পৃথিবী, গ্রহ ,নক্ষত্র ইত্যাদি চলছে স্রষ্টার হুকুমে ।
৬০ মাইল বেগে ধাবমান একটি গাড়ির গতি সবসময় একরকম থাকে না এবং গাড়িটি সরলরেখায় চলাচল করতে পারে না । সবসময়ই ঘন্টায় ৩০, ৪০,৫০, ৬০ ইত্যাদি বিভিন্ন মাত্রার গতিতে এবং অসমান ও আঁকাবাঁকা পথে চলমান করে থাকে । সময়ের সাথে বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে । মূলত আমরা গাড়ির গতি অনুভব করতে পারি না । আমরা কেবলমাত্র গাড়ির গতি পরিবর্তনের ফলে যে পার্থক্য সৃষ্টি হয় তাকে, অর্থাৎ ত্বরণ বা বাধা বা ধাক্কাকে অনুভব করতে পারি । একটি বস্তু যত দ্রুত গতিতে চলুক না কেন যদি চলার গতিতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না আসে তবে তা আমাদের অনুভব হবে না । পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র সহ মহাবিশ্বের সমস্ত নক্ষত্র ,গ্রহ, উপগ্রহ, ধুমকেতু, উল্কাপিণ্ড, গ্রহাণু সমূহ সর্বদা তাদের নির্ধারিত গতিতে চলছে এবং ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একই গতিতে চলিতে থাকিবে ।
এর কারণ কি?
নিউটনের প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে,
" কোন গতিশীল বস্তুর চলার পথে যদি কোন বাঁধা না আসে তবে তাহা চিরদিন একই গতিতে চলিতে থাকিবে " ।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ,কার্বন ডাই-অক্সাইড, নানাবিধ ধূলিকণা, জীবাণু ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ । যেকোনো চলমান বস্তুর উপর বায়ুমন্ডলের বাধার কারণে তার গতি রোধ হয় । তাই তাকে অনবরত ইঞ্জিনের শক্তি দ্বারা বাতাসের বাধা অতিক্রম করে সম্মুখে অগ্রসর হতে হয় ।
কিন্তু মহাশূন্যে কোন পদার্থের অস্তিত্ব নাই । চারিদিকে কেবল শুন্য এবং শুন্য । কে কোন চলমান বস্তুকে ধাক্কা বা বাধা দিবে ? সেখানে কেউ নাই । তাই মহাশূন্যে কোন চলমান বস্তু চিরদিন একই গতিতে চলিতে থাকিবে । এই নিরবিচ্ছিন্ন একক গতির কারণে যেমন আমরা কোন ঝাকুনি অনুভব করি না, একই কারণে দিনরাত্রি, মাস, বছর ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি হিসাবেও কোন তারতম্য পরিলক্ষিত হয় না । এই বাধা না থাকার কারণে পৃথিবী চন্দ্র-সূর্য, বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রের নির্ভুল হিসাব করা সম্ভব হয় । যদি পৃথিবী সহ মহাশূন্যের সমস্ত গ্রহ নক্ষত্রের চলার পথে কোন বাধা থাকতো তাহলে তাদের গতির তারতম্য হেতু সমস্ত ক্ষেত্রেই তারতম্য পরিলক্ষিত হইত।
দ্বিতীয়তঃ যদি চলার পথে বাঁধা থাকত তাহলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল কে উপেক্ষা করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বহু পূর্বেই মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যেত ।
মহাশূন্যে রকেট প্রেরণের ক্ষেত্রে নিউটনের প্রথম সূত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । যেকোন রকেট এক ধাক্কায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তর অতিক্রম করে মহাশূন্যে পৌচতে পারলে, সেই গতিতে চিরদিন মহাশূন্যে চলমান থাকিবে । তাই ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপণের পর থেকে আজও
বিনা জ্বালানিতে ভয়জার-১ ও ভয়জার-২ সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার গতিতে চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও চলতে থাকিবে ।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................