বুদ্ধিজীবী কান্নাকাটি করছে এজন্য যে, কেন পরীক্ষিত বন্ধু চীনের ভ্যাকসিন না কিনে- ভারতীয় ভ্যাকসিন কেনা হলো!

করোনা সংক্রমণের সময়, সমগ্র ভারতে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের করুণ পরিণতি আমরা টেলিভিশনের পর্দায় প্রত্যক্ষ করেছি। অর্ধাহারে অনাহারে থেকে মাইলের পর মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে- কতজন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, সে হিসেবে কেউ রাখেনি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যেন দয়ার অবতার। তিনি তার স্বজাতি বিশেষ ধর্মাবলম্বী-দুধেল গাই পরিযায়ী শ্রমিকদের, বিশেষ ব্যবস্থায়- রাজ্যবাসীর ট্যাক্সের টাকা খরচ করে ফিরিয়ে এনেছিলেন; কিন্তু বাদবাকি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিযায়ী শ্রমিকদের আখ্যায়িত করেছিলেন 'করোনা-এক্সপ্রেস'। সেইসঙ্গে মমতা ব্যানার্জী এ কথাও বলেছিলেন যে, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ বিশেষ ধর্মালম্বী দুধের গাইদের জন্য জামাই আদর, আর সংখ্যাগরিষ্ঠের পশ্চাদ্দেশে পাদুকাঘাত।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ঠিকই - তবে তাদের ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট  ত্রুটি ও সহৃদয়তার সুস্পষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যে শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভারতের অর্থনীতি সচল রেখেছে, মহামারীকালে সেই শ্রমিকদের মানবিকপন্থায় যথাসময়ে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি যে সরকার ― সেই সরকার, তথাকথিত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোতে ৫৫ লক্ষ করোনা-ভ্যাকসিন বিনামূল্যে উপহার পাঠিয়েছে; যে করোনা-ভ্যাকসিনের জন্য সমগ্র পৃথিবীতে হাহাকার।

যে দেশগুলোকে বন্ধু ভাবাপন্ন দেশ বলা হয়েছে, সেই দেশগুলোর মধ্যে অধিকাংশ দেশে―ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিংবা সনাতনীদের মানবেতর জীবনযাপন ও দেশত‍্যাগের হিড়িক দেখে- সহজেই অনুমান করা যায় যে, ঐ দেশগুলো কতটা বন্ধুভাবাপন্ন! 

ভারতের প্রদত্ত করোনা-ভ্যাকসিনের উপহার, সবচেয়ে বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ; যে সংখ্যা ২০ লক্ষ। বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে বোঝা যায় যে- কত কদর্য ভাষায় এই অনুদানের জন্য ভারতের শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে। বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার টকশোর ভিডিও দেখলাম। সেই বিএনপি নেতা বলেছেন, "জনগণ বিশ্বাস করে, ভারতীয় টিকায় গো*মূত্র রয়েছে.." 

ভারতের তুলনায় চীনের নমিনাল জিডিপি প্রায় পাঁচ গুন বড়। ক্রয় মূল্যের সমতার ভিত্তিতে চীনের অর্থনীতি ভারতের তুলনায় পৌনে তিন গুন বড়। যে পাকিস্তান, চীনকে সর্বঋতুর বন্ধু বলে দাবি করে, সেই পাকিস্তানকে, চীন মাত্র পাঁচ লক্ষ করোনা-টিকা সরবরাহ করার আশ্বাস দিয়েছে। যদিও চীনের টিকা কাজ করেনা, এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত চীনের টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবুও বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক বুদ্ধিজীবী কান্নাকাটি করছে এজন্য যে, কেন পরীক্ষিত বন্ধু চীনের ভ্যাকসিন না কিনে- ভারতীয় ভ্যাকসিন কেনা হলো!

মধ্য ইউরোপের রাষ্ট্র হাঙ্গেরি, যারা এখন পর্যন্ত করোনা-টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের কাছে কিছু করোনা-টিকা চেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে - ভারতের থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া করোনা-ভ্যাকসিন থেকে, ৫ হাজার ভ‍্যাকসিন তারা হাঙ্গেরিকে দান করবে। ভারতের প্রদত্ত করোনা-ভ্যাকসিনে যদি সত্যিই গো*মূত্র থাকতো- তাহলে হাঙ্গেরির মতো উন্নত আধুনিক রাষ্ট্র কি সেই ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আবেদন জানাত?

কৃত্তিবাস ওঝা কাশীরাম
৩১/০১/২০২১খ্রিঃ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted