বৈদেশিক আগ্রাসন এবং ভারতবর্ষ।

“ বৈদেশিক আগ্রাসন এবং ভারতবর্ষ”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

***** লিখছিলাম যীশু খ্রীষ্ট ভারতে এসেছিলেন কি না। অনেকদুর এগিয়েছি। সতী দাহ নিয়ে লেখার পর আমার এক ভাইপো বললো বিদেশী আক্রমন এবং তার ভয়াবহতা নিয়ে না লিখলে আমাকে ব্লক করে দেবে। তাকে আমি খুব ভালোবাসি কিন্তু তার ধমকানি কে ভয় পাই। তাই এই বই টা লিখতে শুরু করলাম। এর অনেক কথা আমার লেখা আছে। দরকার এক জায়গায় গুছিল্যে পোষ্ট করা। ৬ মাস ও লাগবে না। ********

ভুমিকা

সনাতনী বৈদিক সভ্যতার সুতিকাগার এবং হিন্দু নামে পরিচিত মানব গোষ্টি, যারা সনাতনী কৃষ্টি, সংষ্কার, জীবন দর্শন থেকে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রা প্রনালী নির্বাহ করতে পছন্দ করে, সেই ভারতবর্ষ এক অতি প্রাচীন দেশ। এটা শুধু একটি ভুখন্ড নয়। আপামর হিন্দু জাতি এই ভুখন্ড টিকে নিজ মাতৃজ্ঞানে ভক্তি শ্রদ্ধা করে। 
 রাজা ভরতের নামে এই ভুখন্ডটির নাম ভারত বর্ষ। ঐতিহাসিক পুরুষ রাজা ভরত এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছেন, এখানকার ভুমিতে বসবাসকারী মানুষজনকে লালন পালন করেছেন। প্রাচীন এই পুন্য ভুমিতে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন এক শ্রেনীর মানুষ যাদের ভাবনা চিন্তা পরিশীলিত, উন্নত , মুক্ত মনা। তারা তাদের জ্ঞান মার্গে বিচরন করে, ধ্যান ধারনা দ্বারা এই মহাবিশ্বে বিরাজমান জ্ঞান রাশি আহরন করেছেন, তাকে লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন সমস্ত মানুষের কল্যানের জন্য।।  সেই লিপিবদ্ধ জ্ঞান রাশি এবং সেইমতো যে জীবন ধারন প্রনালী সেটাকে বলে “হিন্দু ধর্ম”।।  

হিন্দুরা, হিন্দু রাজারা, কোনোদিন তার নিজ বাস ভুমির সীমার বাইরে অন্য কোনো মানব গোষ্টির বাস ভুমি আক্রমন করেনি, অন্য মানুষের সম্পদ লুট পাঠ করেনি, অন্য কাউকে জোর করে, অনিচ্ছায় তাদের আধ্যাত্ম বিশ্বাসে আঘাত করে, তাকে নিজ মত ও পথ ত্যাগ করে ভীন দেশী সম্পুর্ন বিপরীত মত গ্রহন করতে এবং সেই পথে আসতে বাধ্য করেনি। এটা হিন্দুদের শিক্ষা, রুচি এবং ধর্ম বিশ্বাস বিরুদ্ধ। হিন্দুরা তাই কোনোদিন আগ্রাসী হতে পারেনি। উত্তরে, পশ্চিমে এবং পুর্বে উত্তুঙ্গ হিমালয়। হিমালয় হিন্দুদের আরাধ্য দেব দেবীদের বাসস্থান, হিমালয় হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র। এই পবিত্র স্থানকে যুদ্ধ বিগ্রহ করে, সৈন্য দের অতিমানী হুংকারে কলুষিত করা হিন্দুদের কাছে গর্হিত কাজ। যা গর্হিত তাই পাপ কাজ। হিন্দুদের মাতৃভুমির, যাকে হিন্দুরা মাতৃজ্ঞানে ভক্তি করে, তার পদ ধৌত করে রয়েছে সাগর, হিন্দুরা তার নাম দিয়েছে ভারত মহাসাগর।  

এই পবিত্র পর্বত মালা এবং পবিত্র মহাসাগর অতিক্রম করে, ভারত বর্ষের কোনো রাজা মহারাজারা কোথাও সৈন্য পাঠান নি। কিন্তু গিয়েছিলেন কিছু কিছু জ্ঞানী জ্ঞুনী তপস্বী। তারা এই ভারতবর্ষের বাইরেও প্রচার করেছিলেন তাদের আপ্ত্য জ্ঞান এবং সর্ব মানবের কল্যানকারী জীবন দর্শন প্রনালী। সেই মানব কল্যানকারী দর্শন গ্রহন করেছিলো পুর্ব দিকে বর্তমান ভিয়েতনাম অবধি (শ্যাম দেশ –বর্তমান  ‘থাইল্যান্ড’, কম্বোজ-বর্তমান কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের চম্পা রাজ্য, ইশানপুরা আজো সেই জ্ঞানী ঋষিদের শিষ্য দের দ্বারা তৈরী নিজ রাজ্যের মধ্যে তৈরী মন্দিরের নিদর্শন বয়ে বেড়াচ্ছে--- আঙ্কোর ভাট ইত্যাদি)। ইন্দোনেশিয়া, যে দেশ এক দ্বীপপুঞ্জের সমষ্টি, সেই দেশ ও এক সময় ছিলো আমাদের সনাতনী শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সনাতনি জীবন ধারন প্রনালীতে অভ্যস্ত। 

হিমালয়ের উত্তরে “বাহ্লীক প্রদেশ” (বর্তমান, তাজাকিস্তান এবং তার পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু অঞ্চল-সমরখন্দ,  তাসখন্দ –রাজা তক্ষকের রাজ্য ইত্যাদি) এই সনাতনি শিক্ষা গ্রহন করেছিলো। পুর্বে আফগানিস্তান (ঋষি আভাগানার শিষ্য এই রাজ্য শাসন করতেন) থেকে শুরু করে বর্তমান ইরাক, ইরান, বেশ কিছু আরবী দেশ ,যার মধ্যে পড়ে সৌদির মক্কা এবং আরো উত্তরে ইউরোপের জার্মানী, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, এই সব দূর দেশে পৌছে গিয়েছিলো এই ভারত বর্ষের মুনি ঋষি দের দর্শন। 
আমাদের ভারত বর্ষ, হিন্দুদের এই পবিত্র ভুমি, সনাতনি শিক্ষা এবং দর্শনের সুতিকাগার মুনি ঋষি দের এক বিচরন ভুমি, সর্ব প্রথম বৈদেশিক আগ্রাসনের শিকার হলো ৩২৭ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে। গ্রীস দেশ থেকে আগত এক ‘যুদ্ধবাজ’ আমাদের দেশ আক্রমন করে চালালেন অবর্ননীয়  হত্যালীলা। তার উপস্থিতি ছিলো সাময়িক। হিন্দু রাজা পুরু এবং পরে ‘মালী রাজ” এর বীরত্ত্ব এবং পৌরুষে ভীত সন্ত্রস্থ গ্রীক সৈন্য আর যুদ্ধ করতে সাহসী হলো না। ভারত বর্ষ দখল না করতে পেরে ভগ্ন মনো রথ , তথা কথিত “মহান”-( The Great) আলেকজান্ডার তার জীবনের শেষ যুদ্ধে পশ্চাদাপসরন করতে বাধ্য হলেন।।  
যুদ্ধবাজ হলেও আলেকজান্ডার ছিলেন ‘ শিক্ষিত, সংষ্কার সম্পন্ন। দার্শনিক ‘এরিষ্টটল’ এর কাছে শিক্ষা লাভ করা এই ‘গ্রীক রাজ’ দেশ জয় করতে ভালো বাসতেন, কিন্তু বিজিত দেশের মানুষজনকে ‘দাস’ বনানো, তাদের ওপরে অত্যচার করা, তাদের ঘরের মা বোনকে “যৌন দাসী” বানিয়ে নিজের দেশে নিয়ে যাবার মতো অমানুষিক প্রবৃত্তি, অসভ্যতা এবং বর্বরতা তার মধ্যে ছিলো না।  লুটপাট করা, সাধারন মানুষের ঘর বাড়ী ,শষ্য ক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেওয়া, পিপাষা নিবৃত্তির জলে ‘গোরুর মাংস এবং রক্ত দিয়ে দেওয়া, উৎকোচ দিয়ে দুর্গের গোপন দরজার সন্ধান জেনে রাতের অন্ধকারে সৈন্য সামন্ত ঢুকিয়ে ঘুমন্ত শত্রু সৈন্য দের মেরে রক্ত গংগা বইয়ে দেওয়া, বিজিত রাজার চোখে জ্বলন্ত লোহার শলা ঢূকিয়ে অন্ধ করে দাস হিসাবে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়া, বিজিত দেশের মানুষ জনের মা, বোন,স্ত্রী, কন্যাদের ওপরে বলাৎকার করা, পরিশেষে সেই মহিলাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে সুন্দরীদের নিয়ে নিজের ধর্মীয় প্রধানের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া এবং সেই সংগে ঝড়তি পড়তি (নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা শেষে) মহিলাদের নগ্ন করে বাজারে গরু ছাগলের মতো নারী লোলুপ বর্বরদের কাছে বিক্রি করে দেবার মতো মনুষ্ব্যেতর কাজ কর্ম আলেকজান্ডার কোনোদিন করেন নি।। 

আলেকজান্ডার ভারত বর্ষের সীমা ছেড়ে চলে যাবার প্রায় দেড় হাজার বছর পরে এই ‘ধন্য রাজার পুন্য দেশ’এর হিন্দুরা প্রথম বর্বরতার সম্মুখীন হলো। দেখলো, রক্ত লীলা কাকে বলে, অসভ্যতা কাকে বলে, অত্যাচারের ধরন কাকে বলে।  পুর্ব পুরুষের পরম্পরা মেনে ,নিজ ধর্মের পালন করতে গিয়ে বিদ্রুপ, গালাগালি, অসম্মান এবং জীবন হানির সম্মুখীন হতে হয় , সেই নিদর্শন, তার ভয়াবহতা, নির্মমতা এবং অসহনীয় পারিবারিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় বিরুদ্ধতা দেখে শুনে জেনে এবং চাক্ষুষ করে ‘সনাতিনি হিন্দু’ হয়ে গেলো “কিং কর্তব্য বিমুঢ়”। 

আসুন আমরা সনাতনি হিন্দুদের সেই করুন ইতিহাস জানি, যে ইতিহাস আজ আর আমাদের দেশে লেখা হয় না, লিখলে গাল শুনতে হয়, সাম্প্রদায়িকতার তকমা জোটে, এমনকি জেলেও যেতে হয় , আর যা কিছু লেখা আছে তা পড়া বা জানার ইচ্ছা সম্পন্ন মানুষ আজ আর বেশী নেই।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted