যারা পাকিস্থান প্রেমে বিভোর লেখাটা তাদের জন্য।

যারা পাকিস্থান প্রেমে বিভোর লেখাটা তাদের জন্য।
.............................................................................
"যুদ্ধ শেষে ক্যাম্প থেকে কয়েকটি কাঁচের জার উদ্ধার করা হয়,যার মধ্যে ফরমালিনে সংরক্ষিত ছিল মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশ। অংশগুলো কাটা হয়ে ছিল খুব নিখুঁতভাবে।"
- ডাঃ বিকাশ চক্রবর্তী, খুলনা
.
"মার্চে মিরপুরের একটি বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে আনা হয় এবং কাপড় খুলতে বলা হয়। তারা এতে রাজি না হলে বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলে কে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।"
-মোঃ নুরুল ইসলাম, বাটিয়ামারা কুমারখালি।
.
"আমাদের সংস্থায় আসা ধর্ষিত নারীদের প্রায় সবারই ছিল ক্ষত-বিক্ষত যৌনাঙ্গ। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিড়ে ফেলা রক্তাক্ত যোনিপথ, দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেলা স্তন, বেয়োনেট দিয়ে কেটে ফেলা স্তন-উরু এবং পশ্চাৎদেশে ছুরির আঘাত নিয়ে নারীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতো।" 
-মালেকা খান
.
যুদ্ধের পর পুনর্বাসন সংস্থায় ধর্ষিতাদের নিবন্ধীকরণে যুক্ত সমাজকর্মী।
.
"১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে গিয়ে দেখি মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩জুন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা।"
-বিচারপতি এম এ সোবহান
.
"যুদ্ধের পর পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশ কিছু নারীকে। তাদের পোশাক এবং চলাফেরা থেকে আমরা অনেকেই নিশ্চিত জানতাম ওরা যুদ্ধের শিকার এবং ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।"
-ড. রতন লাল চক্রবর্তী, অধ্যাপক ইতিহাস বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
.
"কোনো কোনো মেয়েকে পাকসেনারা এক রাতে ৮০ বারও ধর্ষণ করেছে।"
-সুসান ব্রাউনি মিলার (এগেইনেস্ট আওয়ার উইল: ম্যান, উইম্যান এন্ড রেপঃ ৮৩)
.
"এক একটি গণধর্ষণে ৮/১০ থেকে শুরু করে ১০০ জন পাকসেনাও অংশ নিয়েছে।"
-ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির গ্রন্থ “যুদ্ধ ও নারী"।
.
মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। এই নরপশুর নেতৃত্বেই রাওফরমান, রহিম খান, টিক্কা খানের মত পাকিস্তানী জেনারেল এদেশের উপর চালায় শতাব্দীর ঘৃণ্যতম গণহত্যা। সেই সাথে এসব বিকৃত রুচির জেনারেলদের পরিকল্পনায় সংঘটিত হয় ধর্ষণের মহোৎসব।
.
আমার এখনকার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু মুক্তিযুদ্ধে নারী নির্যাতন, যত ঘাঁটছি আমার বিস্ময় তত বেড়েই চলছে। এই সেক্টরে এসে আমরা বরাবরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুরনো কিছু গল্প বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চাই, আর এর ফাঁকে আড়াল হয়ে যায় নির্মমতার অনেক গল্প, যে গল্প হার মানাবে হিটলারের নির্মমতাকে, আনা ফ্র্যাঙ্কের ডাইরিকে। আমার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত ধর্ষণের সংখ্যা হয়ত দশ লক্ষও হতে পারে।
জ্বি, ভাই আমি দশ লক্ষই বলছি।
হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে দেখেই বলছি। সম্ভবত সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের রেকর্ডটাও আমাদের পকেটেই যাচ্ছে। আর এই ধর্ষণ উৎসবের হালালাইজেশানটা করা হয়েছিলো ধর্মের নামে।
.
ব্রিগেডিয়ার আবদুল রহমান সিদ্দিকী তার "East Pakistan The End Game" বইতে লেখেন, "নিয়াজী জওয়ানদের অসৈনিকসুলভ, অনৈতিক এবং কামাসক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করতেন। 'গতকাল রাতে তোমাদের অর্জন কি আমার বাঘেরা?' চোখে শয়তানের দীপ্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন তিনি। অর্জন বলতে তিনি ধর্ষণকেই বোঝাতেন।"
.
সেপ্টেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের সকল ডিভিশান কমান্ডারের কনফারেন্সে এক অফিসার তুলেছিলেন পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক বাঙ্গালি নারীদের ধর্ষনের প্রসঙ্গ । নিয়াজী তখন সেই অফিসারকে বলেন,
"আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি। যুদ্ধক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিও।"
তারপর তিনি হেসে বলেন,
"ভালই তো হচ্ছে, এসব হিন্দুয়ানি বাঙ্গালি রক্তে সাচ্চা মুসলিম পাঞ্জাবি রক্ত মিশিয়ে তাদের জাত উন্নত করে দাও।"
আর এই ধর্ষণের পক্ষে তিনি যুক্তি দিয়ে বলতেন,
"আপনারা কি ভাবে আশা করেন একজন সৈন্য থাকবে,যুদ্ধ করবে, মারা যাবে পূর্ব পাকিস্তানে এবং যৌন ক্ষুধা মেটাতে যাবে ঝিলমে?"
ধর্ষণে লিপ্ত এক পাকিস্তানী মেজর তার বন্ধুকে চিঠি লিখেছে;
"আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে, তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানি।"
স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালি মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয়ান ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গনধর্ষনের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ-কারবার করেছিলো। অষ্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক বিচলিত হলেও পাক অফিসারদের সাচ্চা ধার্মিক হৃদয়ে কোন রকম রেখাপাত ঘটেনি। তাদের সরল জবাব ছিল,
"আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো যে একজন ভালো মুসলমান কখনই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।"
নিয়াজী ধর্ষণে তার সেনাদের এতই চাপ দিতেন যে তা সামলে উঠতে না পেরে এক বাঙালি সেনা অফিসার আত্মহত্যা করতে বসেন।
ঘৃণা আর ভালোবাসা একটা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ, আপনি কাউকে প্রচণ্ড ভালোবাসতে পারেন শুধুমাত্র তখনই যখন আপনি ঘৃণা করতে পারবেন তার বিপরীত সত্ত্বাকে। আপনি নিজেকে মনেপ্রাণে একজন বাঙ্গালি, একজন দেশপ্রেমিক তখনই বলতে বলতে পারবেন যখন পাকিস্তানকে, তাদের সমর্থকদের মনে প্রাণে ঘৃণা করতে পারবেন।
.
কৃতজ্ঞতায়ঃ শহীদ রুমী স্কোয়াড(সংগৃহীত)।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted